জলাভূমির যন্ত্রণা
পাভেল পার্থ
চলনবিলের পাড়ে নাটোরের জোয়াড়ি গ্রামে ১৯০১ সনে জন্মান প্রমথনাথ বিশী। সাহিত্যিক, শিক্ষক ও রাজনীতিক। ১৯৫১ সনে প্রকাশিত ‘চলনবিল’ বইতে প্রমথনাশ লিখেছেন, …অনুমান করলে অন্যায় হবে না যে, চারশত বৎসর পূর্বে এ বিলটি রাজশাহী, পাবনা, বগুড়ার অধিকাংশ স্থান জুড়ে বিরাজ করতো। ব্রহ্মপুত্র ও পদ্মার সঙ্গমস্থলের পশ্চিমোত্তর অংশে চলনবিল বিরাজিত। অবস্থান, আকৃতি, প্রকৃতি দেখে চলনবিলকে উত্তর বাংলার নদ-নদী-¯স্থায়ুজালের নাভিকেন্দ্র বললে অত্যুক্তি হবে না।’ দেশের সবচে’ বড় বিল হিসেবে পরিচিত ‘চলনবিলকে’ নিদারুণভাবে এলোপাথারি উন্নয়নের কোপে ফালি ফালি করা হচ্ছে। ঊনিশ শতকের প্রথম দিকেও বিলটির আয়তন ছিল প্রায় এক হাজার বর্গ কি.মি.। চলতি সময়ে তা মাত্র ৩৬৮ বর্গ কি.মি. এ দাঁড়িয়েছে। বর্ষাতে জলের বিস্তার থাকলেও হেমন্তে এর আয়তন দাঁড়ায় ২৫.৯ বর্গ কি.মি.। নাটোরের সিংড়া, গুরুদাসপুর ও বড়াইগ্রাম উপজেলা, পাবনার ভাঙ্গুরা ও চাটমোহর উপজেলা, নওগাঁর আত্রাই উপজেলা এবং সিরাজগঞ্জের তাড়াশ, রায়গঞ্জ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় বিস্তৃত দেশের এই বৃহত্তম বিলের বুকের কলিজা থ্যাৎলে দিয়ে তৈরি করা হয়েছে সড়কপথ। শুধুমাত্র চলনবিল নয়, দেশের সকল বিল জলাভূমিই আজ অধিপতি উন্নয়নের বাহাদুরিতে রক্তাক্ত। খুলনার ডুমুরিয়া ও ফুলতলা উপজেলায় বিস্তৃত বিলডাকাতিয়া এমনি আরেক দু:সহ উন্নয়ন-ক্ষত। উপকূলীয় বাঁধ, বাণিজ্যিক চিংড়ি ঘের বিলডাকাতিয়াকে তীব্র লবনজলে বন্দী করে রেখেছিল দীর্ঘসময়। মুন্সীগঞ্জ ও ঢাকা জেলার তিনটি উপজেলায় বিস্তৃত দেশের মধ্যঅঞ্চলের এক গুরুত্বপূর্ণ বিল আড়িয়ল। ২৬ মাইল দৈর্ঘ্য এবং ১০ মাইল প্রস্থের এই প্রবীণ জলাভূমির মোট আয়তন এক লাখ ৬৬ হাজার ৬০০ একর। আশেপাশের ১১টি ইউনিয়নের প্রায় ৭০টি গ্রামের জীবনধারা নিয়েই ঐতিহাসিকভাবে গড়ে উঠেছে আড়িয়ল-সভ্যতা। শতবছর আগে ইতিহাসকার যতীন্দ্রমোহন রায় এই বিলের প্রশস্তি টেনে লিখেছেন, চলবিল ও আইরল (আড়িয়ল) বিলেই অতি প্রাচীনকালে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গম ঘটেছিল। রাষ্ট্র আড়িয়ল-সভ্যতাকে অস্বীকার করে বিমানবন্দর করতে চেয়েছিল। প্রবল জনরোষের মুখে তা বাতিল হয়।
২. নদীমাতৃক বাংলাদেশ জলাভূমিময়। এ কারণেই হয়তো শ্রী হরিদাস পালিত ১৯৩২ সনে প্রকাশিত ‘কায়স্থ সমাজ’ পত্রিকায় লিখেছিলেন, এ দেশের আদিম আধিবাসীরা-হড়, হো (কোল) নামক জাতি, এরাই এদেশের আদিব মানব; তারাই তাদের দেশকে বলত ‘বাংলো’। এদেশটা জলবহুল দেশ, জলাভূমি যথেষ্ট, ছেঁচে জল ক্ষেত্রে দিতে হতো না। বাং মানে না, আর লো মানে পাত্র ডুবিয়ে জল তোলা। তা থেকে জল ছেঁচাও বোঝায়। যে দেশে ছেঁচে জল দিতে হয় না, জল ছেঁচার আবশ্যক হয়না, অর্থাৎ ধান্যক্ষেত্রে জলের