পদ্মাপাড়ের কবি দেওয়ান শুকুর শুখোর মাশরুম চাষ
মো. নজরুল ইসলাম: মানিকগঞ্জ
বৈচিত্র্যময় বিশ^ভান্ডারে মানুষ ও প্রকৃতির উত্থান ও পতনের সাথে রয়েছে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ও বহুত্ববাদিতা। বহুত্ববাদি সমাজের বৈশিষ্টগুলোকে সংরক্ষণ করতে হলে প্রকৃতিপ্রেমী সেচ্ছাসেবী মানুষের জীবন সংগ্রাম ও অবদান জানা খুবই দরকার।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2025/02/43ec6c42-3c6b-4a25-b6d0-58ba1fde507a-1024x576.jpg)
মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার আজিমনগর ইউনিয়নের বাঘডাঙ্গি বসন্তপুর গ্রামের পৈত্রিক নিবাসেই ৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫৮ সালে জন্মগ্রহণ করেন কবি শুকুর আলী। পদ্মার ভাঙ্গা গড়ার সারথি হয়ে পুনরায় মেন্দিপুর, সুতালরী হরিরামপুরে দীর্ঘদিন বসত করেন। বর্তমানে তিনি স্বপরিবারে মানিকগঞ্জের পুর্ব দাশরার ঋষিপাড়াতে নিজ বাসভবনে বসবাস করেন। কবি শুকুর আলীর বৈচিত্র্যময় জীবনের সর্বশেষ পেশা একজন মাশরুম চাষী ও ব্যাবসায়ী। তার দুই পুত্রই বিশ^বিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী এবং এক মেয়ে সংসারী। তাঁর সহধর্মিনী ও দুই পুত্র মাশরুম চাষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
তিনি তাঁর বাড়িতেই ছাদ বাগানের মতোন মাশরুম বাগান করেছেন। টিনের চালি দিয়ে কয়েকটি সেডের মতো করে সারিবদ্ধভাবে মাশরুম চাষ করছেন। তার ছোট ছেলে দেওয়ান মাহিন একজন ডিজাইনার। তিনি মাশরুমের গুণাগুন ও উপকারিতা নিয়ে কবি পয়েন্ট এগ্রো নামে ভিডিও কনটেন্ট তৈরি করে ফেসবুক পেইজে প্রচার চালিয়ে বেশ সারা পেয়েছেন। প্রযুক্তির সুবাদে কবি দেওয়ান শুকুর আলী একজন সফল মাশরুম ব্যবসায়ী হিসেবে ব্যাপক পরিচিতি পেয়েছেন। তিনি তরুণ প্রজন্মকে বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি মাশরুম চাষের জন্য উৎসাহ ও উদ্দীপনা দিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও তিনি সৌখিন নেশো থেকে প্রাণ-প্রকৃতি ও পরিবেশসহ সমাজের নানা ধরনের অসংগতি নিয়ে অসংখ্য কবিতা লিখে যাচ্ছেন।
![](https://barciknews.com/wp-content/uploads/2025/02/ba6024ee-807a-4d67-933f-e010aae94fb0-1024x576.jpg)
উল্লেখ্য যে, মানিকগঞ্জের একটি কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো: সাইফুল আলম বলেন, মাশরুম অত্যন্ত পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও ঔষধিগুণসম্পন্ন একটি খাবার। প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, অ্যামাইনো এসি অ্যান্টিবায়োটিক ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই খাবারটি স্বাদ, পুষ্টি ও ঔষধিগুণের কারণে ইতোমধ্যেই সারাদেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মাশরুম চাষের গুরুত্ব গুণাগুণ, চাষাবাদ পদ্ধতি, সংগ্রহ ও সংরক্ষণ প্রণালী এবং খাদ্য হিসেবে এর রকমারী ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণার্থীগণকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষতা বৃদ্ধিপূর্বক অপ্রচলিত ফসল মাশরুমকে সারাদেশে জনপ্রিয় পুষ্টিহীনতা দূরীকরণ ও দারিদ্র্য বিমোচন তথা আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সহায়তা প্রদানে সম্পৃক্ত করাই এই প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্দেশ্য।
মো: সাইফুল আলম বলেন, বাংলাদেশে মাশরুমের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধি করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তাছাড়া এটি একটি পুষ্টিকর ও ঔষধিগুণ সম্পন্ন খাবার হওয়ায় এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এর চাহিদা থাকায় মাশরুম চাষ আমাদের দেশের পুষ্টি সমস্যা সমাধান ছাড়াও অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আশা করা যায়, অদূর ভবিষ্যতে মাশরুম বিদেশে রপ্তানির মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বর্তমানে মাশরুম চাষে মানুষের আগ্রহ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেকার যুবক-যুবতী, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা সকল শ্রেণির মানুষ এমনকি প্রতিবন্ধীরা ও মাশরুম চাষকে জীবিকা হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। এজন্য এদেশের মানুষকে মাশরুম উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের বিষয়ে প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে তোলা জরুরি।