নিজেকে বাঁচাতে, প্রকৃতিকে সাজাতে পানির বিকল্প নাই
সিংগাইর মানিকগঞ্জ থেকে বিউটি সরকার, শিমুল বিশ্বাস, শাহিনুর রহমান ও শারমিন আক্তার
‘প্রকৃতির জন্য পানি’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে প্রকৃতির সকল প্রাণের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সিংগাইর উপজেলার বায়রা কৃষক কৃষাণি সংগঠন পালন করেছেন বিশ্বপানি দিবস-২০১৮। প্রকৃতি রক্ষায় নিজেদের দায়িত্ববোধ থেকে প্রকৃতিতে পানির ধারা অব্যহত রাখার প্রতীক হিসাবে বৃক্ষরোপণ এবং রোপণকৃত বৃক্ষে পানি ঢালা ও পুকুর পরিস্কার করে সুপেয় পানির উৎস সনাক্তকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করে এ সংগঠনটি। এ ছাড়া দিবসটি উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বায়রা ইউনিয়নের নির্বাচিত মেম্বার ও প্যানেল চেয়ারম্যান আজাহার উদ্দিন, নয়াবাড়ি গ্রামের প্রকৃতি প্রেমিক কৃষক ইব্রাহিম মিয়া, বায়রা কৃষক সংগঠনের সভাপতি রোকেয়া বেগম, সাধারণ সম্পাদক সাফিয়া বেগম, সংগঠনের অন্যান্য সদস্যসহ গ্রামের অর্ধশতাধিক নারীপুরুষ। পানি দিবসে অংশগ্রহণকারীগণ প্রথমে নিজ হাতে দেশীয় ফলজ ও ঔষধি বৃক্ষ রোপণ করে গাছের গোড়া পানি দিয়ে সিক্ত করেন। পরে বায়রা মসজিদের পাশের একটি পুকুরের ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে, পুকুরটিকে স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ জলাশয় হিসাবে ঘোষণা দিয়ে ভরা কলসী হাতে মানববন্ধন করেন সংগঠনের নারী সদস্যগণ। সকলে মিলে শপথ গ্রহণ করেন। শপথে বলেন, “আজ থেকে এই পুকুরে ময়লা আবর্জনা নিজেরাও ফেলবো না, অন্যকেও ফেলতে দিবো না। এ পুকুরে গোসল করা বন্ধ। এটা হবে আমাদের স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ জলাশয়।”
পাশাপাশি, বলধারা ইউনিয়নের কৃষক জনতা পানি দিবস উপলেক্ষে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ ও এলাকার কৃষিসহ দৈনন্দিন কাজে পানি সংকট নিরসনে নুরানী গংগা নদী খননের দাবিতে মানব বন্ধন করেছেন। বলধারা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সভাপতি মো. আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে আয়োজিত মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন সংগঠনের সভাপতি করম আলী মাস্টার, বীবমুক্তিযোদ্ধা ওসমানগণি আসমান, বাংগালা কৃষক কৃষাণি সংগঠনের সভাপতি সুভাষ মন্ডল, সাধারণ সম্পাদক সেলিনা বেগম, ছোট কালিয়াকৈর কৃষক শ্রমিক সমাজ সেবা সংঘের প্রচার সম্পাদক জনাব দারোগ আলী এবং দৈনিক আমাদের অর্থনীতির জেলা প্রতিনিধি আবুল বাশার আব্বাসি । মানব বন্ধনের মাধ্যমে কৃষি কাজে পর্যাপ্ত পানি সরবরাহসহ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণে নুরানী গঙ্গা নদী খনন এর দাবি তুলে ধরেন।
নুরানী গংগা নদীর রয়েছে একটি সমৃদ্ধ ইতিহাস। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে এ নদীর ছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ নদীর গোলাইডাঙ্গা নামক স্থানে ডোবানো হয়েছিল পাকবাহিনীর তিনটি নৌকা। নৌকা ডোবানোর মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর ৮৬ জন পাকসেনাকে নিহত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। তাছাড়া এ নদী বলধারা ইউনিয়নের ১০টি গ্রামের ১২ থেকে ১৩ হাজার মানুষের কৃষিজমিতে পানি সরবরাহ হয়। পুরণ হয় গৃহস্থলীসহ দৈনন্দিন কাজের পানির চাহিদা। অথচ সেই নদীতে আজ পানির কোন অস্তিত্ব নাই। ফলে এ এলাকার নদীভিত্তিক পেশাজীবী মাঝি সম্প্রদায়ের জীবন জীবিকা হুমকির সম্মূখীন। তাছাড়া নদীটি ভরাটের কারণে বর্ষা মৌসুমে বন্যাসহ তৈরি হয় জলাবদ্ধতা। অন্যদিকে শুস্ক মৌসুমে পানি সংকটের কারণে কৃষিজমিসহ সাধারণ মানুষের জীবন সংকটাপন্ন। পানির অভাবে বিপন্ন হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ, হারিয়ে যাচ্ছে স্থানীয় মৎস্য সম্পদ।
এমতাবস্তায় এলাকার মানুষ উপলব্ধি করছেন এ নদীটি খনন করা জরুরি। তাই সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে বিশ্ব পানি দিবসে দেশীয় সংস্কৃতি, প্রকৃতি ও জীবনের প্রয়োজনে নদী খননে স্থানীয় সরকারের নিকট দাবিনামা পেশ করার জন্য স্মারকলিপি প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এখানে একসময় প্রবাহমান ছিল অসংখ্য নদী-নালা; পানিতে ভরা ছিল খানা-খন্দ। পরিবর্তনের ধারায় মরেছে নদী, বিবর্ণ হয়েছে নদীর প্রবাহিত ধারা। শুকিয়ে গেছে খাল বিল। অথচ বেঁচে থাকবার অন্যতম শর্ত হলো পানি। পানি ছাড়া প্রাণের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। বর্তমান প্রেক্ষাপটের দিকে তাকালে দেখা যায় পানি সংকট একটি বড় সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে পৃথিবী নামক এই গ্রহের সকল প্রাণের জন্য। সৃষ্টির সেরা প্রাণি হয়েও মানুষ আজ পানি সংকটে দিশেহারা। পানি দিবসের অনুষ্ঠানে আয়োজিত আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তারা পানি সমস্যা দূরীকরণে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগ ও দায়িত্ববোধের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। নিজেকে বাঁচাতে এবং প্রকৃতিকে সাজাতে নিজেদের দায়িত্ববোধকে সক্রিয় রাখার বিকল্প নাই বলে মনে করছেন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা।