গানকেই সম্বল করলাম
গোপালগঞ্জ থেকে ফিরে ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল
নিজের জীবনের কথা তার গানে গানে ফুটে উঠে। কখনো সে দরাজ গলায় গেয়ে উঠে, ‘তুমি মানুষ হইয়া জন্ম নিয়া কি করিলা’ বা ‘ সব লোকে কয় লালন কি জাত সংসারে’ আবার কখনো হাসন রাজা, বাউল শাহ আব্দুল করিমের গান আসরকে মাতিয়ে রাখে। নাম তাঁর মো. ইবাদ আলী খাঁ (৫৫)। গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া উপজেলার চরকুশলী গ্রামে তার জন্ম। জন্মের মাত্র আড়াই মাস বয়সে বিছানায় আগুন লেগে তার মাথা, হাত, চোখসহ শরীরের অধিকাংশ অংশই পুড়ে যায়। তাই জন্মের পর থেকেই সে অন্ধ ও শারীরিকভাবে অক্ষম। তার ডান হাতটি প্রায় কুনোই পর্যন্ত কেটে ফেলতে হয়। তবুও থামেনি তাঁর জীবন সংগ্রাম আর পথচলা।
সেই অর্ধেক হাত দিয়ে তিনি হারমোনিয়ামের রিড টেনে টেনে গান গেয়ে বেড়ান দেশের নানান প্রান্তে। অসাধারণ তার গায়কী। গত ২২ এপ্রিল গোপালগঞ্জ শহরের কালি মন্দিরের সামনে বসে গান করছিলেন এবাদ আলী খাঁ। এসময় এমন গান কোথায় শিখেছেন প্রশ্ন করলে তিনি বারসিক নিউজকে বলেন, “ছোটবেলা থেকেই অনেকে বলতো এ ছেলে ভিক্ষা করা ছাড়া কিছু করতে পারবে না। আমি ছোটবেলা থেকেই পণ করেছিলাম আর যাই করি ভিক্ষা করবো না। তাই গান নিয়েই জীবন চালাই। আমি আকাশবানীর রবীন্দ্র চক্রবর্তীর কাছেও গান শিখেছি। শিখেছি হাটে, মাঠে, ঘাটে সকল জায়গা থেকে। আমি রাস্তার গায়ক। তবে আমার গান রেডিওতেও প্রচার হয়েছে।”
গান করতে কেমন লাগে প্রশ্ন করলে এবাদ আলী বলেন, “নবীর দিক্ষা-করিওনা ভিক্ষা, নবীজি ভিক্ষা পছন্দ করতেন না। তাই ভিক্ষা না করে গান করার সিন্ধান্ত নিই। মানুষ গান শুনে খুশিই হয়। কেউবা দু’চার টাকা দেন -তাই দিয়েই জীবন চালাই। এই গানের জন্য অনেকের কাছে গেছি কেউই জায়গা দেয় নাই। তাই রাস্তায় রাস্তায় গান গেয়ে বেড়াই। একদিন রাস্তায় না নামলেও হয় না।”
সরকারের কাছে কোন চাওয়া আছে কিনা জানতে চাইলে বলেন, “প্রতিবন্ধি হিসেবে মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পাই কিন্তু নিয়মিত না। আর খুব ইচ্ছা ছিল বিটিভিতে গান করার-কয়েকবার চেষ্টাও করেছি কিন্তু লাভ হয় নাই।”
জীবনের বাকিটা সময় কিভাবে কাটাতে চান প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, “দেখেন কেউ কি রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে জীবন কাটাতে চায়? সবাইতো দামি গাড়ি-বাড়ি চায় আর আমি চাই একটু ভালোভাবে বাঁচতে।” তিনি আরো বলেন, “আমার ছেলেমেয়েরাও অনেক কষ্ট করে বড় হয়েছে। তাদের জীবনও অনেক কষ্টের, তবে কেউই ভিক্ষা করে না। আমার বাকি জীবনটা গান গেয়েই কাটাতে চাই। মানুষকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে বললে তিনি বলেন, “মানুষ হয়ে জন্ম নিছ তাই মানুষের জন্য কিছু কর-এই।”