যুক্তি খণ্ডনে সেরা “ইসরাত জাহান লিপা”!
কুমিল্লা থেকে সজীব বণিক
বিতর্কের প্রতি ইসরাত এর ভালোবাসা পঞ্চম শ্রেণীতে অধ্যয়নকালীন সময় থেকে। স্কুল পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগীতায় অংশগ্রহণ করতেন এবং ধীরে ধীরে স্কুল-কলেজে বিতর্ক ছাড়াও তিনি উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিতর্ক করার দারুণ অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিতর্কের যাত্রা আরো সমৃদ্ধ করেন। বিতর্ক করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বাংলাদেশ টেলিভিশন ছাড়া দেশের বাহিরেও।
ফলস্বরুপ পেয়েছেন অনেক সম্মাননা,হয়েছেন শ্রেষ্ঠ বিতার্কিকও। ইসরাত জাহান লিপা।জন্মগ্রহণ করেন কুমিল্লা জেলার সদরে। পড়াশোনা করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে। তিন ভাই-বোনের মধ্যে লিপা দ্বিতীয়। বাবা মো:মফিজ উদ্দিন আহমদ,চান্দিনা মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং মা কোহিনূর বেগম একজন গৃহিণী।
আওয়ার লেডি অব ফাতেমা গার্লস উচ্চ বিদ্যালয় দিয়ে লিপার প্রাথমিক শিক্ষার হাতেখড়ি এবং ইস্পাহানি স্কুল এণ্ড কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন তিনি। তারপর ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগে। তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর বিতর্কের যাত্রা আরো বেশী মসৃণ করেন।
এ ব্যাপারে ইসরাত বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর নৃবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: আসাদুজ্জামান এর দিক নির্দেশনায় আমি দেশ এবং দেশের বাহিরে বিতর্ক করার সুযোগ পাই। পড়াশোনার পাশাপাশি তিনি বিতর্কে প্রাধান্য দিয়ে ন্যাশনাল পর্যায়ের “জাতীয় তথ্য প্রযুক্তি বিতর্ক-২০১৬” সেরা বিতার্কিকের পুরস্কার পান। আঞ্চলিক পর্যায়ের এ বিতর্কটি ছিল চাঁদপুর,নরসিংদি,কুমিল্লা,কিশোরগঞ্জ ও ফেনীর বিতার্কিকদের নিয়ে।
তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২২তম জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং ২৩তম বিতর্ক প্রতিযোগিতায় প্রথম রাউণ্ডে সেরা বিতার্কিক নির্বাচিত হন। ২০১৫সালে ভারতের রাজস্হানের উদয়পুরে মোহনলাল সুখাদিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনে দক্ষিন এশিয়ার ১১টি দেশের স্টুডেণ্ট অংশগ্রহণ করেন এবং সেখানে তিনি ইংলিশ ডিবেইটিং এ “সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফেস্টিভাল-২০১৫” বেস্ট স্পীকার হন।
এ ব্যাপারে ইসরাত বলেন, দেশের বাহিরে সাউথ এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফেস্টিভাল-২০১৫ বেস্ট স্পীকার হওয়াটা ছিল খুব গৌরবের। শান্ত স্বভাবের এই মেয়েটি ছোটবেলায় মেধার শাণ দিতেনসহপাঠিদের সাথে। তারপর ধীরে ধীরে মঞ্চে আসার সাহস করেন এবং আত্মবিশ্বাস,শ্রম আর বিতর্ক করার মতো মেধা আর কখনো পিছু হঠায় নি তাকে।
ইসরাত বলেন, প্রথম প্রথম সবার সামনে মঞ্চে কথা বলতে গিয়ে আটকে যেতাম কিন্তু কখনো মনে হয়নি মঞ্চ ছেড়ে যাব। তবে মায়ের অনুপ্রেরণা এবং কঠোর অনুশীলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে সাহস সঞ্চয় করে মঞ্চে বিতর্ক করতে চেষ্টা করি এবং অবশেষে সফল হই। এতোটুকুই বলবো,সফলতার পেছনে আমার শ্রম,আত্মবিশ্বাস ও বিতর্কের প্রতি ছিল অবিরাম ভালোবাসা।
ইসরাত বিতর্কের পাশাপাশি মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন একাডেমিক ফলাফলেও। নৃবিজ্ঞান বিভাগ থেকে তিনি বি.এস.এস সম্মান প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন ৩.৭৮সিজিপিএ পেয়ে। তাছাড়া তিনি বিভাগীয় শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় জাতীয় ও আন্তজার্তিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে নিজস্ব গবেষণা পত্র উপস্হাপন করেছেন।
পরিশেষে ইসরাত জাহান লিপা বলেন, মানুষের দ্বারা সবকিছুই সম্ভব।বিতর্কের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে আজ অনেককিছুই শিখেছি। বিতর্ক হলো জ্ঞান চর্চার ভিন্ন ক্ষেত্র যা যেকোনো ধরণের বিষয়ের উপর দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করে।