হাইড্রোলিক হর্ণ ও কালোধোয়ামুক্ত: ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যালের রাজশাহী চাই
রাজশাহী থেকে শামীউল আলীম শাওন
রাজশাহীতে প্রতিটি স্থানে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপনসহ ১৩ দফা দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেছে রাজশাহীর তরুণেরা। ‘তারুণ্যের জয় হবে নিশ্চয়ই’ এই স্লোগানে এগিয়ে চলা রাজশাহীর তরুণ সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ- ইয়্যাস’র উদ্যেগে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
আজ সোমবার (১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৯) সকালে রাজশাহী মহানগরীর শহিদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বরে (রেলগেট) তারা এ কর্মসূচি পালন করেন। এতে সহযোগিতা করেন, বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক (বাংলাদেশ রিসোর্স সেন্টার ফর ইডিজিনাস নলেজ)। মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে তরুণরা রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনার, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক বরাবর ১৩ দফা দাবি সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে সভাপতিত্ব করেন তরুণ সংগঠন ইয়্যাসের সভাপতি শামীউল আলীম শাওন। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন বারসিকের বরেন্দ্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, ইয়্যাসের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম আকাশ, নারী ও শিশু বিষয়ক সম্পাদক ফাতেমা আলী মেঘলা প্রমুখ। মানববন্ধন কর্মসূচিতে এলিজ্যাবল ইয়ুুথ ফর ইভোলিউশনের (আই), সুর্যকিরণ বাংলাদেশ, সামাজিক স্কুল, বরেন্দ্র শিক্ষা সংস্কৃতি বৈচিত্র্য রক্ষা কেন্দ্র সহ বিভিন্ন তরুণ সংগঠন অংশগ্রহণ করে।
মানববন্ধনে বক্তার বলেন, ‘রাজশাহী শহরটা আমাদের প্রাণের শহর। বিশেষত আমরা যারা এই শহরের আদি বাসিন্দা। এই শহর বিভিন্ন কারণেই সমগ্র বাংলাদেশ তথা বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। এই শহরটি শিক্ষা নগরী, রেশম নগরী, সবুজ শহর, পরিচ্ছন্ন শহর, নির্মল বায়ুর শহরসহ বিভিন্ন নামে খ্যাতি অর্জন করেছে। অনেক শহরের কাছেই এ রাজশাহী শহর বর্তমানে রোল মডেল। তাই অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এই শহরে ভ্রমণ করতে আসেন। বিভিন্ন প্রয়োজনে অস্থায়ী ভাবেই এ শহরে অবস্থান করেন। অনেকেই আবার স্থায়ীভাবেই এ শহরে বসবাস করা শুরু করেছেন।’
বক্তারা আরো বলেন, ‘এ শহরে বসবাসকারীর জনগণের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে যানবাহনের সংখ্যাও। যানজট মুক্ত রাস্তাঘাটের কারণে অল্পসময়েই এ শহরের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত যাতায়াত করার সুযোগ ছিল এ শহরে। কিন্তু শহরের জনসংখ্যা আর যানবাহনের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেই সুযোগ দিনে দিনে কমতে শুরু করেছে ইতিমধ্যেই। রাজশাহীর বিভিন্ন পয়েন্টে বর্তমানে দেখা মেলে যানবাহন ট্রাফিক জ্যাম। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এভাবেই চলতে থাকলে হয়তো অদূর ভবিষ্যতে রাজশাহী শহর ‘যানজটের শহর’ হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকার ন্যায় যানজটের নগরীতে পরিচিতি লাভ করবে।’
যানবাহন বৃদ্ধির জন্য যানজটের পাশাপাশি বৃদ্ধি পেয়েছে সড়ক দূর্ঘটনাও। আর এই যানজট এবং দূর্ঘটনার জন্য সিংহভাগই দায়ী ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। যানবাহন আর জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে সড়কে যানজট আর দূর্ঘটনা বৃদ্ধি পেলেও ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম সেইভাবে পরিবর্তিত হয়নি বলেও উল্লেখ করেন বক্তারা। বাংলাদেশকে গড়ে তোলা হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে উল্লেখ করে রাজশাহীর ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমকেও ডিজিটালাইজড করে তোলা বর্তমানে সময়ের দাবি বলেও অভিমত প্রকাশ করেন মানববন্ধনের বক্তারা।
মানববন্ধন চলাকালে তরুণ সংগঠন ইয়্যাসের সভাপতি শামীউল আলীম শাওন লিখিত ১৩ দফা দাবি উপস্থাপন করেন। ইয়্যাসের দাবি সূমহ হলো :
১। রাজশাহীতে প্রতিটি স্থানে ডিজিটাল ট্রাফিক সিগন্যাল স্থাপন করতে হবে।
২। সকল ট্রাফিক পুলিশের কাছে ওয়্যারলেস প্রদান করতে হবে।
৩। প্রতিটি স্থানে নির্দিষ্ট দূরত্ব পরপর যানবাহনে যাত্রী ওঠানামা করার জন্য নির্দিষ্ট স্থানে স্টপেজ করে দিতে হবে।
৪। সার্বিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা (সিসিটিভি) দ্বারা পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
৫। সকল ফুটপাত দখলমুক্ত ও অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হবে।
৬। নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রয়োজন অনুসারে পর্যাপ্ত ফুটওভার ব্রিজ ও জেব্রা ক্রসিং স্থাপন করতে হবে।
৭। আইন অমান্যকারীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৮। ট্রাফিক আইন মান্যকারীদের পুরস্কৃত করতে হবে।
৯। দায়িত্বে অবহেলাকারী ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্টদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১০। যানবহনে উচ্চ আলো সৃস্টিকারী সাদা আলোর লাইট ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
১১। রাস্তার ধারে দৃশ্যমান স্থানে পর্যাপ্ত নির্দেশিকা প্রদান করতে হবে এবং ট্রাফিক আইন সম্পর্কে অবগত করতে প্রচারণা করতে হবে।
১২। যানবহনে উচ্চমাত্রার শব্দ দূষণকারী হাইড্রোলিক হর্ন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে এবং ব্যবহারকারীর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১৩। ফিটনেসবিহীন পরিবেশ দূষণকারী কালো ধোয়া যুক্ত যানবহন চলাচল বন্ধ করতে হবে।