স্মৃতিশক্তি বাড়ায় ব্রাহ্মী
সাতক্ষীরা থেকে বাহলুল করিম
স্মৃতিশক্তি বাড়াতে, শরীরে ঘাঁ-পাঁচড়া হলে, মুখের রুচি বাড়াতে, জিহ্বায় ঘাঁ হলে, সর্দি-কাশি কমাতে ব্রাহ্মী শাক ওষুধের মতো কাজ করে। নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এই শাক রান্না করেও খাওয়া যায়।
ঘেরের বেড়িতে, খালে, বিলে ও পতিত জমিতে ব্রাহ্মী শাক দেখতে পাওয়া যায়। তবে অর্ধজলজ পরিবেশে ও নরম মাটিতে এটি বেশি জন্মে। এছাড়া ব্রাহ্মী শাক হালকা লবণাক্ত পানিতেও টিকে থাকতে পারে। এর মূল, কাণ্ড এবং পাতা নরম ও রসালো প্রকৃতির। কাণ্ড ও পাতা হালকা সবুজ রঙের হয়। প্রায় সারাবছর পাওয়া যায় এই শাক। তবে শীতের শেষে এবং বর্ষার শুরুতে এই শাক বেশি জন্মে। শুষ্ক মৌসুমে এটি কম দেখা যায়।
স্থানীয় ভাষায় একে ব্রিহ্মী, বিরগুনি ও আদাগেটে নামে ডাকা হয়। তবে ব্রিহ্মী শাক নামে সকলের কাছে অধিক পরিচিত। এটাকে অচাষকৃত বা কুড়িয়ে পাওয়া শাকও বলা হয়। সাতক্ষীরাতে ব্রাহ্মী শাককে সবাই ব্রিহ্মী বা বিরগুনি নামে চেনে। ব্রাহ্মী এক ধরনের তিতো জাতীয় শাক। পুষ্টিতে ভরা এই শাকে রয়েছে নানাবিধ ঔষধি গুণাগুণ।
মাছখোলা গ্রামের বাসিন্দা মফিজুল ইসলাম বলেন, “বিরগুনি শাক মাঠে-ঘাটে পাওয়া যায়। এই শাক তিতো রান্না করে খাওয়া হয়। এই শাক খেলে শরীর ঠাণ্ডা হয়।” মিরগীডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা মজিবর রহমান বলেন, “ব্রিহ্মী শাক আলু দিয়ে হালকা ঝোল করে খেলে সর্দি-কাশিতে ভালো উপকার পাওয়া যায়। এছাড়া শরীরে ঘাঁ-পাঁচড়া হলে এই শাক খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।” কাটিয়া সরকার পাড়ার বাসিন্দা নার্গিস আক্তার বলেন, “ব্রিহ্মী শাক মুখের রুচি বাড়াতে খুব কাজে দেয়। বেঁটে রস করে ছোট বাচ্চাদের নিয়মিত খাওয়ালে মুখের রুচি বাড়ে।”
সাতক্ষীরা শহরের পুষ্টির ফেরিওয়ালা রুহুল কুদ্দুস বলেন, “ব্রাহ্মী শাককে আমারা ব্রিহ্মী বলে থাকি। আঞ্চলিক ভাষায় এটাকে আধাবিরানি শাকও বলা হয়। এটি সাধারণত হালকা লবণাক্ত পরিবেশে ও রসালো মাটিতে জন্মে। ঘেরের বেড়িতে, ধান ক্ষেতের আইলে ও খালের পাড়ে বেশি দেখা যায়। বর্ষার শুরুতে ও শীতের শেষ দিকে এই শাক বেশি জন্মে। তবে শুষ্ক মৌসুমে কম জন্মে।” তিনি আরও বলেন, “এছাড়া ব্রিহ্মী শাক ওষুধের মতো কাজ করে। এই শাক স্মৃতিশক্তি বাড়াতে দারুণ কাজে দেয়। এই শাক কুচি করে কেটে ঘিয়ে ভেজে ছোট বাচ্চাদের নিয়মিত খাওয়ালে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। জিহ্বায় ঘাঁ হলে মধু দিয়ে এই শাক চিবিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।”
মুক্তকোষ উইকিপিডিয়ার তথ্য মতে, ‘ব্রাহ্মী প্লান্টাগিনাসি পরিবারের একটি উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Bacopa monnieri। একে ব্রাহ্মী, ব্রাহ্মী শাক, আধাবিরানি, ধুপকামিনি নামে ডাকা হয়। ইংরেজি নাম Water hyssop, Thyme-leafed gratiola, Herb of grace, Indian pennywort। এটি ছোট গাছ। কাণ্ড ও পাতা রসালো হয়। এর ফুল বেগুনি সাদাটে। স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য এই শাক খাওয়ানো হয়।’
পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা মেটায় ব্রাহ্মী শাক। এছাড়া এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ঔষধি গুণাগুণ। সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে ব্রাহ্মী শাকের ব্যবহার বাড়িয়ে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব।