প্রকৃতিকে জানি, পুষ্টির গল্প শুনি

আসাদুল ইসলাম, সাতক্ষীরা থেকে

“শাপলা ফুল আবার খাওয়া যায় নাকি! আগে তো জানতাম না। এখানে যেসব শাক-সবজি দেখছি তা তো বাড়ির পাশে দেখি কিন্তু খেতে হয় জানতাম না। এখন থেকে বাড়িতে এসব খাবো। এসব খাওয়া নাকি ভালো।” এভাবেই নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করছিলো সাতক্ষীরা পল্লী মঙ্গল স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সাকিব হাসান।

শুধু সাতক্ষীরা পল্লী মঙ্গল স্কুল নয় সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ, সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজর শিক্ষার্থীদের ও অভিমত একই। কেউ চেনে আবার চেনে না। আবার কেউ দুই একটা চেনে। কিন্তু খাওয়া যায় তা আবার অনেকে জানতোও না।
dsc00270-copy
কথাগুলো বলছিলাম অচাষকৃত ও কুড়িয়ে পাওয়া শাক-সবজি নিয়ে বারসিক ইনস্টিটিউট অব এ্যাপ্লাইড স্ট্যাডিজ এবং শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিম আয়োজিত ‘এসো প্রকৃতিকে জানি, পুষ্টির গল্প শুনি’ শীর্ষক প্রচারণামূলক অনুষ্ঠানের কথা।

অচাষকৃত ও কুড়িয়ে পাওয়া শাক-সবজির পুষ্টিগুণ তুলে ধরে এবং এসব শাক-সবজি সংরক্ষণে সাতক্ষীরার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ‘এসো প্রকৃতিকে জানি, পুষ্টির গল্প শুনি’ প্রচার চলছে ধারাবাহিকভাবে। আর এই প্রচারণামূলক কাজটিতে সার্বিকভাবে কাজ করছে সাতক্ষীরাতে পুষ্টির ফেরিওয়ালা নামে খ্যাত দুই যুব উদ্যোক্তা পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস ও বাবর আলী।

তারা প্রকৃতিতে প্রাপ্ত শাক লতা-পাতার পুষ্টিগুণ তুলে ধরছেন শিক্ষার্থীদের মাঝে। শিক্ষার্থীদের চেনানোর জন্য সঙ্গে করে নিয়ে আসছেন শাপলা, কচু শাক, কলার মুচা, থানকুনি, কলমি, বন কচু, পেপুল, সাঞ্চি, বেতশাক, কলার মুচা, ডুমুর, বউটুনি, ঘ্যাটকল, ব্রাহ্মি শাক, তেলাকচু, হেলাঞ্চসহ অত্যন্ত পুষ্টি গুণসমৃদ্ধ নানা প্রজাতির অচাষকৃত শাক লতা-পাতা।
dsc00355
যুব উদ্যোক্তা পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস ও বাবর আলী জানান, তারা সারাদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে এসব শাক-সবজি কুড়িয়ে আনেন এবং শহরের বিক্রি করেন। এখন স্কুল কলেজে গিয়ে এর যে পুষ্টি গুণ আছে তা তুলে ধরতে পেরে ভালো লাগছে।

শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্য রক্ষা টিমের সিনিয়র সদস্য সাঈদুর রহমান জানান, মূলত প্রকৃতিতে হারিয়ে যাওয়া শাক লতা-পাতার পুষ্টিগুণ তুলে ধরতে আমাদের এই উদ্যোগ। সবাই যেন বিষমুক্ত অচাষকৃত এসব শাক-সবজি খায় এবং সংরক্ষণ করে। আর সাতক্ষীরার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধারাবাহিকভাবে আমাদের ‘এসো প্রকৃতিকে জানি, পুষ্টির গল্প শুনি’ প্রচার চলবে।

সাতক্ষীরা সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগি অধ্যাপক আমানউল্লাহ আল হাদী বলেন, “পাঁচশ টাকার আয়রণ ট্যাবলেট না খেয়ে আমার শিক্ষার্থীদের কচুশাক খাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। অচাষকৃত এসব শাক-সবজি প্রত্যেকটি খুব উপকারি।” তিনি আরো বলেন, “সাতক্ষীরার প্রাণ ও প্রকৃতি সুরক্ষাসহ মানুষের পুষ্টি নিরাপত্তায় ব্যতিক্রমী এ প্রচেষ্টা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত এ সমস্ত বনজ শাক সাতক্ষীরা মানুষের পুষ্টি চাহিদা পূরণসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।”

সাতক্ষীরা সরকারি মহিলা কলেজর অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. ম. হাসান সরোওয়াদী বলেন, “আমরা কচু শাক বাড়ির পাশ থেকে তুলে খেতাম, কলার মুচা খেয়ে বড় হয়েছি। কিন্তু আজ সেগুলো দেখা যায় কম। এসব অচাষ কৃত শাক সবজি খেলে নিজেদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। কলমি শাক সর্ব রোগের ঔষধ। আবার এই শাক সবজি বেটে মুখে দিলে ত্বক ভালো থাকে।” তিনি আরো বলেন, “এটি ভালো উদ্যোগ। এভাবে জানাতে পারলে সবাই সচেতন হবে।”

happy wheels 2