পারিবারিক কৃষিতে সুদিনে লিপিকা বৈরাগী

ছন্দা রানী মন্ডল, আশাশুনি, সাতক্ষীরা
বাড়ির আঙিনায় ঝুলছে লাউ, ঝিঙা, পল্লা, কুমড়া, চাল কুমড়াসহ অসংখ্য সবজি। খোয়াড়ে ছাগল-ভেড়া আর হাঁস-মুরগি বাড়ির আঙিনায় ছুটাছুটি করছে। এভাবে বাড়ির আঙিনাকে পারিবাকি কৃষিতে ভরিয়ে তুলছেন লিপিকা বৈরাগী।
পরিবার নিয়ে লিপিকা বৈরাগী সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলা সদরের খোলপেটুয়া নদীর পাশে বসবাস করেন। স্বামী সন্তানসহ ৩ জনের সংসার তাঁর। স্বামী অনুপ বৈরাগী দিনমুজুরের কাজ করেন। প্রতিনিয়ত জলবায়ু পরিবর্তনে বিভিন্ন দুর্যোগের ফলে এলাকায় কাজ সংকটে অভাব-অনটন নিত্যসঙ্গী ছিলো তাদের সংসারে। তিন বেলা খাওয়া জুটতো না লিপিকাদের। এভাবেই কোনমতে দিনযাপন করছিলেন লিপিকারা। এক প্রকার দিশেহারা ছিলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করা পরিবারটি।


২০২১ সালে বারসিক ও নেটজ বাংলাদেশের পরিবেশ প্রকল্পের গাছতলা সিএসওতে যুক্ত হন লিপিকা। মাধ্যমিক পাশ করা দলের সভানেত্রী নির্বাচিত হন তিনি। প্রকল্প থেকে ভেড়া, ছিট-কাপড়, বাড়ির আঙিনায় লাগানোর জন্য আলুর বীজ এবং হাঁস-মুরগি সহযোগিতা পান তিনি। এরপর থেকে তাঁর জীবন ও জীবিকায় পরিবর্তন আসে। তিনি বাড়ির আঙিনাকে সবুজে ভরিয়ে তোলেন। ছিট-কাপড়ের ব্যবসা করে লভ্যাংশ দিয়ে ক্রয় করেন ছাগল। আর আলু বিক্রি করে আরো সবজি চাষে মনোযোগ দেন তিনি। ছিট-কাপড়ের ব্যবসা থেকে হাঁস-মুরগি পালন ও সবজি চাষে লাভ বেশি দেখে বাড়ির আঙিনায়ই চাষ করেন লাউ, চাল কুমড়া, কুমড়া, আলু, ঝিঙা, পল্লাসহ অসংখ্য সবজি।

৫ শতক জায়গাকে একটি কৃষি খামারে রূপ দেন তিনি। চলতি বছরে সবজি বিক্রি করে আরো হাঁস-মুরগি ক্রয় করেন। তার এই সাফল্য দেখে তার স্বামী অনুপ বৈরাগীও তার কাজের ফাঁকে লিপিকাকে সহযোগিতা করতে শুরু করেন। লিপিকা বৈরাগী জানান, পরিবেশ প্রকল্পন থেকে পাওয়া সম্পদে তার এই পরিবর্তন। এখন তিন বেলা খেতে পারেন। সংসারে অভাব নেই। কোন সবজি কিনে খাওয়া লাগে না। বরং বিক্রি করে আয় করছেন। তিনি আরো জানান, তার বাড়িতে লাউ, চাল কুমড়া, কুমড়া, আলু, ঝিঙা, পল্লাসহ অসংখ্য সবজি রয়েছে। বারসিক থেকে পাওয়া জৈব সার প্রশিক্ষণ নিয়ে জৈব সার প্রস্তুত করে সবজি চাষে ব্যবহার করছেন। এছাড়া নিজেই বাড়িতে হাজল পদ্ধতিতে হাঁস ও মুরগির বাচ্চা উৎপাদন করছেন।


লিপিকা বৈরাগী জানান, তার বাড়িতে বর্তমানে ১৫টি হাঁস ও ৭টি মুরগি রয়েছে। এছাড়া একটি ভেড়া ও ৫টি ছাগল রয়েছে। প্রকল্প থেকে পাওয়া ১৩ হাজার ৫শ’ টাকার সম্পদ থেকে তার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকার মত।


লিপিকা বৈরাগী স্বামী অনুপ বৈরাগী জানান, নোনার কারণে এলাকায় কাজ না থাকায় সংসারে অভাব ছিলো। কিন্তু বর্তমানে তার সংসারে কোন অভাব নেই। তার স্ত্রী বাড়িতেই কৃষি খামার গড়ে তুলেছেন। এখান থেকে পারিাবরিক পুষ্টির চাহিদাসহ টাকাও আয় হচ্ছে। এখন তাদের সুখের সংসার। সন্তানকে স্কুলে পাঠয়েছেন।

happy wheels 2

Comments