মনোরমা আজিম আগের তুলনায় আরও বেশি সবজি চাষ করতে পারছেন

মনোরমা আজিম আগের তুলনায় আরও বেশি সবজি চাষ করতে পারছেন

কলমাকান্দা নেত্রকোনা থেকে আল্পনা নাফাক
মনোরমা আজিম নেত্রকোণা জেলার কলমাকান্দা উপজেলার খারনৈ ইউনিয়নের বিশ্বনাথপুর গ্রামের বাসিন্দা। বয়স ৫৪ বছর। তিনি তিন সন্তানের জননীী। ২ মেয়ে এক ছেলে। ছেলের বিয়ে হয়েছে। ২ মেয়ে এখনো অবিবাহিত। বড় মেয়ে সিলেটে চাকুরি করে এবং ছোট মেয়ে ঢাকায় চাকুরি করে। এখন পরিবারে স্বামী ও স্ত্রী মিলে দুইজনের পরিবার।


মনোরমা আজিম একজন কাজ পাগল মানুষ। তাই সে নিজের বসতবাড়ির আঙ্গিনায় যেটুকু জমি আছে সেগুলো বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জি ও ফলের চাষ করেছেন। তিনি পারিবারিকভবে পুষ্টি চাহিদা পুরণ করেও বাজারে শাকসব্জি বিক্রি করেন। কিন্তু সেচের ব্যবস্থা না থাকার কারণে মনোরমা আজিম এর কাজের বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল। শুকনো মৌসুমে অনেক কষ্ট করে স্বামী ও স্ত্রী মিলে শাকসব্জির বাগানে সেচের ব্যবস্থা করতেন। অথচ একটি সেচ যন্ত্র/মেশিন থাকলে তার এই কাজে অনেক সুবিধা হতো এবং তার কাজটি আরো গতিময় হয়ে উঠতো। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বারসিক’র সহযোগিতায় মনোরমা আজিমকে একটি সেচের মেশিন/মটার প্রদান করা হয় তাঁর এই কাজকে আরো গতিশীল করার জন্য। ফলে তার শাকসব্জি চাষ করার গতি আরো বেড়ে যায়।


মনোরমা আজিম বলেন, ‘আমার এই সেচের মেশিন পাওয়াতে অনেক উপকার হয়েছে। আমি আমার এ্ই কৃষি কাজকে আরো ভালোভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছি। আমি সারাবছর শাকসব্জির চাষ করি। নিজের জন্য এবং বিক্রি জন্য। সব সময় আমি শাকসব্জি ফলমূল বিক্রি করি। কখনো বাড়িতে আবার কখনো বাজারে নিয়ে গিয়ে আমি এসব শাকসব্জি ও ফলমূল বিক্রি করে থাকি। আমি সম্পূর্ণ জৈব উপায়ে শাকসব্জি উৎপাদন করে থাকি। শাকসব্জি চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষা করার জন্য জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করি।’
মনোরমা আজিম আরও বলেন, ‘আমি শাকসব্জি বিক্রি করে অন্ততপক্ষে প্রতিমাসে ২/৩ হাজার টাকা আয় করি। পূর্বের চেয়ে এখন বেশি উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে সেচ ব্যবস্থা থাকার কারণে। কারণ এখন আমি প্রয়োজনে সেচের ব্যবস্থা করতে পারি। আমি আমার পুকুরের পানি দিয়ে মটার স্থাপন করে শাকসব্জিতে সেচের ব্যবস্থা করি। সেচের ব্যবস্থা থাকায় এখন আমার মাসে কম পক্ষে ৫ হাজার টাকা আয় হয়। আমার শাকসব্জি খেতে অনেক সুস্বাদু ও নিরাপদ। তাই সবাই নিতে আসেন আমার বাড়িতে। বাড়িতে এসে নিজের পছন্দমত শাকসব্জি কিনে নিয়ে যান স্থানীয়রা।’


প্রতিবেশী মরিয়ম বেগম বলেন, ‘আমি সব সময় মনোরমা আজিমের কাছ থেকে শাকসব্জি কিনি। বাজার থেকে আনতে অনেক সময় লাগে। আর বাজারের শাকসব্জি খেতে ভালো লাগে না। রান্নার সময় হলে তার কাছ থেকে সব্জি কিনে নিয়ে যায়। তাছাড়া তিনি বাজারের থেকেও কম দামে বিক্রি করেন। এখন তাঁর সুবিধা হয়েছে কৃষি কাজ করার জন্য। আগের তুলনায় এখন বেশি করে শাকসব্জি চাষ করছেন এবং বিক্রি করছেন।’


প্রতিবেশী স্মৃতি হাউই বলেন, ‘মনোরমা আজিম সবসময় শাকসব্জি চাষ করেন এবং বাজারে বিক্রি করেন। অনেক সমায় তিনি অন্যদের মাঝেও বিতরণ করেন। তার নিজের উৎপাদিত শাকসব্জি আমরাও সবসময় তার কাছে নিয়ে থাকি। অনেকসময় বাড়ি থেকে আবার অনেক সমায় বাজার থেকে। তিনি জৈব উপায়ে নিরাপদ খাদ্য উৎপাদন করেন এবং বিভিন্ন ধরণের শাকসব্জি উৎপাদন করেন। যার কারণে নিজের পছন্দমত শাকসব্জি কিনতে পারি। সেচের মেশিন পাাওয়ার পর থেকে তাঁর কাজের গতি আরো বেড়েছে। তিনি প্রতিদিন কোন না কোন শাকসব্জি ও ফল বাজারে বিক্রি করতে পারছেন।’


মনোরমা আজিম বলেন, ‘আমি আদিবাসীদের শাকসব্জি যেমন ফানেট (সাদা তুলশী) খিমখা (তিতবেগুন) আলট(লাল বাসক) চুকাই ইত্যাদি চাষ করি ও বিক্রি করি। যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো না হওয়ায় আমি আদিবাসীদের খাবার ঢাকায় নিতে পারছি না। এই খাবারগুলো ঢাকায় অনেক চাহিদা রয়েছে। যোগাযোগ ভালো হলে ঢাকায় নিয়ে বিক্রি করবো। এখনো আমি আমার এই কাজের টাকায় বড় ধরণের কাজ করতে পারিনি। তবে এই শাকসব্জির টাকায় অন্য চাহিদা পূরণ করতে পারছি। আশ করি ভবিষ্যতে ভালো কিছু করতে পারবো।’

happy wheels 2

Comments