মাতৃত্বকালীন ভাতায় আশার আলো দেখছেন দিপালী

মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে রিনা আক্তার
একজন সুস্থ মা’ই পারে একজন সুস্থ শিশুর জন্ম দিতে। আর একটি সুস্থ সমৃদ্ধ জাতি গঠনে সুস্থ স্বাভাবিক শিশু জন্মের কোন বিকল্প নেই । তাই একজন গর্ভবতী মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার দিক বিবেচনা করা প্রতিটি পরিবারের দায়িত্ব। কিন্ত আমাদের সমাজে বিশেষ করে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর পারিবারিক কাঠামোতে প্রায়শই দেখা যায় অনেক মা’ই গর্ভকালীন সময়ে যথাযথ সুযোগ-সুবিধা, পুষ্টি ও যতেœর অভাবে অপুষ্ট শিশুর জন্ম দেন। কিন্তু বর্তমান সময়ে মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরে গ্রামাঞ্চলের অতিদরিদ্র ও গর্ভবতী মায়েদের জন্য মা ও শিশু সহায়তা কর্মসূচির আওতায় ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এই কর্মসূচির সহায়তায় নতুন করে স্বপ্ন দেখছে দিপালী রানী দাস।


সিংগাইর উপজেলার পৌরসভাধীন ঘোনাপাড়া গ্রামের মনিঋষি সম্প্রদায়ের পুত্রবধু এবং বারসিক কর্তৃক গঠিত ঘোনাপাড়া নারী উন্নয়ন সমিতির একজন সদস্য দিপালী রানী দাস (২১), স্বামী,শ^শুর-শাশুড়ি ও একটি পুত্র সন্তান (১৪ মাস) নিয়ে তার পরিবার। স্বামী খেলারাম (২৫) দাস পেশায় বর্তমানে ডেকোরেটর শ্রমিক, শ^শুর রিকশাচালক।
দিপালী দরিদ্র কৃষক পরিবারের মেয়ে। দারিদ্রতার কারণে লেখাপড়ার যথাযথ সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। প্রাথমিক এর গন্ডি পেরোতে পারলেও মাধ্যমিক এসে বেশি দূর অগ্রসর হতে পারেননি। বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয় আঠারো পেরোতেই। তিনি ভেবেছিলেন স্বামীর বাড়িতে সে অনন্ত ভালোই থাকবেন। কিন্তু তার শ^শুর বাড়ির উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি ছিল তার শ^শুর। স্বামীর বাড়ি টুকুছাড়া আর কোন জমি নেই, আছে ছোট একটি গরু। তার একার রিকশা চালানোর টাকায় পরিবারের সবার খরচ জোটানো সম্ভব হয় না। অন্যদিকে তার স্বামী ছিল ভবঘুরে। বছর দুয়েক পর তার পরিবারের আরেকটি নতুন সদস্য এর আগমনের কথা শুনে সবাই খুশি হলেও পরিবারের সবার মন আরেকটি মুখের আহারের কথা ভেবে বিষন্ন হয়ে যায়। তখন তিনি ভাবতে থাকেন কি করা যায়?


এমতাবস্থায় তিনি যেহেতু নারী সংগঠনের নিয়মিত সদস্য তাই সে প্রতিটি আলোচনা সভায় উপস্থিত থাকেন ও বিভিন্ন তথ্যগুলো জানার চেষ্টা করেন। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সেবাদানকারি প্রতিষ্ঠানের সুযোগ-সুবিধার অনেক ক্ষেত্র রয়েছে। অনেকেই সেখান থেকে বিভিন্ন সহায়তা পেয়ে থাকেন যেমন: বয়স্কভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, প্রতিবন্ধি ভাতা, ভিজিডি কার্ড, বিভিন্ন সময় এককালীন আর্থিক অনুদানেরও সুযোগ থাকে। তাই তিনি বারসিক’র উন্নয়ন কর্মীর সহায়তায় মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্তিতে করণীয় বিষয়গুলো সম্পর্কে জানতে পারেন।
এই ভাতা প্রাপ্তিতে বয়সসীমা হলো ২০-৩৫ বছর, আর ১ম ও ২য় সন্তানের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য এবং ভাতার পরিমাণ ২৮ হাজার ৮০০ টাকা, যা ২ বছর মেয়াদী। এই কর্মসুচির আওতায় একজন মা ৩৬ মাস ৮০০ করে ভাতা পেয়ে থাকেন।
তখন দিপালী মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় কিছু কাগজপত্র যেমন: ছবি, ভোটার আইডি কার্ড, নাগরিক সনদ, গর্ভকালীন কার্ড, নমীনির আইডি কার্ড ও ছবি, ব্যাংক একাউন্ট, আল্টার রিপোর্ট প্রভৃতি নিয়ে সংগঠনের সভাপতি সুইট চৌধুরী ও বারসিক’র কর্মীর সহায়তায় সিংগাইর পৌরসভায় অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করা হয়। আবেদনের পর তিনি নিয়মিত সেখানে যোগাযোগ অব্যাহত রাখেন। তার এই যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দক্ষতার কারণে তিনি এই সুযোগটি পেতে সক্ষম হন।


দিপালী রানী এই পর্যন্ত ৩ মাস পর পর ৪ বার ভাতার টাকা পেয়েছেন। প্রথমবার সাড়ে ৪ হাজার, ২য়বার ৫ হাজার, ৩য় বার ৮০০ এবং ৪র্থ বার ২৪০০ হারে টাকা পান। সে এই টাকা দিয়ে তার ছেলের পুষ্টিকর খাবার ও নিজের পছন্দ মতো কিছু জিনিস কিনতে পারছেন, সেইসাথে তার বাকি টাকা সঞ্চয় করছেন। তিনি সঞ্চয়কৃত টাকা দিয়ে দুইটা ছাগল কেনার কথা ভাবছেন যাতে তিনি টাকাটির সঠিক ব্যহার করতে পারেন।


বর্তমান সরকারের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি মানবিক প্রকল্প হচ্ছে দরিদ্র নারীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা। এই ভাতার মাধ্যমে দরিদ্র মা তার সন্তানের জন্য পুষ্টিকর সুষম খাবারের চাহিদা মেটাতে সক্ষম হচ্ছেন। দিপালী রানী বলেন, ‘প্রকৃত মায়েরা যাতে কোনো রকম হয়রানি ছাড়াই মাতৃত্বকালীন ভাতা পেতে পারেন সেদিকে নজর রাখা উচিত।’

happy wheels 2

Comments