পানি উন্নয়ন বিভাগের নজরে আসলো নুরানী গঙ্গা নদী
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে শাহীনুর রহমান।
বরলধারা ইউনিয়নের নুরানী গঙ্গা নদী খননের জন্য সম্প্রতি সরজমিনে পরিদর্শন করেছেন পানি উন্নয়ন বিভাগের কর্মকর্তাবৃন্দ। পানি উন্নয়ন বিভাগের উপসহকারি প্রৌকশলী (পুর) কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান ও কার্য সহকারি মোঃ লালচান মিয়া এই পরিদর্শনে অংশগ্রহণ করেন। নুরানী গঙ্গা নদী খননের যতার্থতা যাচাইয়ের জন্য নদীর উৎসমুখ মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের পালড়া থেকে বলধারা ইউনিয়নের সোলাই, বাংগালা ও চারিগ্রাম ইউনিয়নের জাইল্লা পর্যন্ত বিভিন্ন স্থানে এলাকার জনগোষ্ঠীর সাথে মত বিনিময় করেন।
নদীর স্থান পরিদর্শন ও মতিবিনিময় সভায় সহযোগিতা করে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বারসিক। মতবিনিময়ে অংশগ্রহণ করেন ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুভাষ মন্ডল, নির্বাহী সদস্য আব্দুল হালিম, যুবকল্যাণ উন্নয়ন সংঘের সভাপতি মোঃ শামীম আহমেদ, সহ সভাপতি মোঃ জুনায়েদ জিয়া, সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোঃ মিরাজ, ক্রীড়া বিষয়ক সম্পদক মোঃ নাইম হোসেন, সদস্য সাকিব হোসেন, রুবেল হোসেন, সামাজিক ব্যক্তিত্ব মোঃ বাদশা মিয়া, জাইল্লা গ্রামের রাদেশাম রাজবংশী, বারসিক কর্মকর্তা শিমুল বিশ^াস, গাজী শাহাদাত হোসেন বাদল, শাহীনুর রহমান ও সংগঠনের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ।
মতবিনিময় সভায় মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগের উপসহকারি প্রৌকশলী (পুর) কর্মকর্তা শাহিনুর রহমান বলেন, ‘পানির অবাধ প্রবাহ নিশ্চিতকরণ ও প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণে সরকারের পানি উন্নয়ন বিভাগ বদ্ধপরিকর। তাছাড়া প্রাণ, প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষায় জলজ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় বর্তমান সরকার নদী, নালা, খাল ও বিল খননের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা নুরানী গঙ্গা নদী সরজমিনে পরিদর্শন ও আপনাদের সাথে আলোচনা করতে এসেছি। আমারা পরিদর্শন কার্যক্রম শেষে মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়ন, পুটাইল ইউনিয়ন ও বলধারা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান এর সাথে আলোচনা করে নদীটি খননের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।’
বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নয়ন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, ‘নুরানী গঙ্গা সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের একটি নদী। মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার বেতিলা মিতরা ইউনিয়নের পালড়া হচ্ছে এই নদীর উৎস মূখ। এছাড়া সদর উপজেলার পুটাইল ইউনিয়নের কৈতরা, সিংগাইর উপজেলার বলধারা ইউনিয়নের কুইচার টেক ব্রী-কালিয়াকৈর, বাংগালা, চড়মগড়া, গোলাইডাঙ্গা, নলগোলা, খোয়ামুড়ী ও চারিগ্রাগ্রাম ইউনিয়নের জাইল্লা এসে প্রবেশ করে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ সকল গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ কৃষি কাজের সাথে জড়িত এবং কৃষি তাদের প্রধান পেশা। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণ ও নদীটি ভরাটের ফলে গ্রামের মানুষের কৃষি কাজে সেচের পানি ব্যবহার করতে ইঞ্জিনিচালিত মেশিন ব্যবহার করতে হচ্ছে। এতে করে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে এবং পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। তাই কৃষকের উৎপাদন খরচ কমাতে ও পানির প্রাকৃতিক আধার রক্ষায় নদীটি খনন করা হলে কৃষকের উপকার হবে।’ যুবকল্যাণ উন্নয়ন সংঘের সভাপতি শামীম আাহমেদ বলেন, ‘নুরানী গঙ্গা নদীটি আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে ওতপ্রোতো ভাবে জড়িত। এই নদীর গোলাইডাঙ্গা নামক স্থানে ১৯৭১ সালে ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল। সেই যুদ্ধে মুক্তবাহিনীর হাতে ৮১ জন পাক সেনা নিহত হয়। বর্তমানে সেখানে মুক্তযুদ্ধের স্মৃতি মিনার তৈরি হয়েছে। তাই বাঙালি জাতির স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস ঐতিহ্য রক্ষায় এই নদীটি খনন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’
উল্লেখ্য, নুরানী গঙ্গা নদী খনন এলাকাবাসীর প্রাণের দাবি। কেননা এই নদীটি এলাকার কৃষি প্রতিবেশ রক্ষায় যেমন গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করে তেমনি এই নদীটি মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের স্বাক্ষ্য বহন করে। সেই প্রেক্ষিতে গত ১লা ডিসেম্বর ২০২২ বলধারা ইউনিয়ন কৃষি উন্নযন কমিটির উদ্যোগে বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা বারসিক’র সহায়তায় মানিকগঞ্জ পানি উন্নয়ন বিভাগ ও জেলা প্রশাসক বরাবর মুক্তিযুদ্বের স্মৃতি বিজড়িত নূরানী গঙ্গা নদী সংরক্ষণ ও খনন বিষয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন। ফলে নদীটি খননের যথার্থতা যাচাই করতে পরিদর্শন করে পানি উন্নয়ন বিভাগ।