‘আমাদের ছয় মাসের খাবারের নিশ্চয়তা হোক নারী দিবসে এটাই চাই’
রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
৮ মার্চ বিশ্ব নারী দিবস। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে নারী দিবস। এই দিনটি নারীদের জন্য বিশেষভাবে পালন হয়। স্মরনণকরা হয় সেসব নারীদের যারা দেশ ও দশের কল্যাণে অসামান্য অবদান রেখেছে। এই নারী দিবসে কথা হয় নিজ ভিটা ছেড়ে কাজের উদ্দেশ্য নিয়ে অন্য উপজেলায় জীবিকার উদ্দেশ্য অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলা কিছু নারীদের সাথে। তাঁদের সাথে কথা বোঝা গেল নারী দিবস সম্পর্কে তাঁরা অবগত। কারণ উন্নয়ন প্রতিষ্ঠানের কাজের কারণে প্রান্তিক পর্যায়ের নারীরাও অবগত আছে নারী দিবসের কথা। সঠিক তারিখের কথা বলতে না পারলেও একটি দিন যে আছে তা বলতে পারলেন অনেকেই। এই প্রতিবেদনে কিছু মুন্ডা, মাহাতো ও বর্মণ নারীদের সংগ্রামের কথা তুলে ধরার চেষ্টা করব। যারা পরিবারের খাদ্য চাহিদা পূরণে সব থেকে বড় ভূমিকা রেখে চলেছেন। পাড়ি দিচ্ছেন কষ্টের হাজারো পথ। তাঁদের অবদানের সামান্য স্বীকৃতি দিতেই আজকের উপস্থাপনা।
নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলায় এখন আর তেমন কাজ নেই। সব জমিতে ধান রোপণ শেষ হয়েছে। উপজেলার পাড়ইল ইউনিয়নের রাওতাল গ্রাম থেকে আরতী রানী (৪৫) ২ মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে আলু তোলার কাজ করার জন্য তানোর উপজেলার চাপড়া এলাকায় এসে অস্থায়ী বসতি গড়েছেন। তাঁর স্বামী এখন আসেনি কারণ ওখানে কিছু কাজ থেকে গিয়েছে। তিনিসহ একই গ্রাম থেকে ১৫টি পরিবার একসাথে এসেছেন। এখানে ৩-৪জন পুরুষ আর অধিকাংশ নারী। উদ্দেশ্য এখানে একমাস থেকে আবার ফিনে যাবেন নিজ বসতভিটায়। সুনতী বর্মণ (৩৬) এসেছেন ১০ শ্রেণীতে অধ্যায়নরত মেয়ে কাজলী রানীকে নিয়ে সে স্কুলের শিক্ষককে জানিয়ে এসেছে যে আলু তোলার কাজ করতে যাবেন এক মাসের মনে। শিক্ষক অনুমতি দিয়েছেন কাজলীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে।
তানোর উপজেলায় চলছে আলু তোলার মহৌৎসব। এখানে মাঠের পর মাঠ চাষ হয়েছে আলু। আর আলুর গাছ তোলা ও জমিতে থেকে আলু গুছিয়ে নিয়ে এক জায়গায় পালা করে রাখার কাজে নারী শ্রমিকদের চাহিদা একটু বেশি। এ কাজে নারীরা দল বেঁধে কাজ করতে পারে বলে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়। একসাথেই এসেছেন দিপালী মাহাতো (৪৬) তিনি এবার দিয়ে তানোরে আলু তোলার কাজে এসেছেন ৭ম বার। তার সাথে মজুরি নিয়ে কথা বল্লে তিনি বলেন, ‘বিগত বছরে আমাদের সারাদিনের জন্য দেওয়া হতো দুইশত টাকা বলা হতো আমাদের কাজসহ শুধু গাছ তোলা আর জমির আলু গুলো একজায়গায় রাখা কাজ সহজ তাই। এবার আমাদের দাবি তিনশত টাকা সব জিনিসের দাম বেরেছে তাই। অস্থায়ী বাড়ি বানানোর কঞ্চিটি বেঁধে এই গল্পে যোগ দিলেন সুনেকা বর্মণ (৪৬) তিনি বল্লেন, ‘এখানে আমরা এক মাস কাজ করি বাড়ি ছেড়ে আসি পরিবারের ২-৩ জন মিলিয়ে ১৮-২০ হাজারের মত টাকা আয় হয়। যাওয়ার সময় আলু কুরিয়ে নিয়ে যেতে পারি ৩-৪ বস্তা (২০০ কেজির মতো)। এটা দিয়ে আমাদের ৩ জনের পরিবারের ছয় মাসের খাবার হতেই কষ্ট হয়ে যায়।’
আলু তোলার কাজ চলে সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৩-৪ টা পর্যন্ত। এরপর দুপুরের খাবার খেয়ে আলু তুলে নিয়ে যাওয়া জমির মাটির মধ্য থেকে চলে আলু কুড়ানোর কাজ। এ কাজে কাউকে কোন ভাগ দিতে হয় না যে যতটুকু পায় তা নিয়ে এসে অস্থায়ী বাড়িতে জমা করে রাখা হয়। কাজ শেষে সবাই সক একজায়গায় করে বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। যাদের বেশি পরিমাণে কুড়ানো আলু জমে যায় তাঁদের কেউ কেউ আবার অল্প বিস্তর বিক্রয় করে। একাজ মূলত মেয়েরাই করে থাকে। এ বিষয়ে দিপালী মাহাতো বলেন, ‘এ আলু গুলো ভালো করে শুকানো হলে ২-৩ মাস পর্যন্ত ভালো থাকে। এটা আমাদের পরিবারের খাবারের জন্য অনেক সহযোগিতা হয়।’
তানোর উপজেলার ব্যাপি আশে পাশের নাচোল, নিয়ামতপুর, মহাদেবপুর,পোরশা, থেকে অনেক আদিবাসী পরিবার এসে অস্থায়ী বসতী স্থান করে এখানে আলু তোলার কাজ করার জন্য। আর এ কাজে নারীদের সংখ্যাই বেশি। মূলত বিগত সময়ে এ কাজে নারীদের দৈনিক মজুরি দেওয়া হতো ২০০ টাকা। তবে এবার থেকে তাঁদের দাবি এ কাজের জন্য দেওয়া হোক ৩০০ টাকা। কারন আলু তোলার কাজ করে একজন পুরুষ সারা দিনে আয় করে ৪০০-৫০০ টাকা।
দলের সকলের সাথে কথা বলে জানা গেল নিজ এলাকায় কাজ করে সারা বছরের খাবারের নিশ্চয়তা হয় না বলে। শুধু আলু তোলার কাজ করার জন্য নারীরা নিজ বাড়ি থেকে দূর-দুরান্তে পারি দেয় পরিবারের সারা বছরের খাবার নিশ্চিত করার জন্য। গড়েন অস্থায়ী বসতী। তাঁদের দাবি শ্রমের সঠিক মূল্য বিবেচনা করে যদি মজুরি বাড়ানো যায় তাহলে তাঁদের সারাবছরের খাবারের নিশ্চয়তা হবে।