অভাব হয় না সেই দেশই ‘বাংলোদিশম’। ইহাই তাদের জন্মভূমি (আয়ু-দিশম)। আর্য বৈদিকেরা এদেশের নাম করেন নাই। কিন্তু দিন দিন বাংলাদেশ তার জলাভূমি বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্য হারাতে বাধ্য হচ্ছে। সমুদ্র, নদ-নদী বাদে দেশের জলাভূমির বিস্তারও সর্বত্র। নানা বাস্তুসংস্থানে, নানা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় এসব জলাভূমি দেশের নানাস্থানে গড়ে তুলেছে বহুমাত্রিক জীবনসম্পর্ক। হাওর, বিল, বাওড়, খাল, নালা, খাঁড়ি, দীঘি, পুকুর, ঝিরি, হ্রদ, ঝর্ণা, গর্ত, খাদ, পাগাড়, বাইদ এরকম নানা নামে নানা বৈশিষ্ট্য নিয়েই বাংলাদেশের জলাভূমি আখ্যান। জলাভূমি অঞ্চল হয়েও আমরা তৈরি করতে পারিনি ‘জাতীয় জলাভূমি নিবন্ধনতালিকা ও নির্ঘণ্ট’। দেশের জলাভূমি সমূহের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য ও বিবরণ আমাদের নাগালে নেই। জলাভূমির ধরণ ও বিস্তারে ভিন্নতাকে গায়েব করে ‘জলাভূমি’ প্রত্যয়টি মূলত: ‘নি¤œাঞ্চল’ এর সমার্থক করে তোলা হয়েছে। সামগ্রিকভাবে জলাভূমি রাষ্ট্রের কোন মন্ত্রণালয়ের অধীন সেটিও তুমুল তর্কের বিষয়। হাওর ও বিল নিয়ে কোনো কর্তৃপক্ষ নিজের ক্ষমতার আওতায় রেখেছেন, আবার অন্যদের কাছে অরণ্যের ঝিরি ও ঝর্ণা বা বরেন্দ্র অঞ্চলের খাঁড়ি। ‘হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড’, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ড’, ‘পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়’ কখনওবা ভূমি মন্ত্রণালয়। একটি একক স্বতন্ত্র রাষ্ট্রীয় পরিসর থেকেই ভিন্ন বৈচিত্র্য ও বৈশিষ্ট্যকে সমমর্যাদা দিয়ে সকল জলাভূমির সুরক্ষা জরুরি।
৩. মৌলভীবাজারের বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত স্থানীয় আদিবাসী ও বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে পবিত্র জলধারা। সিলেট অঞ্চলে টিলা-অরণ্যে এরকম অসংখ্য ঝর্ণা ও ছড়া স্থানীয় বাস্তুসংস্থানের আদি জলের উৎস। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতকে বনবিভাগ ইজারা দিয়েছে। তার আগে ‘লাইফ’ নামের একটি কোম্পানিকে এই জলপ্রপাতের পানি বোতলে ভরে বিক্রির অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। একই জেলার কমলগঞ্জের হামহাম জলপ্রপাত আজ বাঁশ-বাণিজ্যের কারণে ক্ষত বিক্ষত। পার্বত্য চট্টগ্রামের ঝিরি ও ঝর্ণা গুলোর দশাও করুণ। বান্দরবান জেলার আলীকদমের পোয়ামুহুরী, কুরুকপাতা, দোছড়ি এলাকায় হেমন্তকালটি নিদারুণ পানির কষ্টে পাড়ি দিতে হয় আদিবাসীদের। কারণ ঝর্ণা ও ঝিরি গুলো আজ নিশ্চিহ্ন হয়েছে। পাহাড়ে প্রাকৃতিক বাস্তুসংস্থান খুন করে বহুজাতিক কোম্পানির তামাক চাষ, বনবিভাগের বাণিজ্যিক সেগুন বাগান, নিরাপত্তার নামে বৃহৎ অবকাঠামো, বাণিজ্যিক পর্যটন, লাগাতার ভূমি দখল সব মিলিয়ে ঝিরি গুলো প্রতিদিন উধাও হচ্ছে পাহাড় থেকে। পার্বত্য চট্টগ্রামে বসতি অঞ্চলের নামও ধারণ করে আছে ঝিরির স্মৃতি। খাগড়াছড়ি, মহালছড়ি, সিন্দুকছড়ি, বরুণাছড়ি, বড়ইছড়ি, কুতুবছড়ি, মানিকছড়ি, বিলাইছড়ি। বান্দরবানের নাফাখুম ঝর্ণা, বগা হ্রদ, রাঙামাটির শুভলং ঝর্ণা, খাগড়াছড়ির আলুটিলা ঝিরি আজ করপোরেট পর্যটনের চাপে হাঁপাচ্ছে।
