“ নারী! তুমি নিরবতা ভেঙে জাগো -জাগাও”
নেত্রকোণা থেকে পার্বতী সিংহ ও সোহেল রানা
‘নারী পুরুষ সমতায় উন্নয়নের যাত্রা, বদলে যাবে বিশ্ব, কর্মে নতুন মাত্রা’। নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং এগিয়ে যাওয়ার বলিষ্ঠ প্রত্যয় নিহিত রয়েছে ২০১৭ সালের নারী দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয়ের মধ্যে। নারী দিবস এর প্রাক প্রারম্ভিক প্রকাশ ঘটে ছিল ১৮৫৭ সালে নিউইউয়র্কে। নিউইয়র্কের একটি সূচ কারখানায় বেতন বৃদ্ধি, কাজের সময় নির্ধারণ ও কর্মক্ষেত্রের মান উন্নয়ন সহ প্রভৃতি দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংঘটিত হয়েছিল নারী শ্রমিক বিদ্রোহ। মালিক শ্রেণির অনামবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে নারীর লড়াকু প্রত্যয় নাড়িয়ে দিয়েছিল বিশ্ব বিবেককে। বিশ্বের সকল প্রান্তে নিগৃহীত হতে থাকা নারীদের কাছে পৌঁছে দিয়েছে সংগঠিত হওয়ার আহ্বান। তাদের ভীরু প্রাণে জ্বেলেছে সাহসের শিখা। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯১০ সালে জার্মানির সমাজতান্ত্রিক নারী নেত্রী ক্লারা জেটকিন ৮ মার্চকে আন্তর্জাতিক নারী দিবস হিসেবে পালন করার ঘোষণা দেন। দিবসটি প্রথম উদ্যাপিত হয় ১৯১১ সালে।
সেই থেকে সারা বিশ্বে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে নিরন্তর প্রণোদনার উৎস হিসেবে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। বাংলাদেশও প্রতিবছর জাতীয়ভাবে নারী দিবস উদযাপন করে থাকে। এ বছর নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলায়ও দিবসটি পালন করা হয়। উপজেলা প্রশাসন, উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর, আটপাড়া শিক্ষা সংস্কৃতি ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা কমিটি, আটপাড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বারসিক যৌথভাবে দিবসটি পালন করে আটপাড়া উপজেলা চত্বরে। ব্যানার, ফেস্টুন সহযোগে র্যালি এবং আলোচনার মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করা হয়। শিক্ষার্থীরা বজ্রমুষ্টি প্রদর্শনে মাধ্যমে জানিয়ে দেয় আমরাও পারি- ‘আমরা করবো জয় একদিন’। বাংলার নারী জাগরণের অগ্রদূত বেগম রোকেয়াকে ধারণ করুক প্রতিটি নারী তাদের হৃদয়ে। নারীদের পথ তৈরি করে দিয়েছেন তিনি আর সেই পথে দৃঢ় মনোবল নিয়ে হাটতে হবে নারীদেরকেই। এমন হাজারো প্রত্যয় ব্যক্ত করে অংশগ্রহণকারী শতাধিক তরুণ নারী।
নারীর অগ্রসরতার উপর নির্ভর করছে আমরা জাতি হিসেবে কত দ্রুত এবং কতটা এগুতে পারব। নারী শিক্ষিত, স্বাস্থ্যবতী এবং উপার্জনক্ষম হলেও আমরা কর্মক্ষম এবং সৃজনশীল ভবিষ্যত প্রজন্ম পাবো। তাই নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন তথা অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে নারীকে অধিকার, নিত্য নতুন শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সাথে সংযুক্ত করতে হবে। নারীরা এগিয়ে যাচ্ছে- তবে যেতে হবে অনেক দূর। সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি প্রভৃতি ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত রাখতে হবে। বিভিন্ন চ্যালেঞ্জিং পেশাসহ ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, পুলিশ, সেনা, বৈমানিক, নাবিক, গবেষক প্রতিটি পেশার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে আরো বেশি বেশি পদচারণা করতে হবে। এ সমস্ত ক্ষেত্র নারী পদচারণ ঘটেনি তা নয়; তবে তা সীমিত পরিসরে। এই পরিসরকে আরো বেশি বিস্তৃত করতে হবে।
আমাদের সমাজ এবং সংস্কৃতি নারীকে দমিয়ে রাখবে বলে নিজেদের লক্ষ্য থেকে নারীরা নিজেদের সরিয়ে রাখলে হবে না। তাহলে মাথা তুলে দাঁড়ানো আর হবে না। শিরদাড়া শক্ত করে দৃঢ় মনেবল নিয়ে চলতে হবে এবং বলতে হবে “আমি নারী তাই আমি গর্বিত”। ইতিহাসও কিন্তু আমাদের বারংবার সেটাই শিক্ষা দেয়। তাই আবারো উচ্চারন করি “নারী তুমি জাগো – জাগাও”।