পরিচ্ছন্ন রাজশাহীর প্রত্যয়ী তারুণ্য
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম ও শামীউল আলীম শাওন
পৃথিবীর নির্মল বাতাসের শহর রাজশাহী। রাজশাহীকে বলা হয় গ্রীনসিটি। কিন্তু দিনে দিনে সবুজের এই শহর যেমন তার সবুজ হারিয়ে ফেলছে। তেমনি হারাচ্ছে তার রাস্তা ঘাটের পরিচ্ছন্নতা। এখন রাস্তার পাশ দিয়ে চলতেই কখনো কখনো ভেসে আসে ময়লার উৎকট গন্ধ। আবার রাস্তায় পড়ে থাকা বিভিন্ন পলিথিন, কাগজ আর বিভিন্ন ফলমুলের খোসাসহ নানা আবর্জনায় ভরে থাকে সুন্দর রাস্তাগুলো। ফলে ধুলি আর ময়লা জমতে জমতে তা যেমন গন্ধ ছড়ায় আবার বাতাসে এই ময়লা এবং বিষাক্ত ধুলিকণার কারণে রোগবালাই বেড়ে যাচ্ছে। শহরের মানুষদের শ্বাস প্রশ্বাস এবং চর্মরোগ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। কিন্তু কেন এই সমস্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে? শুধু কি সিটি কর্পোরেশেনের কারণে? আমি বলবো না! কারণ সিটি কর্পোরেশন তথা সরকার নানাভাবেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে শহরকে ভালো রাখার, পরিচ্ছন্ন রাখার। কিন্ত খেয়ালি এবং অগোছালো আনভোলা মন কখনো নিজের দায়িত্বটির কথা মনে করেনা।
আমরা শুধু কথা বলতে বেশি পছন্দ করি। আমরা শুধু অন্যের দোষ ধরতে বেশি কথা বলি। নিজের দায়িত্বটুকু যদি নিজে বুঝে নিয়ে এগিয়ে চলি সবখানে সব জায়গায় তাহলে আমাদের কোন কিছুতেই কোন সমস্যা হতো না। দেশ এগিয়ে যেতো আরো ভীষণ গতিতে। আর আমাদের শহরটাও থাকতো আরো পরিচ্ছন্ন আর সবুজে। রাস্তার পাশে চলতে আমরাই বিস্কিকিটের প্যাক, কলার ছোলাসহ এরকম আরো কতো আবর্জনা নিজেরাই ফেলে দেই। কোন খেয়ালই করিনা যে সেগুলো আবর্জনা তৈরি করবে বা তা থেকে দূষণ ছড়িয়ে পরিবেশসহ মানুষের ক্ষতি করবে। তারুণ্য শুধু চেয়ে দেখেনি কখনো। তারুণ্য সমস্যা দেখতে দেখতে একসময় কথা বলার চেষ্টা করে। তারুণ্য সমস্যার মধ্যেই সমাধান খোজার চেষ্টা করে। তারুণ্য সবাইকে সাথে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। তারুণ্য সমাধান করে যৌথ এবং সমন্বয়ের মধ্যে দিয়ে। তাই রাজশাহীর তরুণরাও তাদের শহরকে বর্তমান সংকট থেকে উত্তোরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। নিজেরাই শুধু নয় তারা স্থানীয় প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, স্থানীয় নির্বাচিত নেতা, দোকানদার, চাকরিজীবীসহ নানা শ্রেণীর ও পেশার মানুষদের সাথে নিয়ে পরিচ্ছন্ন রাজশাহীর প্রত্যয়ে প্রচারাভিযানে নেমেছেন। মানুষকে সচেতন করছেন। নিজের পরিষ্কার, নিজের দায়িত্ব তা স্মরণ করে দিচ্ছেন।
এরই লক্ষ্যে গতকাল বুধবার (২৮ মার্চ) ‘সবাই মিলে শপথ করি, পরিচ্ছন্ন রাজশাহী গড়ি’ এই প্রত্যয়ে রাজশাহীর তরুণরা মহানগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়স্থ মিন্টু চত্বরে (ল´ীপুর পুলিশ বক্সের সামনে) ‘শহর আমার, দায়িত্বও আমার’ শীর্ষক পরিচ্ছন্ন প্রচারাভিযানের যাত্রা শুরু করেন। উক্ত প্রচারভিযানের শুভ উদ্বোধন করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) আমির জাফর। এসময় উপস্থিথ ছিলেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম, রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন বিভাগের পরিদর্শক রেজাউল করিম, তরুণ সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’ এর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক শামীউল আলীম শাওন, ভঙ্গী নৃত্য শিল্পালয়ের পরিচালক রবিন শেখ, প্রথমআলো বন্ধু সভা বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ইসরাত জাহান রিয়া, তরুণ চলচিত্র নির্মাতা আমির উৎস খান, সূর্য কিরণ রক্তদান সংস্থা, স্পর্শ স্বেচ্ছায় রক্তদান সংস্থাসহ স্থানীয় বিভিন্ন তরুণ সংগঠনের ৩৫ জন তরুণ প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন। এছাড়াও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের চারজন পরিচ্ছন্ন কর্মী চারটি ভ্যান নিয়ে এই প্রচারভিযানে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করেন।
রাজশাহীর একদল তরুণ পরিচালিত সামজিক সংগঠন ‘ইয়ুথ এ্যাকশন ফর সোস্যাল চেঞ্জ-ইয়্যাস’ এবং বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিক যৌথভাবে এ পরিচ্ছন্নতা প্রচারাভিযানের আয়োজন করে। রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর মোড়, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর, ঘোষপাড়া মোড়সহ নগরীর বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তারা এ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। এই প্রচারাভিযানের মধ্যে দিয়ে তরুণরা তাৎক্ষণিকভাবে এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বর্জ্য নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্য জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার জন্যে জনগণ এবং পথচারিদের সাথে কথা বলেন। তরুণদের সাথে স্থানীয় পথচারি এবং দোকানদরগণও এই প্রচারাভিযানে অংশগ্রহণ করেন। পথ সভার এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার (পশ্চিম) আমির জাফর বলেন, “আমরা একটু সচেতন হলেই আমাদের গ্রীনসিটি খ্যাত রাজশাহী সবসময় পরিচ্ছন্ন থাকবে, আমদের রাস্তার এবং আশপাশে যে ময়লা ফেলার জায়গা আছে সেখানেই সবসময় ময়লা ফেললে রাস্তাগুলো আর আবর্জনায় ভরে উঠবে না।” তিনি সকল শ্রেণীর ও পেশার মানুষকে নিজের ময়লাটি নিদিষ্ট স্থানে ফেলার জন্যে আহবান করেন।