৪. জলাভূমির সংজ্ঞা কী? রাষ্ট্র কীভাবে এই সংজ্ঞা দাঁড় করিয়েছে? দেখা যায় রাষ্ট্রীয় নীতি ও নথিগুলো কী বলে। জাতীয় পানি নীতি (১৯৯৯) এর ৪.১৩ নং অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে, ‘…হাওড়, বাওড় ও বিল জাতীয় জলাভূমিগুলো বাংলােেদশর আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যর ধারক এবং এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও অর্থনৈতিক এবং পরিবেশগত দিক থেকে এগুলির গুরুত্ব অসীম। হাওড় এবং বাওড়গুলিতে শুষ্ক মওসুমেও যথেষ্ট গভীরতায় পানি থাকে তবে ছোট বিলগুলি সাধারনত: চূড়ান্ত পর্যায়ে আর্দ্রভূমিতে পরিণত হয়। এই বিলগুলি প্লাবনভুমির নি¤œতম অংশ। এই জলাশয়গুলো আমাদের প্রাকৃতিক মৎস্য-সম্পদের সিংহভাগের উৎস এবং নানা ধরণের জলজ সবজি ও পাখীর আবাসস্থল। তাছাড়াও শীত মওসুমে উত্তর গোলার্ধ থেকে আগত অতিথি পাখীদের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়। হাওড় এবং বিলগুলো খালের মাধ্যমে নদীর সাথে সংযুক্ত। অতীতে প্রকৌশলগত হস্তক্ষেপের মাধ্যমে অনেক বিলকে তাৎক্ষণিক ফসল লাভের জন্য নিষ্কাাশিত আবাদী জমিতে পরিনত করা হয়েছে। কিন্তু কিছুদিন পরেই এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকট আকার ধারণ করে। প্রথমেই মাছ এবং গ্রামীণ জনগণের খাদ্যের উৎস কচু, শাপলা, কলমী জাতীয় জলজ সবজীর বিলুপ্তি ঘটে। বর্ষা মওসুমে প্লাবনভূমির বর্জ্য প্রবাহমান খালের মাধ্যমে বাহিত ও শোধিত হয়ে নিষ্কাশিত হত। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত অবস্থায় সেই প্রাকৃতিক শোধনক্রিয়া ব্যাহত হয়ে পরিবেশের মারাত্মক সংকট সৃষ্টি করেছে।’ অপরদিকে ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড’ ২০০০ সনের প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করেছে, …‘হাওর ও জলাভূমি এলাকা অর্থ নীচু প্লাবিত অঞ্চল যাহা সাধারনত হাওর এবং বাওর বলিয়া পরিচিত।’ ভূমি ব্যবস্থাপনা ম্যানুয়াল ১৯৯০ এর ১৮৭ নং অনুচ্ছেদে আছে, …‘বদ্ধ জলমহাল বলিতে এরূপ জলমহাল বুঝাইবে যাহার চতু:র্সীমা নির্দিষ্ট অর্থাৎ স্থলাবেষ্টিত এবং যাহাতে মৎস্যসমূহের পূর্ণতা প্রাপ্তির জন্য বৎসরের নির্দিষ্ট সময়ে মৎস্য ধরার উপযোগী। সাধারনত: হাওর, বিল, ঝিল, হ্রদ, দীঘি, পুকুর ও ডোবা ইত্যাদি নামে পরিচিত জলমহালকে বদ্ধ জলমহাল বলিয়া গণ্য করা হয়’। জাতীয় পানি