হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম-বাংলার “প্রাচীন ঐতিহ্য পলো বাইচ”
মানিকগঞ্জ থেকে আব্দুর রাজ্জাক
খাল বিল, চক ও নদী নালায় দলবদ্ধ হয়ে পলো দিয়ে মাছ ধরা গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য বহু প্রাচীন। বাঙালির সেই ঐতিহ্যেও রেশ ধরে সম্প্রতি মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়ে পলো বাওয়ার ধুম লেগেছে। মুখে-মুখে, হাট-বাজারে ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ও মাইকে ঘোষণা দিয়ে শৌখিনদার মৎস্য শিকারীরা পলো নিয়ে ছুটে চলেছেন কালীগঙ্গা নদী ঘেঁষা চরাঞ্চলে, বিভিন্ন বিলে ও চকের হাঁটু জলাশয়ে।
জানা যায়, চলতি শুস্ক মৌসুমে উপজেলার কালীগঙ্গা ও পুরাতন ধলেশ্বরী নদীর ভাটি এলাকার কম পানির কুম, বানিয়াজুরীর তরা, নালী, শোলধারা, দিয়াইল, ঘিওরের মাইলাঘী, বরটিয়া চকে রয়েছে হাঁটু থেকে কোমর অবধি পানি। আর এসব জলমহালে সাপ্তাহিক ছুটির দিনসহ প্রায় প্রতি দিনই চলছে পলো দিয়ে মাছ ধরার ধুম। সম্প্রতি বানিয়াজুরীর রাথুরা চকের জলাশয়ে সরেজমিনে দেখা যায়, দেশীয় প্রজাতির মাছের মধ্যে শোল, বোয়াল, কার্ফু, রুই কাতলা মাছ পলোতে বেশি আটকা পড়ছে। কেউ কেউ আবার ছোট আকৃতির মাছও পাচ্ছেন। রাথুরা গ্রামরে ইসলাম খান বলেন, “শখের বশে পলো বাইতে আসছি, একটি বোয়াল মাছ পাইছি।” আরেক মাছ শিকারি নূরুল ইসলাম পেয়েছেন বড় আকৃতির একটি বোয়াল ও দুটি কার্ফু মাছ। পলো বাইচে অংশ নেওয়া আকাশ আহমেদ রফিক, প্রবীণ আফসার আলী, চিত্ত দাস, মো. রবিনসহ আরো অনেকে জানান, পলো বাইচ দিয়ে মাছ শিকার করার মজাই আলাদা। কারো পলোর নিচে একটি মাছ পড়লে সবাই ঝাকর (চিৎকার) দিয়ে সেই মাছটি ধরতে সবাই সহযোগিতা করেন। পলো বাইচে আশপাশের কয়েক ইউনিয়ন ছাপিয়ে অন্য জেলা থেকেও মানুষজন পূর্ব ঘোষিত দিনে অংশগ্রহণ করে। শত-শত মানুষ পলো নিয়ে মাছ ধরার আনন্দে মেতে উঠেন।
এদিকে বাইচে অংশ নিতে বিভিন্ন বয়সী মানুষ পলো কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন। অন্য সময় সাধারণ একটি পলো ১৫০/২৫০ টাকা বিক্রি হয়ে থাকে। কিন্তু বাইচের সময় তিনগুণ বেশি দাম দিয়েও পলো কিনতে কাড়াকাড়ি লেগে যায়। ঘিওরের বানিয়াজুরী বাসষ্ট্যান্ডে পলো বিক্রেতা অনীল বাবু বলেন, “বাইচের আগের দিন ১০০ পিচ পলো নিয়ে আসছি। এক ঘণ্টার মধ্যেই সব শেষ। দামও পেয়েছি ভালোই।” পলো ছাড়াও পাতি জাল, টান জাল, ধর্ম জাল ইত্যাদি নিয়ে জড়ো হন সাধারণ মানুষ। এক সাথে সবাই নেমে পড়েন মাছ শিকারে। তবে আগের মতো দেশীয় মাছ এখন পাওয়া যায় না এমন অভিযোগ করলেন বাইচে অংশ নেওয়া অনেকে। বহু বছর ধরে চলে আসা এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে চান স্থানীয় লোকজন।
স্থানীয় বানিয়াজুরী ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাসেম চতু জানান, বহুদিন ধরে চলে আসা এ পলো বাইচকে ঘিরে আশপাশের গ্রামের লোকজনের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দেয়। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।