‘আগের চেয়ে বেশ ভালো আছি’

সাতক্ষীরা থেকে ফাতিমা আক্তার
তাসলিমা খাতুন। স্বামী আবু শামা। গ্রাম-দাতিনাখালী। পরিবারের স্বামী ও স্ত্রী মিলে দুইজন। স্বামী শারীরিকভাবে অক্ষম একজন ব্যক্তি। কিছুদিন আগেও তাসলিমা খাতুনের পরিবারের দিনগুলো খুবই কষ্টে কাটতো। সংসারের ভার অনেকটাই ছিল তাসলিমা খাতুনের উপর। তিনি দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালাতেন। তাঁর স্বামী আবু শামা মাঝে মাঝে নদীতে যেতো মাছ ধরার জন্য, সাথে তাসলিমা খাতুনের থাকতে হতো সাহায্য করার জন্য। একা আবুশামা কোন কাজ করতে পারেন না।


তাসলিমা খাতুন এর দুই ছেলে একমেয়ে। মেয়েটাকে অল্পবয়সেই বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে সংসারের হাল ধরার মতো হওয়ার সাথে সাথে বিয়ে করে আলাদা হয়ে যায়। তাই ছোট ছেলেকে নিয়ে তাসলিমা খাতুন কষ্টে দিন পার করতে লাগলো। অনেক অভাবে দিন যেত তাঁর। কিছুদিন পরে ছোট ছেলেকেও বিয়ে দিতে হলো, সংসারে আরো একজন মানুষ বাড়লো, কিন্তু আয় তো বাড়ছে না! বাড়ছে সংসারের চাপ। একা ছেলেকে হিমশিম খেতে হচ্ছিল সংসার খরচ চালাতে। এটা তাসলিমা খাতুনকে বেশ কষ্টের মধ্যে ফেলে দিচ্ছেলো। তখন তাসলিমা খাতুন শুরু করলেন বাইরে দিনমজুরের কাজ করার, মাঝে মাঝে নদীতে মাছ ধরতে যেতেন।কিছুদিন পরে পরিবারে আরো একটা নতুন সদস্য চলে আসলো। আরও বেশি চাপের মধ্যে পড়ে গেলো, সংসারে শুরু হলো অশান্তি, বাবা মায়ের খরচ ছেলে যোগাতে পারছিলোনা। তাই বাধ্য হয়ে তাসলিমা খাতুনকে ছোট ছেলের সংসার থেকে পৃথক হতে হলো।


তখন তাসলিমা খাতুন ও তার স্বামী কিছু করার চিন্তা করলেন। অনেক ভেবে তাঁরা একটা ছোট খাটো মুদি দোকান করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তাসলিমা কিছু টাকা ধার করে ছোট করে মুদি ব্যবসা শুরু করলেন। তাঁর স্বামী দোকানে বসে আর তাসলিমা স্বামীকে সাহায্য করার পাশাপাশি দিনমজুরের কাজ করতেন। তবে টাকার অভাবে দোকানে বেশি পরিমাণ মালামাল তুলতে পারেননি, এজন্য ব্যবসা ভালো চললো না! ধার করা টাকাও শোধ দিতে হলো। এভাবেই চলছিল তার জীবন। একদিন বারসিক পরিবেশ প্রকল্প সম্পর্কে জেনে তাসলিমা খাতুন এই প্রকল্পের উপকারভোগী হিসেবে যুক্ত হন। বারসিক পরিবেশ প্রকল্প থেকে তাঁকে তার দোকানের জন্য ১৩ হাজার টাকার মালামাল ক্রয় করার সহযোগিতা করা হয়। অবশ্য তাসলিমা খাতুনই চেয়েছিলো তার দোকানটা আবার শুরু করতে। দোকানটা মোটামুটি আগের চেয়ে ভালো চলছে। তাসলিমা খাতুন বলেন, ‘দোকানো বেচাকেনা বেড়ে গেছে। দোকানে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র থাকায় এখন অনেকে আমার কাছে কিনতে আসে। তাই আগের চেয়ে বেশ ভালো আছি। বারসিককে ধন্যবাদ জানাই সহযোগিতা করার জন্য।


তাসলিমা খাতুন এখন খুশি। তার সংসারটা আগের চেয়ে একটু সচ্ছল হয়েছে, তাদের সংসার খরচ, ওষুধের খরচের জন্য ছেলেদের কাছে যেতে হচ্ছে না। দোকানের আয় দিয়ে তাঁরা ভালোভাবেই সংসার চালাতে পারছেন। তাসলিমা খাতুন এখন বেশ ভালো আছেন। তিনি স্বপ্ন দেখছেন এখান থেকে তিনি আরও ভালো কিছু করতে পারবেন।

happy wheels 2

Comments