খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি ও খাদ্য নিরাপত্তায় প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ
রাজশাহী থেকে শহিদুল ইসলাম
খরা প্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের পানি নিরাপত্তায় প্রয়োজন মাল্টিসেকটোরাল এপ্রোচে সমন্বিত উদোগ। পানি, কৃষি, স্যানিটেশন, পরিবেশ নিয়ে যেসকল ডিপার্টমেন্ট কাজ করেন তাদের মধ্যে নেই কোন সমন্বয়। সমন্বয়হীনতার কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলে পানি নিরাপত্তার জন্য যেসকল প্রকল্প গ্রহণ করা হয় সেগুলো অনেক সময় জনগণের উপকারে আসে না।
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিনস কমপ্লেক্স সেমিনার হল রুমে-Seminar on Challenges & Adaptation for Water & Food Security(পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা জন্য চ্যালেঞ্জ এবং অভিযোজন ) বিষয়ক সেমিনারে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের জিওলোজি ও মাইনিং ডিপার্টমেন্টের অধ্যাপক চৌধুরী সারোওয়ার জাহান উক্ত বিষয়ে তার গবেষণা এবং পর্যবেক্ষিত তথ্য উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ‘পানি সম্পর্কিত আইনসহ যে আইনগুলো তৈরি করা হয় সেসব আইনে জনমানুষের ভয়েস ফোকাস নেই বলে আইনগুলো বাস্তবায়ন হয় না।’ তিনি পরামর্শ দেন আইনগুলোও তৈরি করতে হবে স্থানীয় এলাকা এবং প্রতিবেশসহ জনগোষ্ঠীর চাহিদা বিবেচনায়।
উক্ত সেমিনারটি যৌথভাবে আয়োজন করেন বারসিক ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ সংগঠন নবজাগরণ ফাউন্ডেশন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন নবজাগরণ ফাউন্ডেশনের সভাপতি এনামুল ইসলাম তুহিন। এরপর লোকায়ত বিজ্ঞান, অভিযোজন, জলবায়ু পরিবর্তন এবং বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চলের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চলের সমন্বয়কারী শহিদুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে যেসব ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে তা যথাসম্ভব কমিয়ে আনতে এবং অবস্থার সাথে খাপ খাইয়ে নেবার প্রধানতম কৌশল হচ্ছে অভিযোজন। এই অভিযোজন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় মানুষ তাঁর লোকায়ত জ্ঞান কাজে লাগাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দিনে দিনে যে হারে আমাদের প্রাণবৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক, সাংস্কৃতিক সম্পদ কমে যাচ্ছে সেই কারনে জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজন ক্রিয়ায় স্থানীয় জনগোষ্ঠী ঝুঁকির মধ্যে পড়ছে।’ তিনি এসডিজি গোলের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে স্থানীয় প্রাণবৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক সম্পদসহ জনমানুষের সাংস্কৃতি রক্ষার কথা বলেন।
উল্লেখ্য যে, খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চলের প্রধান সমস্যা খরা। জলবায়ু পরিবর্তনের আঞ্চলিক অভিঘাতসহ কিছু উন্নয়ন পদক্ষেপের কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিনে দিনে কমে যাচ্ছে। যার ফলে বরেন্দ্র অঞ্চলে বিভিন্ন প্রাকৃতিক জলাধারসহ প্রাণবৈচিত্র্য সংকটাপন্ন। পানি নির্ভর প্রচুর পরিমাণে ধান উৎপাদন হলেও এই অঞ্চল উপযোগী পানি সাশ্রয়ী শস্য ফসলের আবাদ কমে যাচ্ছে। তবে বর্তমান সময়ে সরকারি এবং বেসরকারি উদ্যোগে পানি সাশ্রয়ী শস্য ফসলের চাষাবাদেও উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। তবে প্রয়োজনের তুলনায় কম। একই সাথে প্রাকৃতিক জলাধারগুলো সুরক্ষা করা খুবই জরুরি। প্রাকৃতিক জলাধারগুলো দখল দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া দরকার।