বীজ আমাগো অস্তিত্ব, আমাগো অধিকার

সিংগাইর, মানিকগঞ্জ থেকে বিউটি সরকার,
সিংগাইর উপজেলার নয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক কৃষাণি সংগঠনের উদ্যোগে সম্প্রতি কৃষক নিয়ন্ত্রিত জাত গবেষণা প্লটে মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। উক্ত মাঠ দিবসে সিংগাইর উপজেলার বায়রা, বলধারা, জামসা ও তালিবপুর ইউনিয়নের ১২টি গ্রামের অর্ধশতাধিক কৃষক কৃষাণী অংশগ্রহণ করে এবং ২৬ জন কৃষক তাদের পছন্দমত ধান জাত নির্বাচন করতে সক্ষম হয়েছেন।

বারসিক এলাকা উপযোগি শস্য ফসলের জাত নির্বাচন ও পছন্দমত জাত সংরক্ষণের জন্য কৃষকের স্থানীয় জ্ঞানকে প্রাধান্য দিয়ে কৃষকের নেতৃত্বে জাত নির্বাচন ও জাত সংরক্ষণের কাজে সহায়তা করে এসেছে। এ ধারাবাহিকতায় সিংগাইর উপজেলার নয়াবাড়ি গ্রামের কৃষক কৃষাণী সংগঠন চলতি বোরো মৌসুমে রয়েল, যুবরাজ, টিয়া, কালামানিক, বাশঁমতি (পাকিস্তানি), স্বর্ণলতা, ব্রি-৮৪, এম২৫২, ব্লাকরাইচ, মকবুল, শুশীল, জুনটি, সোনালী পাইজাম, ওয়ারেজ, এলভিসহ ১৫টি স্থানীয় ধান জাত নিয়ে প্রায়োগিক গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে। কৃষক সংগঠনটি গবেষণালদ্ধ ফলাফল এলাকার মানুষের সাথে সহভাগিতা করার জন্য মাঠ দিবসের আয়োজন করেছেন বলে জানান জাত গবেষণা কমিটির সদস্যবৃন্দ। উক্ত মাঠ দিবসে কৃষক কৃষাণি ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সংশ্লিষ্ট এলাকার উপসহাকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী ফেরদৌস, বারসিক এর আঞ্চলিক সমন্বকারী বিমল রায়, প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী শিমুল বিশ^াস, কৃষিবিদ মাসুদুর রহমানসহ বারসিক সিংগাইর এলাকার কর্মকর্তাবৃন্দ।

কার্যক্রমের শুরুতে গবেষনা প্লটের তত্বাবধায়ক ইব্রাহিম মিয়া গবেষণা কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সকলের সামনে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “আমাগো দেশ ছিলো অনেক ধরনের প্রাণে ভরা। হাজার জাতের ধানের বীজ ছিলো। আমরা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গিয়ে সেগুলো হারায় ফেলছি। তবে যে জাতগুলো এখনো টিকে আছে সেগুলো রক্ষা করা আমাগো দায়িত্ব। কারণ বীজ আমাগো অস্তিত্ব, আমাগো অধিকার। দেশী বীজের মধ্য থেকে পছন্দমত জাত নির্বাচন করার জন্যই আমরা এই গবেষণা কাজটি করছি”। তিনি আরো বলেন, ‘কোন জাতের ধানের ফলন বেশি হয় আবার কোন জাতের ধানের ফলন কম হয়। আবার কোনটায় বেশি পানি লাগে, আবার কোনটায় কম পানি লাগে। এছাড়া কোনটায় পোকামাকড়ের আক্রমণ কম ও বেশি হয় তা গবেষণার মাধ্যমে যাচাই করি।” বারসিক প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী শিমুল বিশ^াস বলেন, “কৃষকদের এ ধরনের গবেষণা উৎপাদন খরচ ও বাজার নির্ভরশীলতা কমিয়ে, জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে প্রাকৃতিক সম্পদনির্ভর ও পরিবেশবান্ধব কৃষি পরিচালনা করতে সহায়ক ভুমিকা পালন করে।” বারসিক’র আঞ্চলিক সমন্বয়কারী বিমল রায় জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য এবং ভেজালমুক্ত ধান নির্বাচন ও চাষের আওতায় আনার জন্য সবাইকে বীজ সংরক্ষণের আহবান জানান।

তাছাড়া কৃষক নিয়ন্ত্রিত জাত গবেষণা কার্যক্রম দেখে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা কাজী ফেরদৌস কৃষক নেতৃত্বে জাত গবেষণা কার্যক্রমে কৃষকদের সহায়তা করার জন্য বারসিককে ধন্যবাদ জানান। এর পাশাপাশি তিনি কৃষকদেরকে টেকসই জাত চাষ করা এবং সংরক্ষণ করার পরামর্শ প্রদান করেন। পরিশেষে নয়াবাড়ী কৃষক সংগঠনের সভাপতি কৃষক ইমান আলী কোম্পানি নির্ভরতা কমিয়ে নিজেদেরকেই জাত নির্বাচন ও সংরক্ষণ করার আহব্বান জানান। মাঠদিবসে অংশগ্রহণ করে কৃষকগণ ৮ প্রকার ধানের চাহিদা নিরূপণ করেন, যা তারা আগামী মৌসুমে নিজেদের জমিতে চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

happy wheels 2

Comments