গবাদি পশুপাখি একজন কৃষকের আপদকালীন ব্যাংক
নেত্রকোনা থেকে শংকর দ্রং:
গোবিন্দশ্রী তলার হাওর কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে এবং বারসিক ও উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের সহযোগিতায় নেত্রকোনা জেলার মদন উপজেলার হাওর বেস্টিত গোবিন্দশ্রী ইউনিয়নের কৃষকদের গৃহপালিত পশুর (গরু) স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্সে এক টিকা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয়েছে।
টিকা ক্যাম্পে গোবিন্দশ্রী গ্রামের ৭২টি পরিবারের গৃহপালিত ৩৮১টি গরুর বাদলা ও তর্কা রোগের টিকা প্রদান করা হয়। গোবিন্দশ্রী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এ.কে.এম নূরুল ইসলাম অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। সকাল ১০:০০ টা থেকে দুপুর ২:০০ টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত টিকা ক্যাম্পে গোবিন্দশ্রী গ্রামের বিভিন্ন পাড়া থেকে কৃষক-কৃষাণীরা তাদের পালিত গরু নিয়ে ইউপি কমপ্লেক্স প্রাঙ্গনে জড়ো হয়। তবে করোনা সংক্রমণ থেকে সুরক্ষায় সকলকে নিরাপদ দূরত্বে থেকে নিজ নিজ বড় গরুর জন্য তর্কা ও ছোট গরুর জন্য বাতলা (এন্ট্রাক্স) রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদান করা হয়।
মদন উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাসুদ করিম উপস্থিত কৃষক ও কৃষাণীদেরকে গবাদি পশুপাখির টিকা প্রদানের উপকারিতা সম্পর্কে সচেতন করেন। তিনি বলেন, ‘গবাদি পশুপাখি একজন কৃষকের আপদকালীন ব্যাংক। গবাদি পশুপাখি থেকে অনেক অর্থ আয় হয়। একটি বাছুরের সর্বনিম্ন মূল্য ১৫ হাজার টাকা। সামান্য কিছু টাকার জন্য আমরা এদের প্রয়োজনীয় টিকা নিয়মিত দিইনা। ফলে অনেক সময় তর্কা ও বাতলা রোগে আক্রান্ত হয়ে হঠাৎ গরু মারা যাচ্ছে এবং কৃষকরা আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই আপনারা সকলে আপনাদের গবাদি পশুর বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগে বা ইউনিয়ন উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে আমরা টিকা দেয়ার ব্যবস্থা করবো।’ তিনি আরও বলেন ‘বর্তমান সময়টি গরুর মহামারী বাদলা (এন্ট্রাক্স) রোগের মৌসুম। তাই এ রোগটি গ্রামে প্রবেশ করার আগেই এর প্রতিষেধক টিকা দেওয়া হলে গরু সুরক্ষিত হবে। কেননা বাদলা রোগটি ছোঁয়াছে রোগ।’
প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তার আলোচনা শেষে উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগের ভ্যাক্সিনেটর মো. কামরুল হাসান কৃষক সংগঠনের সদস্য ও বারসিক ’র কর্মীদের সহযোগিতায় টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরু করেন।
তলার হাওর কৃষক সংগঠনের সভাপতি কৃষক হান্নান মিয়া বলেন, ‘আমরা প্রায় সকলেই গবাদি পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় টিকা প্রদানের বিষয়টি জানি। কিন্তু উপজেলা প্রাণী সম্পদ বিভাগ অনেক দূরে হওয়ায় এবং ভ্যাক্সিনের দাম বেশি হওয়ায় এককভাবে কিনতে পারিনা। একজন কৃষকের সর্বোচ্চ ১০টি গরু আছে, তবে বেশিরভাগে ক্ষেত্রে ২/৩টি করে গরু রয়েছে। কিন্তু একটি ভ্যাক্সিনের বোতলে (ভায়াল) প্রায় ৫০-১০০টি গরুর টিকা থাকে। গ্রামের কৃষকদের মধ্যে বিশ্বাস ও ঐক্যতা না থাকায় একত্র হয়ে ভ্যাক্সিন কেনা ও প্রাণী সম্পদ অফিসে যোগাযোগ করা হয় না। অন্যদিকে ইউনিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপ-সহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে সময়মত অফিসে পাওয়া না যাওয়ায় কৃষকরা যোগাযোগ করতে আলসেমি করে। তবে আমরা বারসিক’র সহযোগিতায় এ সেবা পেয়ে খুবই উপকৃত।’
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. মাসুদ করিম করোনাকালে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগ বিছিন্ন হাওরাঞ্চলের গবাদি পশুর বাদলা ও তর্কা রোগের প্রতিষেধক টিকা প্রদানে টিকা ক্যাম্প আয়োজনের জন্য কৃতজ্ঞতা জানান। এই ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে বারসিক হাওরের প্রাণী সম্পদ সুরক্ষার পাশাপাশি বাংলাদেশ সরকারের প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখছে।