এবার দেশজুড়ে চাষ হচ্ছে “বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের” ধান
রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
“বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক” রাজশাহীর তানোর অঞ্চলের কৃষকদের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত ও কৃষকদের নিয়ন্ত্রিত একটি প্রতিষ্ঠান। এই বীজ ব্যাংক থেকে এলাকার কৃষকরা নিজেদের চাহিদা মত ধান, মসলা, সবজি ও রবিশস্যর বীজ সংগ্রহ করে নিজেদের জমিতে চাষবাদের মাধ্যমে মৌসুম শেষে আবার বীজ ব্যাংক গ্রহণকৃত জাতের ফসল বীজ হিসেবে ফেরত দেন।
প্রতিষ্ঠার গল্প
রাজশাহীর তানোরের দুবইল অঞ্চলের কৃষক ও বারসিক মিলে ২০১৪ সাল থেকে এলাক উপযোগি ধানজাত ও রবিশস্যর জাত নির্বাচনের লক্ষ্যে কাজ করতে থাকে। এই কাজের মাধ্যমে গ্রামের অনেক কৃষক জড়িত হতে থাকেন। পাশাপাশি বাড়তে থাকে এলাকা উপযোগি বিভিন্ন শস্য ফসলের জাতের সংখ্যা। কৃষকরা নিজেদের জমিতে চাষের জন্য ফসলের জাত নিয়ে আবার ফেরত দেন। এভাবে কার্যক্রম চলমান অবস্থায় দুবইল গ্রামের কৃষকরা সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে একটি বীজ ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করার। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০১৫ সালের ডিসেম্বর মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠা পায় “বরেন্দ বীজ ব্যাংক”। এরপর নিজের গ্রাম ছাড়িয়ে প্রতি প্রতি মৌসুমেই পাশের বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা বিভিন্ন দেশীয় জাতের ধান, রবি শস্য ও সবজি বীজ সংগ্রহ করে চাষ করছেন। এভাবে তানোর, গোদাগাড়ি, পবা, মোহনপুর, নিয়ামতপুর, নাচোল, মান্দা, বাঘমাড়া উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা “বরেন্দ বীজ ব্যাংক থেকে বীজ সংগ্রহ করে চাষ করছেন।
এবার বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের ধান দেশজুড়ে
বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন কৃষক বীজ ব্যাংক থেকে ধান সংগ্রহ করে চাষ করে উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলে হারিয়ে যাওয়া লুপ্ত ধানের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। পাশাপাশি এ অঞ্চলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান যেমন এআরডিএস, উন্নয়নধারা, শাপলা ও দিপশিখা বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক থেকে দেশীয় ধান জাতের বীজ সংগ্রহ করে চাষ করছে। উক্ত কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পত্র-প্রত্রিকায় বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের কার্যক্রম বিষয়ে প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের অনান্য অঞ্চলের আগ্রহী কৃষক ও প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি আমন মৌসুমে দেশের বিভিন্ন জেলা যেমন-নাটোর, বগুড়া, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা, পাবনা, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, বরিশাল অঞ্চলে বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের ৬৩টি ধান জাত চাষ করছেন। এখানে উল্লেখ যে চট্টগামের মো. ইসলাম বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক থেকে দেশিয় জাতের ধান জাত সম্প্রসারণে কৃষক নেতৃত্বে ৪৫টি ধান নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। পাশাপাশি উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁদের নির্বাচিত কৃষকদের দিয়েও দেশীয় জাতের ধান জাত চাষের বর্ধনে এগিয়ে এসেছেন। এ বিষয়ে মো. ইসলাম বলেন, “আমি প্রথম আলো প্রত্রিকায় “ধান বীজের রূপকথা” নামক শিরোনামে প্রথমে বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের কথা জানতে পারি এবং বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মো. ইউসুফ আলী মোল্লার সাথে যোগাযোগ করি। সেখান থেকে এই আমন মৌসুমে আমি ৪৫টি দেশীয় জাতের বীজ সংগ্রহ করে চাষ করছি।” বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক থেকে বীজ আদান প্রদান, বিভিন্ন কৃষক ও প্রতিষ্ঠানের বীজ সংগ্রহ বিষয়ে বীজ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা মো. ইউসুফ মোল্লা (৭৩)বলেন, “আমার দেশী জাতের বীজগুলো মানুষের জন্যই আমি রেখেছি। মানুষ এখান থেকে নিয়ে গিয়ে চাষ করবেন আবার ফেরত দিবেন। এর ফলে দেশী জাতগুলো টিকে থাকবে, মানুষ দেশী জাতের ধান চাষ করে উপকৃত হবেন।”
চলতি আমন মৌসুম
এবার চলতি আমন মৌসুমে বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের জাতগুলো কনজারভেশন করে রাখার জন্য দুবইল গ্রামে বারসিক ও বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের যৌথ উদ্যোগে ৭৭টি ধান জাতের প্লট করা হয়েছে। যা আগামী বছরে কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। পাশাপাশি চলতি মৌসুমে বরেন্দ্র বীজ ব্যাংক থেকে বীজ সংগ্রহ করে ৬টি প্রতিষ্ঠান এবং ২৮টি কৃষক নিজের জমিতে আমনের রূপকথা, বালাম, ঝিঙ্গাশাইল, রঘুশাইল, মাগুর শাইল, বাদশা ভোগ, গাঞ্জিসহ ৬৫টি ধান জাত চাষ করছেন। আর এর ফলেই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দেশীয় ধানের চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে পাশাপাশি বীজ ফেরত দেওয়ার ফলে “বরেন্দ্র বীজ ব্যাংকের” বীজের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে যা আগামীতে কৃষকদের দেশীয় জাতের চাহিদা পূরণে সহায়তা করবে।