অবহেলিত মানকচু: কালাসোনা চরবাসীর দূর্যোগকালীন খাবার
গাইবান্ধা থেকে অমৃত কুমার সরকার
প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো বিভিন্ন ধরনের গাছপালার মধ্যে বাড়ির আনাচে-কানাচে, অযন্ত, অবহেলায় বেড়ে ওঠা অচাষকৃত মানকচু (Giant taro) গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার কালাসোনা চরবাসীর বন্যা দূর্যোগে একটি অতি অবশ্যকীয় খাবার।
চরের নারীরাও অন্য এলাকার মতো পরিবারের খাদ্য প্রস্তুতি ও মজুদে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। চরের নারীরা ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বসত বাড়ির ছায়াময় স্থানে বেড়ে ওঠা এই মানকচু সংগ্রহ করে এর মূল (corm) কেটে উপরের আবরণ ছাড়িয়ে টুকরো টুকরো করে পরিষ্কার পানিতে ভালো করে ধুয়ে কুলা বা চটের বস্তার ওপর রেখে ৬-৭ দিন রোদ দিয়ে ভালো করে শুকিয়ে নেন। এরপর শুকনো টুকরাগুলো বায়ুরোধী বয়াম, কন্টেনার বা চিনের কৌটায় ভরে রাখেন। এরপর বর্ষা মৌসুমের আগেই শুকনো টুকরাগুলো ঢেঁকীতে কুটে গুড়ো বানিয়ে প্লাস্টিক বা কাঁচের বয়ামে সংরক্ষণ করা হয়। আবার কখনো গুড়ো না করে শুকনো টুকরো মানকচু বায়ুরোধী পাত্রে রাখা হয়। এইভাবে বায়ুরোধী পাত্রে রাখলে গুঁড়ো বা শুকনো মানকচু প্রায় একবছর পর্যন্ত ভালো থাকে এবং স্বাদের কোন পরিবর্তন হয় না।
বর্ষা মৌসুম বা বন্যার সময় চরাঞ্চলে ফসল ও শাক-সবজির চাষাবাদ করা দূরূহ হওয়ায় তরিতরকারীর প্রাপ্যতা অনেক কমে যায়। এ সময় শুকনো বা গুঁড়া মানকচু খাবার হিসাবে বেশি ব্যবহৃত হয়। গুঁড়ো মানকচু ডালের মতো করে রান্না করা হয়। শুকনো মানকচু ভাজি বা ছোট মাছের সাথে রান্না করা হয়। তবে শুকনো মানকচু রান্নার আগে প্রায় ২০-২৫ মিনিট পানিতে ভিজিয়ে রেখে নরম করে রান্না করলে তাড়াতাড়ি সিদ্ধ হয়। তবে শুকনো মানকচুর চেয়ে গুড়া মানকচু বেশি সুস্বাদু। চরবাসীর মতে, গুঁড়ো মানকচু ডাল দিয়ে রান্না করে খেলে হাত ও পায়ের গীট ফোলা, শরীরে পানি জমা, রসবাত ও ব্যথা সেরে যায়। কেউ কেউ বলেন, গুড়ো মানকচুর ডাল স্থানীয় জাতের গড়িয়া ধানের ভাত দিয়ে খেলে আমাশয় রোগ নিরাময় হয়।
চর এলাকায় প্রতিবছর বন্যা ও নদী ভাঙনের মত ভয়াবহ দূর্যোগে অচাষকৃত মানকচু দূর্দশাগ্রস্ত মানুষের খাদ্য ও পুষ্টি চাহিদা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। চরাঞ্চলেও বর্তমানে প্রাকৃতিকভাবে জন্মানো এই সব উপকারী উদ্ভিদ প্রজাতি নদী-ভাঙন, বন্যা মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহারে ক্রমশ বিলুপ্তির পথে। এখনই উদ্যোগ না নিলে দূর্যোগের সময় চর এলাকার মানুষের এই সব প্রাকৃতিক খাদ্য উৎস আরও সংকুচিত হবে একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়।