বিলুপ্তির পথে খেঁজুর পাতার শীতল পাটি
নাচোল চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে অনিতা বর্মণ
গ্রামের ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা তাদের ঘরে শোবার জন্য, বারান্দায় বিছানোর জন্য খেঁজুর পাতার পাটি তৈরি করেন। স্থানীয় ভাষায় এই পাটিকে গ্রামে শীতল পাটি বলে। এই পাটি ধান, গম, আটাসহ বিভিন্ন শস্য রৌদ্রে শুকাতে দেওয়ার কাজে ব্যবহার করাসহ হাজারো কাজে এই পাটি ব্যবহার করা হয়। আমাদের সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে লেখা, নাটকে, গল্পে, অনুষ্ঠানে পাটির বর্ণনা রয়েছে।
এই প্রসঙ্গে চাঁপাইনবানগঞ্জ জেলার,নাচোল উপজেলার, নেজামপুর ইউনিয়নের, আওয়াল পাড়া গ্রামের লীলাবতী পাহান (৩৮) বলেন, “আমাদের গ্রামের নারীরা অবসর সময়ে পরিবারের জন্য খেঁজুর পাতার পাটি তৈরি করে থাকেন। তবে আগের তুলনায় এখন পাটির ব্যবহার অনেক কমে যাচ্ছে। কারণ আগের মত খেঁজুর গাছও নেই, খেঁজুরের পাতাও পাওয়া যায় না। ফলে উপকরণের অভাবেই এই শিল্প আজ বিলুপ্তির পথে।
তিনি বলেন, “আমি আমার ছোট্ট বেলা থেকেই খেঁজুর পাতার পাটির ব্যবহার দেখে আসছি। কিভাবে খেঁজুর পাতা দিয়ে পাটি বুনানো হয় তা আমি দেখেছি। অবসরে মা, কাকিরা তাদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে খেজুর পাতার পাটি বুনতেন। দেখতে দেখতে নিজেরও ইচ্ছা হতো, তখন মায়ের কাছে এই পাটি বোনার কৌশল শিখে নিয়েছিলাম। এখন আমি আমাদের গ্রামের নারীদের পাটি বোনার কৌশল শিখিয়ে দিই।”
লীলাবতী পাহান বলেন, “পাটি বোনার জন্য প্রথমে খেঁজুর পাতার ডাল কেটে ৪/৫ দিন কড়া রৌদে শুকিয়ে নিতে হবে। এরপর ডালগুলো পাতা থেকে ছড়িয়ে নিতে হবে। পাতাগুলো গোঁড়ার বোটার অংশ এবং সামনের দিকে ছুচালো কাটার অংশ কেটে ফেলে দিতে হবে। এরপর পাতাগুলোকে দু’ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। তিনি বলেন, “এই দু’ভাগ পাতাগুলোকে প্রয়োজন মতো চিকন করে পাটি বুননের উপযোগি করে তৈরি করতে হবে। একটি পাটি তৈরি করতে ২০/২৫দিন সময় লাগে যার দাম দাঁড়ায় ২৫০/৩০০ টাকা। তবে শ্রম ছাড়া পাটি তৈরি করতে আর কোন প্রকার খরচ হয় না।”
লীলাবতীর স্বামী কৃষি কাজ করে সংসার চালান। স্বামী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তার সংসার। বসতভিটা ৪ কাঠা খাস জমি ছাড়া নিজস্ব জমি বলতে তেমন কোন জায়গা নেই। তবে প্রতিবছর ২/৩ বিঘা জমি বর্গা করে থাকেন। আর এই বর্গা জমিতে ধান, গম, সরিষা চাষ করেন। তাছাড়া বাড়ির উঠাতে শিম, চাল কুমড়া, মিষ্টি কুমড়া, লাউ ও চাষ করেন। এছাড়া সংসারের কাজের পাশাপাশি গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি ও লালন পালন করে কিছু বাড়তি আয় করে সংসারের কাজে লাগান, আবার কোন সময় ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার কাজে ও খরচ করে থাকেন ।
লীলাবতী পাহান আরও বলেন, “আমরা জনসাধারণ একত্রিত হয়ে খেঁজুর গাছ লাগানোর উদ্যোগ গ্রহণ করলে একদিকে বিলুপ্তি হয়ে যাওয়া খেঁজুর গাছ রক্ষা পাবে অন্যদিকে এই খেঁজুর পাতার পাটিকে টিকিয়ে রাখার সম্ভব হবে”।