কর্মচঞ্চল তানোর কামার পল্লী
তানোর (রাজশাহী) থেকে মিজানুর রহমান
আর হাতেগনা কয়েকদিন পরই পবিত্র ঈদুল আজহা। তাই দেশের অন্যান্য স্থানের ন্যায় রাজশাহীর তানোরে কামার পল্লীগুলোতে চলছে কাজের কর্মচঞ্চলতা। কোরবানির পশুর চামড়া আর গোশত কাটাকাটি করতে দা, বটি, ছুড়ি, চাপাতিসহ ধারালো জিনিস তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন এ উপজেলার কামার শ্রমিকরা।
ইতোমধ্যে এ সব সরঞ্জাম বেচাকেনার পাশাপাশি ধাতব সরঞ্জামাদী শান দিতে শানদানগুলোতেও ভীড় ক্রমশ বাড়ছে। এছাড়াও ভ্রাম্যমাণ শানদানিরা চষে বেড়াচ্ছেন বিভিন্ন এলাকার বাড়ি-বাড়ি। তবে ঈদের বিপুল চাহিদার যোগান দিতে এক মাস আগে থেকেই জোরদমে কাজ শুরু করেছেন উপজেলার কামার শ্রমিকরা বলে জানা যায়।
সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন বাজার ও কামারের দোকান ঘুরে দেখা যায়, অল্প কিছুদিন আগেও উপজেলার চাপড়া, তানোর, তালন্দ, কামারগাঁ, কলমা, মুন্ডুমালা, কালিগঞ্জ, চাঁন্দুড়িয়াসহ বিভিন্ন হাট বাজারে বর্তমান আধুনিক যন্ত্রাংশের প্রভাবে কামার শিল্পের দুর্দীন চললেও পবিত্র ঈদুল আযাহাকে সামনে রেখে জমে উঠেছে এ শিল্প। কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে কামার পল্লীতে বেড়েছে ব্যস্ততা, যেন দম ফেলার সময় নেই কামারী শিল্পীদের।
এবার কামার পল্লীগুলোতে গরুর চামড়া ছাড়ানোর জন্য ছোট ছুরির দাম ৭০ থেকে একশ’৫০ টাকা, মাঝারি সাইজের ছুরির দাম ২শ’ থেকে ২শ’৫০ টাকা আর বড় সাইজের ছুরি ৩শ’ থেকে ৫শ’ টাকা এবং ধার করার স্টিল প্রতিটি ৫০ টাকা করে করে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও হাড় কাটার জন্য লোহার পাতের চাপাতির (বিভিন্ন সাইজের) দাম হাঁকছে সাড়ে ৫শ’ থেকে হাজার টাকা। ছোট, মাঝারি ও বড় সাইজের বঁটি বিক্রি করছে সাড়ে ৩শ’ থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকায় আর পুরানো যন্ত্রপাতি শান দিতে বা “পানি” দিতে ৪০ থেকে প্রকার ভেদে ১শ’৫০ টাকা পর্যন্ত নেয়া হচ্ছে।
এব্যাপারে উপজেলার চাপড়া বাজার মোড়ের কামার শিল্পী তপন ও পরেশ কর্মকার কাজের ব্যস্ততার মাঝেই এ প্রতিবেদকে জানান, এক সময় কামারদের যে কদর ছিল বর্তমানে তা আর নেই। মেশিনের সাহায্যে বর্তমানে আধুনিক যন্ত্রপাতি তৈরি হচ্ছে ফলে তাদের তৈরি যন্ত্রপাতির প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হারাচ্ছে। হয়তোবা একসময় এই পেশা আর থাকবেই না।
এসময় আরেক কামার শিল্পী প্রসেনজিত কুমার বলেন, “আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই কাজ করে আসছেন সারাবছর তেমন কোন কাজ না থাকলেও কোরবানীর সময় আমাদের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়। এসময় আমরা রাত-দিন কঠোর পরিশ্রম করে কাজ করি।”
তবে উপজেলার ভ্রাম্যমাণ কামার শিল্পী অর্জিত কর্মকার জানান, এই পেশায় বর্তমানে যারা আছে তারা খুবই অবহেলিত। দ্রব্যমূল্য বেশি হলেও সে অনুযায়ী তারা ন্যাযমূল্যে পান না। এই পেশায় থেকে সংসার চালাতে খুবেই কষ্ট হয়। এভাবে চলতে থাকলে এবং কামার শিল্পীরা সরকারি কোন আর্থিক সহযোগিতা না পেলে হয়তো এ শিল্প একদিন কালের গর্ভে হারিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।