প্রবীণরা আমাদের সম্পদ
শ্যামনগর, সাতক্ষীরা থেকে মফিজুর রহমান
একটু শীত পড়তেই বয়স্কদের শরীর ঠাণ্ডা হয়ে যায়। শরীরের রক্তের তেজ কমে যাওয়ায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। ফলে নিউমোনিয়া, মাথাঘোরা, বুককাঁপা, হাতপা অবশ হওয়া, ঝেঁঝি লাগা, খাওয়া দাওয়ার প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়া, হাতপা ফাটা, সর্দি কাশি ও বাতজনিত রোগ বেশি দেখা দেয়। এছাড়াও প্রবীণদের গিরায় গিরায় ব্যথা, গ্যাস, জ্বর, আমাশয়সহ বিভিন্ন ধরনের রোগ দেখা দেয়।
গতকাল (২৩ জানুয়ারি) শ্যামনগর উপজেলার পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাখিমারা গ্রামে প্রবীণ ব্যক্তিদের শীতকালীন সমস্যা ও করণীয় বিষয়ক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে এভাবেই নানা সমস্যার কথা তুলে ধরেন অংশগ্রহণকারীরা।
পাখিমারা পরিবেশবান্ধব আইএফএম কৃষি নারী সংগঠনের উদ্যোগে এবং গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক’র সহযোগিতায় এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন পাখিমারা পরিবেশবান্ধব আইএফএম কৃষি নারী সংগঠনের সভাপতি রাবেয়া খাতুন। বক্তব্য রাখেন, পদ্মপুকুর ইউপি সদস্য আজিজুল ইসলাম, প্রাক্তন ইউপি সদস্য আশরাফ হোসেন, সারিনা বেগম, ছবিরোন বেগম, বারসিক কর্মকর্তা মফিজুর রহমান প্রমুখ।
সভায় অংশ নিয়ে পাখিমারা গ্রামের আব্দুস সামাদ ও মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘শুধু শারীরিক রোগ ব্যাধি নয়, প্রবীণদের সমস্যাটা আসলে বহুমাত্রিক। তারা মানসিক, পারিবারিক, সামাজিক এমনকি রাষ্টীয়ভাবেও সমস্যায় জর্জরিত। আসলে একটা মানুষ যখন বার্ধক্যে উপনীত হন তখন তার নিজের মধ্যেই কিছু কিছু জিনিস দাঁনা বেধে ওঠে। যেমন- শারীরিক অসামর্থ, অসহায়ত্ব, পরনির্ভরশীলতা ও অতিরিক্ত সংবেদনশীলতা। এগুলোর কারণে মানসিক যন্ত্রণা থেকে শুরু করে নিজেকে অবাঞ্চিত, কখনও বা পরিবারের বোঝা মনে করেন। অনেক প্রবীণই বিষন্নতায় ভোগেন।’
জীবনে বার্ধক্য আসবে এটা চরম সত্য। বার্ধক্য যখন আসে তখন শরীরের স্বাভাবিক কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। যেমন-চুল পাকা, চুল পড়া, চোকে কম দেখা, শ্রবণ শক্তি কমে যাওয়া, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, পেশি দুর্বল হয়ে পড়া ইত্যাদি। একইভাবে খাবারের রুচি কমে যায়, এর সঙ্গে ঘুমও কমে যায়।
সভায় বক্তারা বলেন, ‘প্রথমেই মনে রাখতে হবে প্রবীণরা আমাদের সম্পদ। আমাদের নৈতিক দায়িত্ব প্রবীণদের আদর যতœ দিয়ে শিশুদের ন্যায় প্রতিপালন করা এবং তাদের প্রতি মায়া, মমতা, ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা। তাদের মধ্যে কোনোভাবেই যেন এই ধারণা না জন্মে যে তারা পরিবারের বোঝা।’ বক্তারা আরও বলেন, ‘প্রবীণরা যাতে স্বল্প ব্যয়ে উন্নত চিকিৎসা লাভ করতে পারে এবং বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা ও ওষুধ বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে পায় রাষ্ট্রের তা নিশ্চিত করা উচিত।’