সংগঠনগুলো আমাদের মূল শক্তি
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান ও স্থায়িত্বশীল উন্নয়নের লক্ষ্যে জননেতৃত্বে উন্নয়ন প্রক্রিয়া নীতি অনুসরণ করে বারসিক দীর্ঘদিন যাবৎ মানিকগঞ্জ জেলার প্রায় দুই শতাধিক অধিক গ্রামে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বারসিক বিশ^াস করে জনগোষ্ঠীর নিজস্ব চিন্তা চেতনা জ্ঞান, দক্ষতা ,অভিজ্ঞতা, স্থানীয় চর্চা , পারষ্পারিক সম্পদ বিনিময়, আন্তঃনির্ভরশীল সম্পর্কের প্রতি পারষ্পারিক শ্রদ্ধাবোধ, প্রাকৃতিক ও স্থানীয় সম্পদের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমেই জনগোষ্ঠীর স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন সম্ভব। এই উন্নয়নে জনগোষ্ঠী নিজেরাই অংশ্রগহণ করে, জনগণই কার্যকরী নেতৃত্ব প্রদান করে এবং জনগণের মাঝেই উন্নয়নের প্রতিফলন ঘটে। তাই জনগোষ্ঠী নিজেদের উন্নয়নের জন্য গ্রামভিত্তিক কৃষক কৃষাণি সংগঠন, ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন কমিটি, উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটি, জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটি, উপজেলা ও জেলা নারী উন্নয়ন কমিটি, প্রবীণ অধিকার সুরক্ষা কমিটি, ছাত্র ও যুব সংগঠন, সাংষ্কৃতিক সংগঠন, পেশাজিবী সংগঠন তৈরি করে নিজেদের স্থায়ীত্বশীল উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন।
এই জনসংগঠনগুলো তাদের বার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী মাসিক সভায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্য দিয়ে সরকারি ও বেসরকারি সেবা পরিসেবা প্রাপ্তি, কৃষকের অধিকার অর্জন, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি রোধে স্থানীয় চর্চা বৃদ্ধি, প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, বৈচিত্র্যময় ফসল চাষ, কৃষক কৃষক বীজ বিনিময়, নারী নির্যাতন, বাল্য বিয়ে রোধ, ফসলের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি, নিরাপদ খাদ্য উৎপাদনে নানামূখী সমন্বতি উদ্যোগ করে থাকেন।
সেই ধারাবহিকতায় সংগঠনগুলো নিজেদের সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানের জন্য জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর ২০২১ সালের বার্ষিক কর্মপরিকল্পনা তৈরির জন্য সিংগাইর উপজেলার জনসংগঠনগুলো আলাদা আলাদাভাবে কর্মপরিকল্পনা সভার আয়োজন করে। সভাগুলোতে বিগত দিনের কাজের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে জীবিকায়নের প্রধান ৬টি ক্ষেত্র সমুহ কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, অবকাঠামো ও সামাজিক বিষয়সমূহ চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে অংশ্রগহণকারি সকলের মতামতের ভিত্তিতে সমস্যার ধরণ, সমস্যা সমাধানে জনসংগঠনের উদ্যোগ ও বারসিক’র সহায়তা পক্রিয়া কি হতে পারে সেই আলোকে নিজ নিজ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করেন।
জনসংগঠনের পরিকল্পনার মধ্যে বিশেষভাবে গুরুত্ব ছিল শতবাড়ি উন্নয়ন মডেলের বাস্তবায়ন, জলবায়ু পরিবর্তন সহনশীল ফসল চাষ, প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ, নুরানী গঙ্গা নদী খননের জন্য স্মারকলিপি প্রদান, ভাঙ্গা রাস্তা মেরামত, দেশীয় জাতের হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালন বৃদ্ধি ও প্রাণী সম্পদের রোগ নিরাময়ে টিকাদান কর্মসূচি, নবায়নযোগ্য জ¦ালানির ব্যবহার, গো খাদ্য সংকট নিরসনে, মাসকালাই, খেসারি, পায়রা চাষ বৃদ্ধি, বাল্য বিয়ে, মাদক নিরসনে অভিভাবক সভা, প্রবীণ অধিকার রক্ষায় নৈতিক শিক্ষা ও সততার চর্চা বৃদ্ধিতে নবীন প্রবীণ আন্তঃপ্রজন্ম সংলাপ, সরকারি ও বেসকারি সেবা পরিসেবা প্রাপ্তিতে যোগাযোগ। তাছাড়া পরিকল্পনায় করোনাকালিন সময়কে অধিক গুরুত্ব দিয়ে মানবস্বাস্থ্য রক্ষায় ডায়াবেটিস ও রক্তের গ্রুপ নির্ণয়, আর্সেনিক ক্যাম্প আয়োজন, বসতবাড়িতে নিরাপদ সবজি চাষ, কুড়িয়ে পাওয়া উদ্ভিদ সংরক্ষণ, জৈব সার ও জৈব বালাইনাশক তৈরি ও ব্যবহার। এছাড়া পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায়, প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ সংরক্ষণে দেশীয় বনজ, ফলজ, ওষুধি বৃক্ষ রোপণ, তাল, খেজুর বীজ রোপণ পরিকল্পনায় অন্তর্ভুক্ত করেন।
এ প্রসঙ্গে ব্রী-কালিয়াকৈর নয়াপড়া কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি হযরত আলী বলেন, ‘সাংগঠনিকভাবে কাজ করলে কাজের ফলাফল দ্রুত পাওয়া যায়। আমরা ২০১৯ সালে রাস্তা মেরামতের জন্য চেয়ার্যম্যান বরাবর একটি স্মারকলিপি জমা দিই এবং এ বছর চেয়াম্যান আমাদের রাস্তাটি মেরামত করে দেন। কাজেই পরিকল্পনা করে কাজ করলে কাজ সহজ হয়।’ বাংগালা নব কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা নারী উন্নয়ন কমিটির সাধারন সম্পাদক সেলিনা বেগম বলেন, ‘সংগঠনই আমাদের মূলশক্তি।
সংগঠনের মাসিক সভা ও সাংগঠনিক কাজের মাধ্যমেই সকল সংগঠনের সাথে পারষ্পারিক সম্পর্ক তৈরি হয়। তাই সংগঠনের উপকারিতা সম্পর্কে সকলেরই ভালো জানা ও বোঝা থাকা দরকার। সংগঠন এর সুফল পেতে হলে ভালো একটি পরিকল্পনা থাকতে হয়। সংগঠন আছে বলেই করোনাকালিন সময়ে আমরা নি¤œ আয়ের মানুষদের মধ্যে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, খাদ্য সামগ্রি প্রাপ্তিতে সহায়তা করতে পেরেছি। তাছাড়া সংগঠনের কারনেই সংগঠনের বেশির ভাগ সদস্যই করোনা ও বন্যাপরবর্তী কৃষি সহায়োতা পেয়েছে।’ অন্যদিকে সিংগাইর উপজেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পদাক ইমান আলী বলেন, ‘করোনাকালিন সময়ে সংগঠনগুলোর উদ্যোগগুলো ছিল খুবই সংগঠিত। সাংগঠনিক একতা দিয়ে কাজ করার ফলে করোনা ভাইরাস সম্পর্কে আমরা মানুষকে সচেতন করতে পেরেছি। করোনাকালিন সহায়তা পেয়েছি সংগঠনের মাধ্যমেই। কাজেই সংগঠনের একতা থাকাটা জরুরি।’