কৃষিকাজ করেও ভালো আয় করা সম্ভব
কলমাকান্দা, নেত্রকোনা থেকে গুঞ্জন রেমা
কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের বরদল গ্রামে বাস করেন অরুণ গমেজ। পেশায় একজন কৃষক। তাঁর একমাত্র ছেলে রয়েছে। সেও জীবিকার তাগিদে এখন ঢাকায় আছেন। বাড়িতে স্বামী-স্ত্রী দুজনের সংসার। জীবিকার জন্য একসময় ঢাকায় একটি হাসপাতালে এবং ব্রাদার হাউজে ৫ বছর যাবৎ কাজ করতেন বাবুর্চি হিসেবে। চাকুরি করার সময় প্রায় ভোর থেকে রাত অবধি কাজ করতে হতো তাঁকে। কাজের কোন নির্ধারিত সময় নেই বললেই চলে। ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথে কাজে লেগে যেতে হতো ঘুমানোর আগ পর্যন্ত। এক সময় চিন্তুা করলেন এখানে যেভাবে রাতদিন পরিশ্রম করেন সে পরিশ্রম যদি গ্রামে গিয়ে করেন তবে এখানে যে আয় করেন তার চেয়ে বেশি আয় করতে পারতেন! তাই সিদ্ধান্ত নিয়ে গ্রামে ফিরে এলেন। শুরু করেন কৃষি কাজ। বৈচিত্র্যময় শাকসব্জি ও ধান আবাদ করতে শুরু করেন। তিনি দেখলেন কৃষিকাজ করেও ভালো আয় করা সম্ভব। তাই মনোযোগ দিয়ে লেগে গেলেন কৃষি কাজে।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/01/IMG_20200127_150853.jpg)
তিনি লক্ষ্য করেছেন পাশের গ্রামে একজন কৃষক বিশাল বড় আকারে চাল কুমড়া চাষ করেছিলেন। তা দেখে তিনিও অনুপ্রাণিত হয়ে শুরু করলেন চাল কুমড়ার চাষ। কাজের অবসর সময়ে বসে থাকতেন পাশের গ্রামের ওই চাল কুমড়ার বাগানে কিছু একটা শিখার জন্য। ওই কৃষকের তাকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে আগ্রহ না দেখালেও তিনি বসে থেকে দেখতেন তারা কখন কিভাবে গাছের যত্ন করে, কোন রোগের জন্য কি চিকিৎসা দিতে হয়, কুমড়া গাছের কোন ডোগা রাখতে হয় কোন ডোগা কেটে ফেলতে হয়। এভাবে তিনি প্রতিদিন অবসর সময়ে গিয়ে ওই বাগানের মালিক ও শ্রমিকদের সাথে সময় কাটাতেন কাজ শিখার জন্য। ওখান থেকে যা শিখতেন যা বুঝতেন তা নিজ বাগান পরিচর্যার ক্ষেত্রে কাজে লাগাতেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/01/IMG_20200127_151039.jpg)
এভাবে প্রথমবছর অনেক কষ্টে একটু একটু করে চালকুমড়া চাষের পদ্ধতি বা কৌশল শিখে কুমড়া বাগান করে মোটামুটি লাভ করতে পেরেছিলেন। পরের বছরও পূর্বের অভিজ্ঞতা দিয়ে চাল কুমড়া বাগান করা শুরু করলেন। ওই বছরও তিনি মোটামুটিভাবে লাভ করলেন। কিন্তু কাঙ্খিত ফলন পেলেন না। পোকা মাকড়ের আক্রমণে অনেক গাছ মরে গিয়েছিল। এভাবে তিনি ৪ বছর কুমড়া চাষ করে আসছেন একাধারে। এ বছর তিনি তাঁর বাগান সম্পূর্ণরূপে সাজাতে পেরেছেন। এবার যেকোন সমস্যা দেখা দিলে তিনি নিজেই সমাধান করতে পারছেন। এমনকি এ বছর অনেক নতুন কুমড়া চাষী যারা আছেন তাদের পরামর্শ দাতা হিসেবে কাজ করছেন। এবার তিনি চালকুমড়া চাষ করেছেন ৮০ শতাংশ জমিতে। করলা চাষ করেছেন ২৪ শতাংশ জমিতে, মিষ্টি কুমড়া চাষ করেছেন ৪৮ শতাংশ জমিতে। সাথী ফসল হিসেবে তিনি চাষ করেছিলেন ধনিয়া। এরই মধ্যে তিনি প্রায় ৬ হাজার টাকায় ধনিয়া বিক্রি করেছেন। শুরু করেছেন চাল কুমড়া বিক্রিও। এ পর্যন্ত তিনি ৪ ধাপে ৭০ হাজার টাকার চাল কুমড়া বিক্রি করেছেন বলে জানিয়েছেন। ৭ দিন পর পর চাল কুমড়া বিক্রি করছেন। এভাবে একাধারে ২ মাস বিক্রি করা যাবে বলে জানিয়েছেন।
এবছর তিনি চালকুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, করলা, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গা চাষ করেছেন। এমন বৈচিত্র্যময় ফসল চাস সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রতিবছরই আমি বিভিন্ন ধরনের ফসল করি। এ বছর একটু বেশি করেই করার চেষ্টা করেছি। কারণ এক ফসলের উপর নির্ভর করলে ঝুঁকি থাকে আর বিভিন্ন ফসল করলে ধাপে ধাপে ফসল পাওয়া যায় যেমন সর্বপ্রথম ধনিয়া বিক্রি করলাম তারপর শুরু করলাম চাল কুমড়া এবং পরে শুরু হবে করলা, মিষ্টি কুমড়া, চিচিঙ্গা ও ঝিঙ্গার বিক্রি।’ এভাবে তিনি পর্যায়ক্রমে বিক্রির উদ্দেশ্যে ফসল আবাদ করেছেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2020/01/IMG_20200127_151211-1.jpg)
তাঁর মতে, ‘এবার তার সবগুলো ফসলই খুবই ভালো হয়েছে। আশা করছেন কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার তিনি অনেক লাভবান হবেন। পরিশেষে তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অন্যের অধীনে কাজ করলে যে শ্রম দিতে হয় তা যদি নিজের কাজে শ্রম দেওয়া যায় তাহলে অনেক লাভ করা সম্ভব। আমি এখন আগের চেয়ে অনেক ভালো আছি, পরিশ্রম করি ভোর থেকে রাত অবধি কিন্তু কোন ক্লান্তি আসে বলে মনে হয় না। বাগানে গেলে সব ক্লান্তি ভুলে যাই। অনেকে এখন আমার কাছ থেকে পরামর্শ নেন, তাদের বাগানে গিয়ে পরিদর্শন করতে বলেন, আমি সাধ্যমত নতুন চাষিদের পরামর্শ দিয়ে থাকি।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি মনে করি গ্রামে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ আছে। এ পরিমাণ সম্পদ শহরে নাই। তাহলে গ্রামে এই প্রাকৃতিক সম্পদ যদি সঠিক পদ্ধতিতে ব্যবহার করি তবে অন্যের অধীনে কাজ করতে হবে না বরং অন্যকে কাজ দেওয়া যাবে, কারণ আমার বাগানে এখন প্রতিদিন ৫-৬ জন শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছে।’