সাম্প্রতিক পোস্ট

উপকূল সুরক্ষায় সবুজ সংহতি

উপকূল থেকে বাবলু জোয়ারদার

মনুষ্যসৃষ্ট কারণে জলবায়ুর পরিবর্তনে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্ব আজ চরম হুমকির মধ্যে। প্রকৃতি বিনাশী কর্মকান্ড থেকে মানুষ এখনও বিরত হয়নি। প্রতিদিন নতুনভাবে ও নতুন কৌশলে প্রকৃতি-পরিবেশ ধ্বংস করা হচ্ছে। তবে এ বিপন্নতার মাঝেও এখনও আশার আলো দেখা যায়। গ্রাম-শহরে এখনও অনেক প্রকৃতি-পরিবেশ সচেতন মানুষ, শিক্ষার্থী, যুবরা প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষায় জোটগত বা নিজ উদ্যোগে এগিয়ে আসছেন, আন্দোলন করছেন এবং পরিবেশ-প্রকৃতি সুরক্ষায় সচেতন করছেন অন্যদেরকেও।

বারসিক প্রকৃতি-পরিবেশ ও লোকায়ত জ্ঞান রক্ষায় দায়বদ্ধ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই উদ্যোগগুলোতে অংশগ্রহণ ও উদ্যোগকে শক্তিশালী করতে ভূমিকা রাখতে চায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনটি পরিবেশ-প্রতিবেশ সুরক্ষায় উদ্যোগী, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধি, সচেতন ব্যক্তি ও সংগঠনকে গ্রাম-শহরে আঞ্চলিক এবং জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ করে “সবুজ সংহতি” (গ্রীন কোয়ালিশন) তৈরি করতে চায়। বারসিক সকল উদ্যোগী ব্যক্তি ও সংগঠনকে আহবান জানায় এই যাত্রায় শামিল হওয়ার জন্য।

বারসিক’র উদ্যোগকে সমর্থন জানিয়ে সম্প্রতি শ্যামনগর উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষক, সাংবাদিক, পরিবেশ কর্মী, যুব, শিক্ষক, সমাজকর্মীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষ সবুজ সংহতি গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের মধ্যে প্রথম কমিটি গঠন করেন। এই কমিটির মাধ্যমে তাঁরা কৃষিপ্রতিবেশবিদ্যা চর্চা শক্তিশালী করে খাদ্য সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা, মাটি, পানি, বায়ুসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণ বন্ধ ও সুন্দরবন সুরক্ষায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করবেন।

তারা জানান, এই আন্দোলন সমাজ পরিবর্তনের আন্দোলন, মূল্যবোধের আন্দোলন, চেতনার আন্দোলন। এই আন্দোলনের মাধ্যমে আরো বেশি সচেতন মানুষকে যুক্ত করে সুস্থ ও সবুজ মানুষ তৈরি করে উপকূলীয় এলাকার উন্নয়নকে তরান্বিত করতে হবে এবং আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

উল্লেখ্য, কৃষিপ্রতিবেশ, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করা এবং জলবায়ু ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা বর্তমান পরিবর্তিত সময়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মানুষের সীমাহীন লোভের কারণে আজ প্রকৃতির অন্যান্য সৃষ্টি (প্রাণি, বৃক্ষ, লতা-পাতা), বন-নদ-নদী-জলাশয় সবই ভয়াবহ বিপন্নতার পথে। বর্তমানে মানুষের এসব কর্মকান্ডের কারণে বিপর্যস্ত হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ যা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে জলবায়ু পরিবর্তনের নিয়মতান্ত্রিক ধারাকে। এর ফলে প্রকৃতি নির্ভর মৌসুমভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থার উপর পড়ছে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব, যা আমাদের দেশের মত প্রকৃতিনির্ভর গ্রামীণ আর্থসামাজিক ব্যবস্থাকে নানামাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত করছে। মানুষকে বন্যা, খরা, নদীভাঙন, লবণাক্ততা, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগকে প্রতিনিয়ত সামাল দিতে হচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে পৃথিবীর ক্ষতিগ্রস্ত দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অধিক উৎপাদনের নামে কৃষক তার ফসলের জমিতে অধিকমাত্রায় রাসায়নিক সার-বিষ ব্যবহারের ফলে মাটির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্রমবর্ধমান লোভের কারণে এলাকা থেকে হারিয়ে যাচ্ছে প্রাকৃতিক জলাশয়। বিলুপ্ত হচ্ছে প্রাকৃতিকভাবে টিকে থাকা মাছ ও জলজপ্রাণি, ধ্বংস হচ্ছে প্রাণবৈচিত্র্য, ভারসাম্য হারাচ্ছে প্রকৃতি। অবাধ রাসায়নিক সার-বিষের ব্যবহারে পাখি, উপকারী পোকামাকড় ও মৌমাছি বিলুপ্ত হচ্ছে।

happy wheels 2

Comments