প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় খেজুর বীজ বপন
হরিরামপুর থেকে সত্যরঞ্জন সাহা ও মুকতার হোসেন :
‘লোক সংগীত আর হাজারী গুড় মানিকগঞ্জের প্রাণের সুর’। এটি মানিকগঞ্জ জেলাকে ব্র্যান্ডিং করেছে। মানিকগঞ্জের হরিরামপুরের ঝিটকার হাজারী গুড় বিশ্ববিখ্যাত। অন্যদিকে তাল ও খেজুর গাছ প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে, রক্ষা করে নদী ভাঙন, রাস্তাঘাট ভাঙন এবং বজ্রপাতের আঘাত থেকেও সবাইকে রক্ষা করে। তাই পদ্মার তীরবর্তী রাস্তাঘাট, চরের রাস্তায় তাল ও খেৎুর গাছ রোপণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি অনুধাবন করে বারসিক এলাকার শিক্ষার্থী যুবক, ক্লাব, কৃষক সংগঠন ও কৃষক-কৃষাণিদের নিয়ে চর ও নদীর তীরবর্তী এলাকায় খেজুর বীজ বপনের উদ্যোগ নিয়ে আসছে। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে দুর্যোগ মোকাবেলা করা এবং পশু পাখির জন্য আবাসস্থল ও খাবার পরিবেশন করা। অন্যদিকে রাস্তার দুই পাশে খেজুর বীজ বপনের মাধ্যমে মাটির ক্ষয়রোধ যায়, সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পায়।
হরিরামপুরের চর এলাকায় গাছপালা খুবই কম। তাল ও খেজুর গাছ একেবারেই নেই বললেই চলে। ফলে বজ্রপাতে প্রতিবছর মানুষসহ ও প্রাণসম্পদের ক্ষতি হয়। তাই বারসিক এই এলাকায় সবাইকে নিয়ে খেজুর বীজ সংগ্রহ করে এবং সেই বীজ চরের পতিত এলাকায় ও নদীর ধারে বপনের উদ্যোগ নেয়। এলাকার যুবকরা স্বেচ্ছা শ্রমের ভিত্তিতে এসব খেজুর বীজ বপন করে। এতে করে এই সংগঠন মনে করে প্রাণবৈচিত্র্য সুরক্ষিত হবে।
এই প্রসঙ্গে উপজেলার শিক্ষার্থী সুমা আক্তার বলেন, ‘আমরা স্বেচ্ছাসেবক টিমের সাথে থেকে তাল খেজুর বীজ বপন ও ফলের গাছ রোপণ করে খাদ্য উৎপাদনে সহায়তা করতে পেরে ভালো বোধ করছি। এতে করে মানুষসহ পশুপাখির খাবার হবে, আমরা সবাই মিলে ভালো থাকবো। আমরা লাওতা থেকে ইজদিয়া রোডে এক কিলোমিটার রাস্তায় খেজুর বীজ বপন করে কার্যক্রম শুরু করেছি।’
ঝিটকার গাছি খন্দকার মিজানুর বলেন, ‘এই এলাকায় খেজুর গাছের সংখ্যা খুবই কম। কারণ হলো বর্ষা বা বন্যার পানি রাস্তায়, মাঠেঘাটে প্রবেশ করায় খেজুরের বীজ পচে যায়, গাছ হয় না। উঁচু জায়গায় বীজ বপন করলে খেজুর গাছ হয়। আমি হাজারী গুড় তৈরির জন্য আমার বাড়িতে ও রাস্তার পাশে খেজুর গাছ বপন করলে নতুন কিছু গাছ হয়েছে। এগাছ থেকে এবছর রস সংগ্রহ করে হাজারী গুড় তৈরি করেছি। দাম বেশ ভালো হওয়ায় গাছিরা ভালো আছে।’
হরিরামপুরের স্বেচ্ছাসেবক টিমের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম রাজু বলেন, ‘প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা আর নদী ভাঙনের ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে খেজুর গাছ। খেজুর গাছ লাগানোর জন্য টিমের সদস্যরা রাস্তার পাশে খেজুর গাছ বপন করেন। আমরা মনে করি এ তাল ও খেজুর গাছ বড় হলে পশুপাখির খাদ্য সংকট দূর হবে এবং তাদের বাসস্থানের জন্য সহায়ক হবে। এলাকার বৈচিত্র্যময় পশুপাখি খাবার ও ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে হরিরামপুর স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করে যাচ্ছে।’
হরিরামপুরের স্বেচ্ছাসেবক টিমের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘প্রাণ ও প্রকৃতি মানুষকে বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। যুবকদের আগ্রহ ও উৎসাহ সৃষ্টির মাধ্যমে নতুন কিছু সৃষ্টি করা যায়। আমাদের স্বেচ্ছাসেবক টিমের সদস্যদেও উদ্যোগে এবং বারসিক’র সহায়তায় প্রাকৃতিক দুর্যোগ বন্যা মোকাবেলায় রাস্তার পাশে খেজুর বীজ বপন করা হয়েছে। এই করোনা মহামারির সময়ে যুবকরা বাড়িতে বসে না থেকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরিবেশ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।’
উল্লেখ যে, হরিরামপুর স্বেব্ছাসেবক টিম, কৃষক সংগঠন, নারী সংগঠন, শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে বিগত সময়ে এলাকায় ১৫ কিলোমিটার রাস্তায় তাল ও খেজুর বীজ বপন করা হয়। এইগুলো রাস্তার পাশে এখন দৃশ্যমান হয়েছে।