বিলুপ্তপ্রায় ধুতুরা
নেত্রকোনা থেকে হেপী রায়
ভূমিকা
গ্রাম বাংলার পথে-প্রান্তরে অযত্নে অনেক উদ্ভিদ জন্ম নেয়। বেড়ে উঠে। এসব উদ্ভিদের কোনটাই অপ্রয়োজনীয় নয়। প্রতিটি উদ্ভিদেরই আলাদা আলাদা ব্যবহার রয়েছে। চাহিদা অনুুযায়ী মানুষ এসবের ব্যবহার করে থাকেন। কোনটি খাওয়ার জন্য, অবার কোনটি ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের জন্য। প্যাকেটজাত রকমারি ঔষধের ভিড়ে আজ হারিয়ে যেতে বসেছে এসব ঔষধি গাছের ব্যবহার। তাছাড়া অনেকেই না চেনার কারণে আগাছা মনে করে কেটে ফেলে। রাসায়নিক সারের অপব্যবহার, ঘাস দমনের ঔষধের কারণেও অতি মূল্যবান উদ্ভিদগুলো নির্মূল হয়ে যাচ্ছে।
নেত্রকোনা অঞ্চলের বিভিন্ন গ্রামের আল-পথে, জঙ্গলের ধারে চোখে পড়তো ‘ধুতুরা’ নামক ঔষধি গাছটি। কিন্তু এখন সারা জঙ্গল তন্ন তন্ন করে খুঁজলেও এর দেখা মেলে না! অথচ এর রয়েছে অসাধারণ ঔষধি গুণ। তবে কিছু ক্ষতিকারক দিকও রয়েছে। কারণ সঠিক মাত্রায় ব্যবহার না করলে উপকারের চেয়ে ক্ষতির সম্ভাবনাই বেশি। তাই কোনো দক্ষ চিকিৎসক বা কবিরাজ এর পরামর্শ ছাড়া এর ব্যবহার করা উচিত নয়।
গাছের পরিচিতি
এই গাছটি আকারে খুব বেশি বড় হয় না। আনুমানিক ৪/৫ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। বর্ষাকালে এই গাছে ফুল ফোটে। ফুলগুলো দেখতে সাদা ও হালকা বেগুনী রঙের হয়ে থাকে। ফুলের আকৃতি লম্বা, দেখতে অনেকটা ঘণ্টার মতো। এর বীজ গোলাকার, সারা গায়ে ছোট ছোট কাঁটা থাকে। ধুতুরা গাছের কোনো অংশই ফেলা যায় না। বীজ, পাতা ও শেকড়ের সাহায্যে বিভিন্ন রোগের ঔষধ তৈরি করা যায়।
ব্যবহার
ধুতুরা গাছের ব্যবহার সম্পর্কে সাধারণ মানুষের তেমন একটা ধারণা নেই। কারণ বর্তমানে এই গাছের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। নতুন প্রজন্মের অনেকেই এই গাছের নাম পর্যন্ত শোনেনি। শুধুমাত্র কিছু প্রবীণ নারী-পুরুষ এই গাছ চিনেন এবং এর ব্যবহার সম্পর্কে জানেন। তবে সবচে’ বেশি জানেন কবিরাজগণ। নেত্রকোনার দূর্গাশ্রম গ্রামের খোরশেদ কবিরাজ মতে, ধুতুরা গাছের সবচে’ প্রয়োজনীয় অংশ হলো এর পাতা। পাতার রয়েছে নানান ব্যবহার। এই পাতার রস মানুষের বাতের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। রসের সাথে সরিষার তেল মিশিয়ে গরম করে ব্যথার জায়গায় কয়েকদিন মালিশ করলে বাতের ব্যথা ভালো হয়। বাতের ব্যথা ছাড়াও এই পাতার রস শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন ঘাড়, পিঠ ও হাঁটুর ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।তিনি আরও জানান, এই ধুতুরা গাছের পাতা ভাজি করে খেলে কৃমি থাকে না। শরীরের চুলকানি রোগ ভালো হয়। এছাড়া ধুতুরা পাতার রস ফোঁড়ার উপর লাগালে ফোঁড়া পেকে যায় ও যন্ত্রণা কমাতে সাহায্য করে বলে তিনি জানান।ধুতুরা উদ্ভিদের বীজ গুঁড়া করে, পুড়িয়ে এর ধোঁয়া নাক দিয়ে টান দিলে শ্বাসকষ্ট বা হাঁপানি রোগের উপকার হয়। এছাড়া ধুতুরা বীজের গুঁড়া এক চিমটি পরিমাণ ঠা-া পানি দিয়ে খেলে বদ্হজম দূর হয় বলে তিনি জানান।
সতর্কতা
ধুতুরা গাছের উপরোক্ত ব্যবহারগুলো অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে করা উচিত। এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে মানুষের মস্তিষ্ক বিকৃতি হয়। এমনকি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। তাই নিজে নিজে কখনোই ব্যবহার করা উচিত নয়। ছোট ছেলে মেয়েদের অনেক সময় এর ফুল বা বীজ দিয়ে খেলাধূলা করতে দেখা যায়। অভিভাবকদের এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। খেলার ছলে মুখে নিলে বিপদ হতে পারে। শুধুমাত্র এই উদ্ভিদের পরিচিতি ও ব্যবহার সম্পর্কে সচেতনতার জন্যই এই লেখাটি তৈরি করা হয়েছে। কাউকে ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করার জন্য নয়।