নীতিতে আরো উল্লেখ আছে, ‘…হাওড়, বাওড় ও বিল জাতীয় জলাভূমিগুলো বাংলােেদশর আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যর ধারক এবং এক অনন্য প্রাকৃতিক সম্পদ। সরকার মনে করে যে বর্জ্য শোধন, র্ভগর্ভস্থ পানির পুনর্ভরন, সব জলজ ও জলচর প্রাণী ও তৃণের অস্তিত্ব এবং সর্বোপরি পরিবেশের স্বাভাবিক ভারসাম্য নিশ্চিত করতে, জলাশয়গুলোর শুধু সংরক্ষণই নয়, উপরন্তু উন্নয়ন প্রয়োজন যাতে এগুলোকে আকর্ষনীয় পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করা যায়। দেখা যাচ্ছে জলাভূমির সকল ঐতিহাসিকতাকে বাতিল করে বিদ্যমান রাষ্ট্রীয় নীতি ও নথি জলাভূমিকে করপোরেট বাণিজ্যের চশমায় দেখে চলেছে। যেন জলাভূমি মানে মাছ চাষ, পরিযায়ী পাখিদের আবাসস্থল আর পর্যটন-বাণিজ্য। ভিন্ন ভিন্ন জলাভূমির সাথে প্রাণ ও প্রকৃতির যে জটিল সম্পর্ক এবং বিকাশ তা রাষ্ট্রের জলাভূমি বিষয়ক চিন্তা ও দর্শনে খুঁজে পাওয়া যায় না। আর সমস্যার নাভিবিন্দুটি এখানেই। জলাভূমি কীভাবে, কার চোখে দেখা হচ্ছে। ধারণ করা হচ্ছে। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৫ হেমন্ত পেরুলেও এখনও আমরা জলাভূমির সংজ্ঞায়ন করতে পারিনি। জলাভূমিনির্ভর নি¤œবর্গের যাপিতজীবনের ধারাবাহিকতা ও বিজ্ঞান-দর্শন থেকেই জলাভূমির সামগ্রিক সংজ্ঞায়ন তৈরি করা জরুরি।
৫. বাংলাদেশের মোট আয়তনের ছয় ভাগের এক ভাগ জুড়েই হাওর জলাভূমি। সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোণা, কিশোরগঞ্জ এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়া এই সাতটি জেলায় প্রায় ৪৮টি বড় হাওর নিয়ে মোট ৪২৭ টি হাওরভূমি আমাদের দেশের মোট জাতীয় উন্নয়নে এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। বর্ষাকালে এই জলাভূমি প্রায় ২৪,০০০ বর্গ কি.মি. এলাকা নিয়ে বি¯তৃত হয়ে পড়ে। হাওর জনপদের জনগণ কৃষি, মৎস্যসহ হাওরের প্রাকৃতিক সম্পদের স্থায়িত্বশীল ব্যবহারের ভেতর দিয়েই এককালে গড়ে তুলেছিলেন স্বনির্ভর হাওর জীবন। হাওর জনপদের মানুষের সেই সার্বভৌমত্বের হাওর জীবন আজ বিপন্ন ও বিলীন। দিন দিন হাওর জলাশয়ে স্থানীয় মানুষের প্রবেশাধিকার সংকুচিত হচ্ছে, প্রায় সকল হাওর জলাভূমি দখল ও ব্যাক্তিমালিকানাধীন হয়ে পড়ছে। পরিযায়ী পাখির আবাসস্থল হিসেবে খ্যাত সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর দেশের দ্বিতীয় রামসার এলাকা। কিন্তু উজানের মেঘালয় পাহাড়ের বাণিজ্যিক কয়লা ও পাথর খনির বর্জ্যরে আঘাত সহ্য করেই কোনোমতে টিকে আছে এই গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। অন্যদিকে রামসার এলাকা সংরক্ষণের নামে হাওরনির্ভর জেলেদের কাছ থেকে এই জলাভূমিকে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। যেখানে রামসার ঘোষণায় জলাভূমির সাথে