ইটভাটায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষিজমি ও মানুষ
এম.আর.লিটন, মানিকগঞ্জ থেকে:
ইটভাটায় ক্ষতি হচ্ছে কৃষি জমির। ইটভাটা থেকে যে দূষিত গ্যাস ও তাপ নির্গত হয় তা আশেপাশের জীবজন্তু, গাছপালা এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে এবং মানুষের স্বাস্থ্যহানির কারণ ঘটায়। ইট ভাটার জন্য অনেক সময় ফল গাছে কোনো ফলই ধরে না, বা ধরলেও তা অকালে ঝড়ে পড়ে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে এক সময় দেশে কৃষি জমির পরিমাণ হ্রাস পাবে । খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা ব্যাহত হবে।
বিজ্ঞনীরা বলছেন, আগুন, কয়লা, বিদ্যুত কেন্দ্র, ইট ভাটা ,যানবাহন , চাষাবাদ ও শিল্পকারখানা থেকেই দূষিত হচ্ছে বায়ু। এর ফলে শ্বাস প্রশ্বাসের সঙ্গে এগুলো আমাদের শরীরের ভেতর ঢুকে যাচ্ছে। আর আমরা নিজের অজান্তেই হার্ট এ্যাটাক , স্ট্রোক, হৃদরোগ, শ্বাসযন্ত্রের বিভিন্ন অসুখ এবং ক্যান্সারের মতো জটিল এবং কঠিন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন ( নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩ তে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, ইট ভাটায় ফসলি জমির উপরের মাটি (টপ সয়েল) ব্যবহার করলে প্রথমবারের জন্য দুই বছরের কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। দ্বিতীয়বার ওই্ একই অপরাধের জন্য ভাটা কর্তৃপক্ষকে ২ থেকে ১০ বছরের জেল এবং ২ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা যাবে।
অন্যদিকে অনুমোদন না নিয়ে ইট ভাটা স্থাপন করলে এক বছরের কারদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। আবাসিক জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকা, বাণিজ্যিক এলাকা, বনভূমি, জলাভূমি এবং গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার এলাকায় ইট ভাটা স্থাপন করলে একই শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদণ্ড এবং তিন লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় শাস্তি হতে পারে।
এসব আইন সরকারের অফিস আদালতের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও বাস্তবে তার প্রয়োগ দৃশ্যমান হচ্ছে না। ফলে কৃষি, পরিবেশ ও মানুষের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন দেশের সচেতন নাগরিক, কৃষি বিজ্ঞানী, চিকিৎসক ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞগণ।
সারাদেশে বিভন্ন স্থানে কৃষি জমিতে গড়ে উঠছে ইটভাটা । এর প্রভাব পড়েছে মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর উপজেলার জামির্ত্তা ইউনিয়নে জনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে উঠা ইটভাটা ও কৃষি জমি থেকে মাটি কাটা বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন এলাকাবাসী। সম্প্রতি উপজেলার বাস্তা-মানিকনগর সড়কের হাতনী এলাকায় মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। এতে কৃষক-শ্রমিকসহ স্থানীয় নানা শ্রেণী পেশার ৩ শতাধিক মানুষ অংশ নেন।
জামির্ত্তা ইউনিয়নবাসীর ব্যানারে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, সাভারস্থ সিঙ্গাইর সমিতির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ইউনুস, ইটভাটা প্রতিরোধ কমিটির সাধারণ সম্পাদক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবুল বাশার, যুগ্ন সম্পাদক আবুল হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবু-সায়েম ও সদস্য বিপ্লব হোসেন প্রমূখ।
বক্তারা বলেন, জনবসতিপূর্ণ তিন ফসলি জমিতে ইটভাটা স্থাপন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু কিছু স্থানীয় অসাধু এক জনপ্রতিনিধির ছত্রছায়ায় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে জামির্ত্তা ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকার তিন ফসলি জমিতে ৬ টি ইটভাটা স্থাপন করেছেন। আরো কয়েকটি ইটভাটা নির্মাণের পায়তারা করা হচ্ছে। যার ফলে দিনদিন কৃষিজমি হ্রাস ও পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। মাটিবাহী ট্রাক চলাচলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পাকা-কাচা সড়ক। প্রশাসন ইটভাটাগুলো বন্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো মালিকদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে ভাটা স্থাপন করতে সহযোগিতা করছেন। এভাবে যেখানে সেখানে ইটভাটা গড়ে উঠলে আগামী ১০-১৫ বছর পর এলাকায় কোন কৃষি জমি থাকবেনা। বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে জামির্ত্তা ইউনিয়ন। প্রশাসন ইটভাটাগুলো বন্ধের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলার হুশিয়ারী উচ্চারণ করেন বক্তারা।
মানববন্ধনে স্থানীয় কৃষক, ব্যাবসায়ী, চাকুরিজীবী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক, ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষ অংশ নেয়।