পর্যটন: জগৎবিখ্যাত বিজ্ঞানী স্যার পি.সি. রায়ের বাড়ি
বাহলুল করিম, সাতক্ষীরা থেকে
আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, যিনি পি.সি. রায় নামেই অধিক পরিচিতি। খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলি গ্রামে ১৮৬১ সালের ২ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় বিশেষ অবদানের জন্য জগৎবিখ্যাত পি.সি. রায়ের বাড়িটি বর্তমানে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দর্শনার্থীদের কাছে বেশ প্রিয়। প্রতিদিন খুলনাসহ আশপাশের জেলা থেকে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা দেখতে আসেন পি.সি. রায়ের আদি নিবাস। দূর-দূরান্ত থেকে আসেন পর্যটকরাও। পাইকগাছা উপজেলার রাড়ুলি গ্রামে পি.সি. রায়ের বাড়িটি দেখে মুগ্ধ হবেন যে কেউ।
এখানে আসলেই দেখতে পাবেন মুসলিম এবং ব্রিটিশ স্থাপত্য শৈলীর সমন্বয়ে নির্মিত ভবন। সদর মহল ও অন্দর মহল, মন্দির (পূজা মন্ডপ), মালটিফয়েল খিলান, জোড়াখুটি ও শহিদ মিনারের সমন্বয়ে যা স্থাপত্য শৈলীর এক অনন্য নিদর্শন।
ভবনের পূর্বদিকে রয়েছে একটি প্রাচীন পুকুর। ভবন নির্মাণের সময় পুকুরটি খনন করা হয়েছিল বলে শোনা যায়। আর এর পাশ দিয়েই প্রবাহিত হয়েছে কপোতাক্ষ নদ। যা আপনার মনকে করবে পুলকিত।
খুলনা থেকে সহজেই পি.সি রায়ের বাড়ি ভ্রমণ করা যায়। এজন্য প্রথমেই খুলনা-পাইকগাছার বাসে উঠে পড়ুন। নামতে হবে বোয়ালিয়া খেঁয়াঘাট মোড়ে। বাস ভাড়া ১০০-১৫০ টাকা। সরাসরি খুলনা টু পাইকগাছার বাসে উঠবেন। অন্য কোন বাসে উঠবেন না তাহলে প্রতারিত হতে পারেন। বাস থেকে নেমে মটরচালিত ভ্যান অথবা ইজিবাইকে উঠে পড়ুন বোয়ালিয়া খেঁয়াঘাটের উদ্দেশ্যে। অতঃপর নদী পার হবেন ট্রলারযোগে (৫-১০ টাকা)। নদী পার হলেই দেখতে পাবেন আপনারই অপেক্ষায় মটরচালিত অথবা ইঞ্জিনচালিত ভ্যান রয়েছে। ভ্যানযোগে প্রায় ৪-৫ কি.মি. পথ অতিক্রম করলেই পৌঁছে যাবেন কাক্সিক্ষত স্যার পি.সি. রায়ের বাড়ি।
আবার সাতক্ষীরা দিয়েও পি.সি. রায়ের বাড়ি ভ্রমণ করা যায়। এজন্য সাতক্ষীরা বাস টার্মিনাল থেকে সাতক্ষীরা-বাঁকার বাসে উঠে পড়ুন (ভাড়া ৪৫-৫০ টাকা)। ভুল করে চাঁপড়া বা ঘোলার বাসে উঠবেন না। নামবেন বাঁকা বাজারে। বাস থেকে নেমে একটি ছোট সেতু দেখতে পাবেন। সেতুটি পার হলেই দেখতে পাবেন বাঁকা বাজার। বাজার থেকে সামনে কিছুদূর এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন মটরচালিত ভ্যান অথবা মটরসাইকেল। যেটিতে ইচ্ছা উঠে পড়–ন। ভাড়া মটরভ্যান ১৫-২০ টাকা ও মটরসাইকেল ২৫-৩০ টাকা। পৌঁছে যাবেন পি.সি রায়ের বাড়ি।
আরও কিছু কথা, প্রথম বাঙালি হিসেবে প্রফুল্লচন্দ্র রায় ‘গিলক্রাইস্ট স্কলারশিপ’ নিয়ে ইংল্যান্ডের এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করেন। তিনি ভারতবর্ষে প্রথম কেমিক্যাল ফ্যাক্টরি (Chemical Factory) স্থাপন করেন। ১৮৯২ সনে তিনি নিজ অর্থায়নে ‘বেঙ্গল কেমিক্যাল এ- ফার্মাসিউটিক্যাল ওয়ার্কস’ প্রতিষ্ঠা করেন। ১৮৯৬ সালে তিনি ‘মারকিউরাস নাইট্রাইট’ আবিষ্কার করেন। ১৯০২ সালে তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘History of Hindu Chemistry’ প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞান গবেষণায় অবদানের স্বীকৃিত হিসেবে ডারহাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯১২ সালে তাঁকে সম্মানসূচক ডি.এস.সি. ডিগ্রি প্রদান করে।
১৯১৮ সালে তিনি বাগেরহাটে একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। যার বর্তমান নাম পি.সি. কলেজ। ব্রিটিশ সরকার প্রথমে তাকে রাজকীয় খেতাব সি. আই. ই. তে ভূষিত করেন। পরবর্তীতে ১৯১৯ সালে তাকে ‘নাইট’ উপাধি দেওয়া হয়। তার অর্থায়নে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাবৃত্তি, রসায়নাগার ও গবেষণা পুরস্কার প্রতিষ্ঠা ও সমৃদ্ধি লাভ করে। তিনি ১৮৮৯ থেকে ১৯৩৬ পর্যন্ত সুদীর্ঘ ৪৭ বছর অধ্যাপনা পেশায় নিয়োজিত ছিলেন। ১৯৪৪ সালের ১৬ জুন এই বিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ, শিল্প উদ্যোক্তা, মহা মনীষী পরলোকগমন করেন। (তথ্যসূত্র: পি.সি. রায়ের বাড়ির স্মৃতিফলক)।