‘পরিবেশ, প্রকৃতি রক্ষা করেই আমরা ভালো থাকতে চাই’
ঘিওর, মানিকগঞ্জ থেকে সুবীর কুমার সরকার, শ্যাময়েল হাসদা ও আল্পনা রানী সরকার
জয়নগর কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্রে সবুজ সংহতি ও বারসিক’র যৌথ আয়োজনে কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা, জলবায়ু ন্যায্যতা ও খাদ্য সার্বভৌমত্ব বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কর্মশালায় অবসরপ্রাপ্ত সহকারি শিক্ষক মোঃ হোসেন আলীর সভাপতিত্বে বারসিকের সহযোগী কর্মসূচি কর্মকর্তা সুবীর কুমার সরকার সবুজ সংহতির ধারণাপত্র পাঠ করেন।
কর্মশালায় ইউপি সদস্যকামনা রানী সরকার বলেন, ‘আমরা অধিক লাভের আশায় জমিতে কীটনাশক ব্যবহার করি যার ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে, উপকারী পোকামাকড় যাচ্ছে এবং মানুষেরও অনেক রোগ (কিডনি, ক্যান্সার, ডায়বেটিস) আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের বাঁচতে হলে সামাজিক সচেতনতা ও আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’
অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক মোঃ হোসেন আলী বলেন, ‘রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার করলে মাটি, পানি বায়ু দূষিত হয় যা এই তিনটি উপাদন ছাড়া আমরা চলতে পারবো না। পরিবেশ নষ্ট করা মানে মানুষসহ সকল প্রাণীর ক্ষতি ডেকে আনা। গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে গবাদিপ্রাণি আছে। গোবর ও বাড়ির উছিস্ট গর্ত করে রেখে জৈব সার তৈরি করে জমিতে দিলে জমি উর্বর হয়। এবং কীটনাশকের পরিবর্তে আমরা বিভিন্ন জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করতে পারি। তাহলে আমাদের পরিবেশও ভালো থাকবে এবং নিরাপদ খাবার পাবো।’
পারুল সূত্রধর বলেন, ‘আমাদের এই এলাকায় অনেক আমন ধান চাষ হতো কিন্তু এখন পানির অভাবে আমন ধান চাষ কম হয়। আগে ঋতুভিত্তিক বিভিন্ন ফসল চাষ করতাম এখন সব হারিয়ে গেছে। নদী আগের মতো মাছ নাই। আমরা আগের মতো আমন ধান চাষ করতে চাই, নদীতে মাছ ধরতে চাই, পরিবেশ প্রকৃতি রক্ষা করতে চাই আমরা ভালো থাকতে চাই।’
সৈয়দ আল আজাদ বলেন, ‘প্রকৃতি পরিবেশ সুরক্ষায় আমাদের সচেতন ও সংঘবদ্ধ হতে হবে। বাড়ির আশেপাশে, রাস্তার ধাড়ে ফলজ, বনজ ও ঔষুধি গাছ বেশি বেশি রোপণ করতে হবে। পশু পাখি মারা বন্ধ করতে হবে। রাসায়নিক ও কীটনাশক বাদ দিয়ে জৈব কৃষি চর্চা করতে হবে। নদী দখল ও দূষণ বন্ধ করতে হবে। তাহলে আমাদের প্রাণ প্রকৃতি রক্ষা পাবে।’
এর আগে বারসিক কর্মকর্তা মোঃ মুক্তার হোসেন কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা, খাদ্য সার্বভৌমত্ব ও জলবায়ু ন্যায্যতা সম্পর্কে আলোচনা করে বলেন, কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা শিখন কেন্দ্র হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর চর্চা কৃষিবাড়ি। ভার্মিকম্পোস্ট ও গর্ত কম্পোস্ট তৈরি, স্থানীয় বীজ সংরক্ষণ ও গ্রামের অন্য কৃষকের সাথে বীজ বিনিময় করবে। আঙ্গিনা, আশেপাশে পতিত জমিতে স্থানীয় সবজি ও ফল গাছ এবং ঔষুধি গাছ থাকবে। হাঁস-মুরগি, গরু, ছাগল পালন করবে। কৃষি রাসায়নিক নির্ভরতা কমিয়ে ঔষধি গাছ দিয়ে জৈব বালাইনাশক ব্যবহার করবে। এ চর্চাগুলো করতে পারলেই আমরা ভাল থাকবো।’