লোকায়ত পদ্ধতিতে সফল সবজি চাষি আক্কাস আলী
রাজশাহী থেকে সুলতানা খাতুন
রাজশাহী জেলার পবা উপজেলার দর্শনপাড়া ইউনিয়নের কুপাকান্দি একটি ছোট গ্রাম। এ গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। ২০২৩ সাল থেকে বারসিক এ গ্রামে সচেতনতা ও গবেষণামূলক কার্যক্রম শুরু করে। ২০১৬ সাল থেকেই বারসিক দর্শনপাড়ায় কাজ করছে। তাদের কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগোষ্ঠী সচেতন হয়ে বৈচিত্র্যময় শাকসবজি চাষে মনোযোগী হয়েছে। এখন গ্রামে অনেকেই বাড়ির পাশে পতিত জায়গায় প্লট আকারে ও বস্তা পদ্ধতিতে সবজি এবং মসলা জাতীয় ফসল যেমন আদা ও হলুদ চাষ করছেন।
তেমনই একজন কৃষক, মো. আক্কাস আলী (৫৫)। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা দুইজন। বসতভিটা ২৫ শতক এবং আবাদি জমি ৬ বিঘা। কৃষির প্রতি ভালোবাসা থেকে তিনি ছয় বছর ধরে বাড়ির পাশে জৈব সার ও কুইক কম্পোস্ট ব্যবহার করে মৌসুমি শাকসবজি চাষ করছেন। তার বাগান কখনো ফাঁকা থাকে না; আগের ফসল থাকতেই নতুন বীজ বপন করেন।
বারসিকের সহায়তায় তার বাড়িটিকে “মডেল শতবাড়ি” হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। দুই মাস আগে বারসিক থেকে ৫০টি বেগুন চারা দেওয়া হয়। আক্কাস আলী কৃষি-প্রতিবেশবিদ্যার চর্চার মাধ্যমে এগুলো বড় করে তুলেছেন। এখন তার বেগুন গাছগুলোতে প্রচুর বেগুন ধরেছে। আক্কাস আলী গাছের পোকামাকড় থেকে রক্ষা পেতে গাছের ডালে সাদা কাপড়ে ন্যাপথন পেঁচিয়ে রেখেছেন। এতে কোনো কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় না।
আক্কাস আলী বলেন, “আমি লোকায়ত জ্ঞান ও জৈব পদ্ধতি ব্যবহার করে বেগুন, লাউ, সিমসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করি। এছাড়া বস্তা পদ্ধতিতে জৈব সার ব্যবহার করে পরীক্ষামূলকভাবে ১০০ বস্তায় আদা ও ৩০ বস্তায় হলুদ চাষ করেছি।”
তিনি আরও বলেন, “যখন সবাই সার-কীটনাশকের পেছনে ছুটছে, আমি আমার বাবার আমলের লোকায়ত পদ্ধতি ব্যবহার করে নিরাপদ ও বিষমুক্ত খাবার পাচ্ছি।”
আক্কাস আলীর এই উদ্যোগ দেখে গ্রামের অন্য কৃষক ও তরুণরা অনুপ্রাণিত হচ্ছেন। তার বৈচিত্র্যময় সবজি চাষ নিজের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে তিনি প্রতিবেশীদের সঙ্গে বিনিময় করেন এবং অতিরিক্ত ফসল বিক্রি করে আয় করেন। তার লোকায়ত চর্চা গ্রামের কৃষি ব্যবস্থায় নতুন সম্ভাবনার দিক উন্মোচন করছে।