কাজলী বাসকী আবার যাবে স্কুলে…
:: রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
মাত্র আট বছর বয়সে সাপের কামরে মাকে হারায় কাজলী বাসকী (১৩)। এরপর শুরু হয় তাঁর জীবনের নতুন ধারা। কারণ সৎ মা ও সংসারের অভাব-অনটনে বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। তৃতীয় শ্রেণিতে পড়েই সমাপ্তি। তারপর দীর্ঘ ৪ বছর পর আবার তাঁর স্কুলে যাওয়ার স্বপ্ন পূরণে সহায়তা করলো তানোর সাহিত্য পরিষদ।
গতকাল সোমবার বিকেল ৪টায় তানোর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে কাজলী বাসকীর হাতে শিক্ষা উপকরণ ও পোষাক-পরিচ্ছেদ তুলে দেন তানোর সাহিত্য পরিষদের উপদেষ্টা ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ মুনীরুজ্জামান ভূঁঞা।
এসময় উপস্থিত ছিলেন তানোর সাহিত্য পরিষদ (তানোসপরি)এর উপদেষ্টা ও অধ্যাপক লুৎফর রহমান, জাতীয় পদক প্রাপ্ত আদর্শ কৃষক নূর মোহাম্মদ, তানোসপরি সভাপতি অসীম কুমার সরকার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুবেল হোসেন, মহিলা (নারী) বিষয়ক সম্পাদক আইরিন সুলতানা, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা বারসিক এর সহযোগী কর্মসূচী কর্মকর্তা অমৃত কুমার সরকার এবং শহিদুল ইসলাম শহিদ।
প্রসঙ্গত : অভাব-অনটনের সংসারে কাজলী বাসকীর বাবা ভূট্টু বাসকী (৪৫) লেখাপড়ার খরচ দিতে না পারায় লেখাপড়া বন্ধ করে কাজলী বাসকীকে তাঁর কাজের সহযোগী হিসেবে কাজ করাতেন। দিন মুজুর ভূট্টু বাসকী এর কাজকর্মের অভাব দেখা দিলে তাঁরা খাড়ি ও ডাঙ্গা থেকে মৌসুমী উল্যা কেটে শুকিয়ে বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করতেন। বাবার সাথে এ কাজ করার পাশাপাশি কাজলীকে দিয়ে রান্নার জ্বালানী সংগ্রহের কাজও করাতেন তাঁর সৎমা। বিষয়টি তানোসপরি সভাপতির দৃষ্টিগোচর হলে তিনি কাজলী বাসকীর সাথে কথা বলেন। কাজলী বাসকী তাঁকে জানান যে সে লেখাপড়া শিখতে চায় এবং লেখাপড়া শিখে বড় হয়ে সে নার্স হতে চায়, সে মানুষের সেবা করতে চায়। তাঁর কাছে তাঁর অনুভূতির কথা জানতে পেরে অসীম কুমার সরকার তানোসপরি এর পক্ষ থেকে তাঁকে পড়ালেখা করানোর ব্যবস্থা করার আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে দিনমুজুর পিতা ভূট্টু বাসকী (৪৫) জানান, ‘সংসারে অভাব-অনটনের কারণে আমার ইচ্ছে না থাকা সত্ত্বেও মেয়েটির লেখাপড়া বন্ধ করতে বাধ্য হই। কারণ আমার একার দিনমুজুরীর আয় দিয়ে পরিবারের সবার ভাত-কাপড় যোগাড় করতেই পারছিলাম না। তাই মেয়েটিকে আমার সাথে নিয়ে কাজ করতাম। তবে এখন আমার মেয়েটিকে আর আমার সাথে কাজে যেতে হবে না। এখন থেকে সে অন্য ছেলে-মেয়েদের মত স্কুলে যাবে। আমিও তাকে সহযোগিতা করব।