স্থানীয় জনগণের প্রথাগত সম্পর্ককে বিবেচনার কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি ২০০৯ দেশের খাস জলাশয় ও জলমহালসমূহ প্রকৃত মৎস্যজীবীদের অনুকূলে বন্দোবস্ত প্রদানে অগ্রাধিকার, মৎস্যসম্পদ সংরক্ষণ ও উৎপাদন বৃদ্ধি এবং প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণের কথা ঘোষণা করেছে (সূত্র. নংভূ:ম:/শা-৭/বিবিধ(জল)/০/২০০৯-১৯১)। কিন্তু রাষ্ট্রীয় উন্নয়ননীতিসমূহ সার্বিকভাবে দেশের জলাভূমির উপর নির্ভরশীল নি¤œবর্গের ঐতিহাসিক পেশা ও জীবিকার জটিল সম্পর্ককে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে না। এতে একদিকে তৈরি হচ্ছে রাষ্ট্রের সাথে জনগণের মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব, অন্যদিকে চুরমার হয়ে যাচ্ছে প্রাণ ও প্রকৃতির বিকাশমান ধারা।
৬. ১৯৯৭ সনের আগেও বিভিন্ন উদ্যাগ নেয়া হলেও এ সন থেকেই প্রথম প্রতি বছরের ২ ফেব্র“য়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হয়। প্রতি বছরই পৃথিবীর জলাভূমি সমূহের গুরুত্ব এবং এর সাথে জনগণের সম্পর্ক এবং উন্নয়নধারাকে বিবেচনা করে প্রতি বছরের জন্যই এক একটি প্রতিপাদ্য তৈরী করা হয়। ২০০৬ সনে জলাভূমি দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘জলাভূমিসমূহ এবং পানিনির্ভর জীবন ও স্থায়িত্বশীল জীবনযাত্রা’, ২০০৭ সনের প্রতিপাদ্য ছিল ‘আগামীর জন্য মাছ?’, ২০০৮ সনে ‘স্বাস্থ্যকর জলাভূমি, স্বাস্থ্যকর জনগণ’, ২০০৯ সনে ‘নদী ও নদী তীর ব্যবস্থাপনা’, ২০১০ সনে ‘প্রাণবৈচিত্র্য ও জলবায়ু পবির্তন’, ২০১১ সনে ‘জলাভূমি ও জংগল’, ২০১২ সনে ‘জলাভূমি ও পর্যটন’, ২০১৩ সনে ‘জলাভূমি ও পানিব্যবস্থাপনা’ এরকম প্রতিপাদ্যসমূহ চূড়ান্ত করা হয়। ২০১৫ এবং এ বছরের প্রতিপাদ্য ‘জলাভূমি সমূহই আমাদের ভবিষ্যত’। এ বছরের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘জলাভূমি আমাদের ভবিষ্যত ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন’। আজ এই প্রশ্ন সকলের কাছেই, রাষ্ট্র থেকে এজেন্সি। ব্যক্তি থেকে সমষ্টি। আমরা কী জলাভূমির প্রতি ন্যায়বিচার করে চলেছি? বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ (সংশোধন) আইন ২০১০ বলেছে, আপাতত বলবৎ অন্য কোনো আইনে যা কিছুই থাকুক না কেন, জলাধার হিসেবে চিিহ্নত জায়গা ভরাট বা অন্য কোনোভাবে শ্রেণী পরিবর্তন করা যাবে না। এককালে না হয় জলাভূমিকে খুন করেই গড়ে ওঠেছে রাজধানী ঢাকা ও দেশের বড় শহর গুলো। কিন্তু আজও কেন জখমের আওতামুক্ত হতে পারেছ না ভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও বৈচিত্র্যে অনন্য দেশের জলাভূমিগুলো? রাষ্ট্র আর কবে জলাভূমির যন্ত্রণা বুঝতে পারবে?
লেখায় ব্যবহৃত তথ্য ও প্রকাশিত মতামত একান্ত লেখকের কোনভাবে প্রতিষ্ঠার এর দায়ভার বহন করবে না।