ধর্মজাল
মানিকগঞ্জ থেকে এম.আর.লিটন
মাছ ধরার এক প্রকার যন্ত্র (জাল) হচ্ছে ধর্মজাল। এই মাছ ধরার যন্ত্রটি মানিকগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে খাল, বিল, নদী, নালা এবং বিশেষ করে বর্ষার মৌসুমে বিভিন্ন রাস্তার পাশে খালে, ডুবায়, এ জাল দিয়ে পানির উপর বাঁশের মাঁচাল পেতে মাছ ধরতে দেখা যায়।
সরেজমিনে দেখা যায়, মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলাধীন পায়লা, সাইলকাই, বাইলজুরি, তেরশ্রী গ্রামে রাস্তার পাশে বর্ষার পানিতে মাঁচাল পেতে “ধর্মজাল” দিয়ে মাছ ধরছে অনেকেই।
ঘিওর উপজেলার পয়লা ইউনিয়নের পয়লা পূর্ব পাড়া গ্রামে “ধর্মজাল” দিয়ে মাছ ধরেন মো. নতুবালী (৫৫)। তিনি বলেন, “মাছ ধরা আমার পেশা না। কিন্তু প্রতিবছর বর্ষা আসলে আমি শখ করে ধর্মজাল দিয়ে মাছ ধরি। আমার খুব ছোটবেলা থেকে ধর্মজাল দিয়ে মাছ ধরি।” তিনি আরও বলেন, “বর্ষা আসলে যে মাছ পাই তাতে বর্ষা মৌসুমে আমার পরিবারে মাছ আর কিনে খেতে হয় না এবং মাছ যেদিন বেশি ধরা পড়ে সেদিন বিক্রি করি। এ বছর প্রায় ৩ হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছি।”
এ জালে অনেক রকমের মাছ ধরা পরে, যেমন ছোট মাছের মধ্যে- পুঁটি, টেংরা, বাইয়াম, মলা, খোইলশে, কোই, শিং, আবার বড় মাছের মধ্যে-রুই, কাতলা, বুয়াল, মাগোর, রাজপুঁটি, সিলবারকাপ ইত্যাদি।তিনি বলেন, “ধর্মজাল দিয়ে মাছ ধরা আরামদায়ক ও মজার ব্যাপার। যখন জালটি পানি থেকে উপরে উঠানো হয় তখন মাছ জালে ধরা পড়লে অনেক লাফা-লাফি করে, সেই দৃশ্য দেখতে ভালো লাগে।’’
তার কাছ থেকে আরো জানতে পারি, এ জাল হাতে বুনাতে বা তৈরি করতে প্রায় ছয় মাস থেকে এক বছর সময় লাগে। জাল বুনাতে ২০০ থেকে ৫০০ গ্রাম নাইলন সুতা প্রয়োজন হয়। কিন্তু বর্তমানে মেশিনে তৈরি ধর্মজাল হাট-বাজারে পাওয়া যায়। এ জাল হাতে মেপে তৈরি করা হয়। জালটি চারপাশ একই সমান, জালগুলো বাজারে পাঁচশত থেকে এক হাজার পর্যন্ত বিক্রি হয়ে থাকে। ধর্মজাল দিয়ে মাছ ধরতে অনেকগুলো বাঁশের প্রয়োজন হয়ে থাকে।
মাছ ধরার এই জালটিকে কেন “ধর্মজাল” বলা হয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন “ধর্মজাল বলার কারণ বলতে পারবো না। ছোট বেলা এবং বাব-দাদার বয়সী লোকের কাছ থেকে শোনে এসেছি “ধর্মজাল” নামটি। এই জাল দিয়ে মাছধরার ধরণ আলাদা এবং ব্যতিক্রমধর্মী পানিতে নামতে হয় না, পানির উপর মাঁচাল পেতে, বাঁশে জোইল দিয়ে বা নিচদিকে টেনে জাল পানি থেকে উপরে উঠাতে হয়। বসে বা দাঁড়িয়ে মাছধরা যায়, হয়তো এজন্য “ধর্মজাল” বলা হয় ।”
দেখা যায়, “ধর্মজাল” আমাদের গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যকে বহন করে। মানুষের অর্থনৈতিক বা সুষম খাদ্যের চাহিদা মিটায়। বর্ষা মৌসুমে গ্রাম-বাংলার মানুষের অবসর সময় এবং বিনদোন হিসেবে মাছ ধরার অন্যতম মাধ্যম এই “ধর্মজাল”।