নাছিমা বেগমের স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প

মানিকগঞ্জ সিংগাইর থেকে রিনা আক্তার

মানুষের জীবনে সুখ-দুঃখ, হাসি -কান্না, আনন্দ-বেদনা সব কিছুই বিরাজমান। অন্ধকার যেমন না থাকলে আলোর মূল্যায়ন হতো না, ঠিক তেমনি দুঃখ না থাকলেও সুখের মূল্যায়নও হতো না। সুখ আর দুঃখ নিয়েই মানুষের জীবন। এমনই এক অসহায় নারী নাছিমা বেগম(৪৫)। মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর উপজেলার বিনোদপুর গ্রামের নি¤œবিত্ত পরিবারের গৃহবধূ নাছিমা বেগম। তাঁর স্বামীর নাম মৃত: আবুল হাশেম। তিনি তিন ছেলের জননী বড় ছেলের নাম মানিক মিয়া (২৬)। সে বর্তমানে সৌদি প্রবাসী, মেঝো ছেলের নাম রতন মিয়া (১৮)। সে রং মিস্ত্রি আর ছোট ছেলের নাম সোহেল রানা (১৬), সে গোবিন্দল ঘোনাপাড়া উচ্চ বিদ্যালযের ১০ম শ্রেণীতে পড়াশুনা করে।


নাছিমা বেগম তেমন লেখাপড়া করার সুযোগ পাননি। খুব অল্প বয়সেই তাঁর বিয়ে হয়। স্বামীর সংসারে আসার পর তিনি আগের চাইতে আরো বেশি অসহায় হয়ে পড়েন। তার স্বামী কৃষি কাজ করতেন। তাদের সামান্য পরিমাণ জমি ছিল। তিনি যা আয় করতেন তাই দিয়েই অনেক কষ্টে দিন পার করতেন। ্এমনই অনেক দিন গেছে তিনি না খেয়েই কাটিয়ে দিয়েছেন। সন্তানদের নিয়ে তিনি খুব কষ্টে দিনাতিপাত করেন। এমনকি অর্থাভাবে ছেলেদেরও স্কুলে ভর্তি করতে পারেননি।


নিজের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তাই তিনি উপায় খুঁজতে থাকেন। এক পর্যায়ে তার বাড়ির আঙ্গিনায় বিভিন্ন ধরনের সবজি (যেমন: চালকুমড়া, লাউ, করলা, মরিচ, বেগুন, ঢেড়স ইত্যাদি) চাষ চাষ করতে শুরু করেন। পাশাপাশি তিনি কিছু হাঁস- মুরগি পালন করা শুরু করেন। সবজি বিক্রি ও ডিম বিক্রি করে তিনি সঞ্চয় করতে শুরু করেন।


এক পর্যায়ে তিনি তার এলাকায় একটি দোকান করেন। নানান প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে তিনি এই দোকান দেন। পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য তিনি এ দোকান দেন। সেই দোকানে প্রথম অবস্থায় বাচ্চাদের চকলেট, বিস্কুট, আচার, চানাচুর, চিপস, ইত্যাদি তুলেন। তিনি একদিকে যেমন সংসারের অর্থাৎ তার নিজের উঠানের বাগানের সবজি বিক্রি করে কিছু টাকা আয় করছেন অন্যদিকে তার দোকান থেকেও কিছু টাকা ্্্উপার্জিত হচ্ছে। এভাবে ধীরে ধীরে তিনি স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে শুরু করেন। এখন তার ভালো অবস্থা দেখে আরও কেউ কটুক্তি করে না।


নিজের প্রচেষ্টা ও মনোবলে কারণেই সমাজে নাসিমা বেগম এখন বোঝা নয়; অনেকের জন্য উদাহরণ। তিনি আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতে চান। তার মতো সকল নাসিমা বেগম যখন আত্মমর্যাদার লড়াই করবেন তখন অবশ্যই আমরা নারীবান্ধব সমাজ দেখতে পাব বলে আমরা মনে করি।

happy wheels 2

Comments