পাথরঘাটার দ্বীপ বিহঙ্গ পর্যটনে নতুন সম্ভাবনা
দেবদাস মজুমদার, বিশেষ প্রতিনিধি, উপকূলীয় অঞ্চল
সুন্দরবন বিধৌত বলেশ্বর নদী। নদীর মোহনায় পদ্মা স্লুইজগেট। পদ্মা স্লুইজ মোহনা থেকে দুই কিলোমিটার দুরে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল বিস্তৃত চর। সম্প্রতি জেগে ওঠা ওই চরে পরিযায়ী পাখিদের নির্ভয় বিচরণ। জেলেরা বিশ্রাম হিসেবে এখানে অবস্থান নেয়। চরটির পশ্চিম দিকের নদীর তীরঘেঁষা ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনে হাতছানী। অপূর্ব নৈসর্গিক আর নয়নাপভিরাম চরটি এখন সম্ভাবনাময় হয়ে উঠছে।
বরগুনার পাথরঘাটার বলেশ্বর নদীর পদ্মা স্লুইজ মোহনায় নতুন জেগে ওঠা বিস্তৃত এ চর পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে আবিস্কার করা হয়। গত শুক্রবার সেখানে পাথরঘাটার একদল তরুণ সাংবাদিক ও জেলেরা মিলে নতুন জেগে ওঠা চরের নামকরণ করেন বিহঙ্গ দ্বীপ। পাথরঘাটার স্থানীয় সাংবাদিক ও কয়েকজন সমাজকমীরা মিলে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে ও সাইনবোর্ড স্থাপন করে বলেশ্বর নদীর মধ্যবর্তী স্থানে নতুন জেগে ওঠা দ্বীপটির নামকরণ করেন দ্বীপ বিহঙ্গ।
জানা গেছে, পাথরঘাটার বলেশ্বর নদীর পদ্মা স্লুইজ মোহনা থেকে ২ কিলোমিটার দুড়ে নদীর মধ্যবর্তী স্থানে সম্প্রতি প্রকৃতিগতভাবে একটি চর জেগে ওঠে। সেখানে বিশাল অংশজুড়ে পাশর্^বর্তী সুন্দরবন থেকে ভেসে আসা ছৈইলা, গেওয়াসহ নানা জাতের উদ্ভিদ বেড়ে ওঠে। প্রকৃতিগতভাবে সৃজিত এ দ্বীপটি মনোরম ও নান্দনিক শোভা নিয়ে নিরবে পড়ে আছে। দ্বীপের চারপাশে বলেশ^রের বিশাল জলরাশি ওপর নতুন দ্বীপের অস্তিত্ব উপকূলীয় পাথরঘাটার পর্যটননের বিশেষ সম্ভাবনা হিসেবে ভাবছে স্থানীয় জনগণ।
প্রত্যক্ষদর্শিরা জানান, দ্বীপটির চরপাশে বয়ে চলা নদীর স্রোত আর সমূদ্র সৈকত দীর্ঘ বীচ পর্যটকদের আকৃষ্ট করবে। দ্বীপটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৫ কিলোমিটার আর প্রস্থ দেড় কিলোমিটার। পাথরঘাটা উপজেলা থেকে মাত্র ১৫ থেকে ২০ মিনিট নদী পথে ইঞ্জিন চালিত বোর্ড চালিয়ে যাওয়া যাবে এ দ্বীপে। দ্বীপের পশ্চিমে রয়েছে বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন। দ্বীপে রয়েছে দীর্ঘ বালুতট, জোয়ারের গর্জন করে ফনাতুলে আছড়ে পড়ে সাগরের ঢেউ। আছে বন্য গাছ গাছালি। সেখানে বাস করে শত রঙ ও প্রকারের দেশী ও বিদেশী পাখি। পাখিদের কলরবে দ্বীপটির সকাল ও বিকেল মুখরিত থাকে। পশ্চিমে প্রতিদিন হেলেপড়া অস্তগামী সূর্য এ দ্বীপ থেকে অতি সহজেই অবলোকন করা যায়। নদীর ঢেউ আর বলেশ্বরে জেলেদের মুখরতা আর পরিযায়ি পাখিদের উজার উড়ালে অপূর্ব এক নৈস্বর্গিক পটভুমি এই দ্বীপ বিহঙ্গ।
স্থানীয়রা মনে করেন সরকারী নজরদারী আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানে গড়ে উঠতে পারে একটি পর্যটন স্পট। গত ২৩ মার্চ শুক্রবার সকালে পাথরঘাটার কিছু স্থানীয় সাংবাদিকরা ট্রলার যোগে বলেশ্বর নদীর মোহনায় জেগে ওঠা ওই বিহঙ্গ দ্বীপটি আবিস্কার করেন। এবং এই দ্বীপের নামকরণের ফলক ও জাতীয় পতাকা উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে দ্বীপটির নান্দনিক সৌন্দর্য ও পর্যটকদের আকর্ষণে শুভ সুচনা করা হয়।
এই আনুষ্ঠানিক যাত্রায় দ্বীপ বিহঙ্গে সমবেত হন সাংবাদিক উন্নয়ন সংগঠক মির্জা এস.আই খালেদ, সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা চৌধুরী, শফিকুল ইসলাম খোকন, আলোকচিত্রী আরিফুর রহমান, এএসএম জসিম, চিত্র শিল্পি মেহেদী হাসান,আবুজার রফি, টাইগার টিমের দুলাল, ৭ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. বাইজিদ, জেলে মোস্তফা মুন্সীসহ স্থানীয় জেলেরা উপস্থিত ছিলেন।
এ বিষয়ে পাথরঘাটার প্রবীণ সাংবাদিক ও উন্নয়ন সংগঠক মির্জা খালেদ বলেন, “উপকূলীয় পাথরঘাটায় রয়েছে দেশের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র। হরিণঘাটার নৈসর্গিক বন। অদূরে বলেশ্বর বিধৌত সুন্দরবনের নিস্বর্গেও হাতছানি আর পানিমূল এ উপকূলে জেলে জীবন এসব মিলিয়ে পাথরঘাটা জনপথ এক নয়নাভিরাম নিস্বর্গের মায়া বিরাজ করছে।” তিনি আরও বলেন, “এমন অবস্থায় পারঘারটা শহর থেকে ৭ কিলোমিটার দূড়ে বলেশ্বর নদীর পদ্মা স্লুইজ গেট মোহনার অদূরে জেগে ওঠা চর বিহঙ্গ দ্বীপ এখন নতুন এক সম্ভাবনা। প্রতিদিন চরটি দর্শন করতে এলাকার উৎসুক জনতা সেখানে যাচ্ছেন। আমরা এটি দ্বীপ বিহঙ্গ নামে পরিচিতির জন্য জনসংযোগ চালাচ্ছি। আমরা আশাবাদী পর্যটনে দ্বীপ বিহঙ্গ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় আরো সম্ভাবনাময় হয়ে উঠবে।”
এ বিষয়ে পারঘাটা বনবিভাগের রেইঞ্জ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান আকন বলেন, “সম্প্রতি চরটি জেগে উঠেছে। আমরা চরটি পরিদর্শন করেছি। সেখানে বনায়নের সম্ভাবনা রয়েছে। পরিকল্পিতভাবে বনায়ন করতে পারলে এটি একটি আকর্ষণীয় পর্যটক স্পট হতে পারে। এছাড়া পাখিদের অভয় আশ্রয়স্থলও হতে পারে। বিষয়টি আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে অবহিত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।”