মাসুদ বিশ্বাসের আদা চাষ
হরিরামপুর থেকে মুকতার হোসেন
মানিকগঞ্জের শোলকুড়া গ্রামের মাসুদ বিশ্বাস পেশায় একজন গ্রাফিক্স ডিজাইনার। একটা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতেন তিনি। কৃষক পরিবারে ছোট থেকে বেড়ে উঠার কারণে কৃষির প্রতি তাঁর অনুরাগ সবসময়ই ছিলো। মনের ভেতরে একটা স্বপ্ন দেখতেন যে, চাকুরি থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি আনন্দ মনে কৃষি কাজ করছেন! এভাবে এ লালিত স্বপ্ন পূরণ করার জন্য তিনি একদিন সত্যি সত্যি চাকুরি ছেড়ে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করেন। পরিবার থেকে অর্জিত জ্ঞান নিয়ে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন কৃষি খামার। স্থানীয় জাতের মুরগির খামার এবং হারিকেন ও বালি দিয়ে ইনকিউবেটরের মাধ্যমে ডিম ফোটানো, বেগুনের কাটিংয়ের মাধ্যমে দীর্ঘ মেয়াদি ফলন, গলাছেলা মুরগি ও সিপি জাতের মুরগির মধ্যে বিডিংয়ের মাধ্যমে জাত উন্নয়ন, মসলা চাষসহ বিভিন্ন গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন তাঁর এই কৃষিখামারে।
মাসুদ বিশ্বাস মানিকগঞ্জ কৃষক গবেষক সংগঠনের সদস্য হিসেবে যুক্ত রয়েছেন। সম্প্রতি ট্রেতে বালু দিয়ে স্বল্প সময়ে চারা উৎপাদন করে আদা চাষে এলাকায় সুনাম কুড়িয়েছেন। স্বল্প সময়ে লাভজনক পদ্ধতিতে আদা চাষ বিষয়ে হরিরামপুর, শিবালয়, সিঙ্গাইর, ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন কৃষক আদা চাষে উৎসাহ যুগিয়েছেন। এলাকার অনেক কৃষক তাঁর কাছে আদা চাষসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ নিতে আসেন। তার অনুপ্রেরণা সফলতা দেখে শোলকুড়া গ্রামের ভুবন কর্মকার, জগদিস, স্বপন কুমার, শহিদ বিশ্বাস অনেক কৃষক আদাচাষ শুরু করেছেন।
মাসুদ বিশ্বাসের মতে, ট্রে বা মাটির টবে চার ইঞ্চি পরিমাণ বালু দিয়ে এক ইঞ্চি পরিমাণ নিচে সারিবদ্ধভাবে আদা বিছিয়ে দিয়ে উপরে তাতে নিয়মিত পানি দিলেই ২২/২৪ দিনের ভিতর আদার পুয়া বা নতুন গাছের চারা গজাবে। তখন আদার চারাগুলো আলাদা করে জমিতে রোপণ করলে অল্প সময়েই আদা হয়।
বর্তমান সময়ে বাজারে আদার চাহিদা বেড়ে গেছে। এলাকার কৃষকরা তার আদা চাষকে সফল মনে করে অনেকে চাষের আওতায় নিচ্ছেন। এই প্রসঙ্গে বাহিরচর গ্রামের কৃষক শহিদ বলেন, ‘আমি মাসুদ বিশ^াসের সাথে বালিতে আদা চারা তৈরি বিষয়ে আলোচনা করেছি এবং তার বাড়িতে গিয়ে দেখি এসেছি। আমার মত আরও কয়েক কৃষক আদা চাষে উৎসাহ যুগিয়েছেন। বর্তমান বৈশি^ক মহামারী করোনাভাইরাস মোকাবেলায় আদা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখছে।’ প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর পর্যায়ে আদা সম্প্রসারণ হলে সংসারে খরচ কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে তিনি মনে করেন। কৃষি উপসহাকারী বিল্পব কুমার সরকার বলেন, ‘বাড়ির আনাচে কানাতে পতিত ছায়াযুক্ত জায়গায় আদা চাষ করা যায়। বালিতে স্বল্প সময়ে আদা চারা উৎপাদন করে খাবার উপযোগি তোলা যায়। আমরা মাঠ পর্যায়ে এ বিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করে আসছি।’
অন্যদিকে বারসিক স্বল্পসময়ে আদা চাষ আগ্রহী কৃষকদের উৎসাহ ও উদ্যোগ নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে আসছে। কৃষক পর্যায়ে আলোচনা সভা, অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর, অভিজ্ঞ কৃষকের সাথে তথ্য আদান প্রদানসহ বিভিন্ন কাজে সহায়তা প্রদান করে আসছে এই বেসরকারি সংগঠনটি। মাসুদ বিশ্বাসের সাথে অন্য কৃষকদের যোগাযোগ তৈরিতেও রেখেছে ভূমিকা।