সাম্প্রতিক পোস্ট

করুণাময়ীর সংগ্রামী জীবন

করুণাময়ীর সংগ্রামী জীবন

সাতক্ষীরা শ্যামনগর থেকে রুবিনা রুবি

‘২৫ বছর হলো তিনি বেঁচে নেই। একটি ছেলে আর দুটি মেয়ে নিয়ে কিভাবে যে বুকে পাথর চাপা দিয়ে বেঁচে আছি।’ কথাটি বলতে বলতে চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে করুণাময়ী মল্লিকের।

শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনীতে বাস করেন করুণাময়ী। ৫ বছরের একটি ছেলে ও ৩ বছরের একটি মেয়ে এবং ৩ মাসের একটি মেয়ে মোট তিনটি সন্তান রেখে ২৫ বছর হলো তার স্বামী মারা গেছেন। সেই থেকে জীবনের সাথে সংগ্রাম শুরু হয় করুণাময়ী মল্লিকের। তিনি বলেন, ‘স্বামী মারা যাওয়ার পর কোন কূল কিনারা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।কোথায়  যাবো কি করবো? এত ছোট বাচ্চা  রেখে কি করে কাজে যাবো, কাজে না গেলে খাবো কি, বাচ্চাদের মুখে খাবার দিবো কি করে?’ এসব কথা বলতে বলতে এবার একবার চোখ মুছে নিলেন করুণাময়ী।

তিনি জানান, অবশেষে কোন দিশা না পেয়ে বাচ্চা তিনাটকে বাড়িতে ঘরের মধ্যে তালা দিয়ে রেখে নদীতে মাছ ধরতে যেতেন। কিছুক্ষণ পর পর এসে সন্তানদের দেখে আসতেন, খাইয়ে দিয়ে আবার মাছ ধরতে যেতেন। মাছ ধরার পাশাপাশি তিনি পান সুপারি বিক্রির কাজ শুরু করেন। বাজারে বাজারে গিয়ে পান সুপারি বিক্রি করতেন।এই প্রসঙ্গে করুণাময়ী বলেন, ‘কোথায় কোথায় না গেছি বাচ্চাদের রেখে পান বিক্রি করতে। তারপর যখন ছেলেটাকে স্কুলে দিলাম চিন্তা আরও বেশি বেড়ে গেলো, টাকা পয়সা তখন আরও প্রয়োজন। কোন কিছু না ভেবে যোগ দিলাম রাজমিস্ত্রীর কাজে। সকাল থেকে সন্ধ্যা অবদি কাজ করতাম। কোন কোনদিন একা একটা মেয়ে মানুষ রাত হয়ে যেত। কিন্তু কি করবো? কিছু করার নেই। ছেলে মেয়েদের মানুষ তো করতে হবে ‘

করুণাময়ী আরও বলেন, ‘জোয়ান বয়সে কষ্টের কাজ করে ছেলে মেয়েগুলোকে মানুষ করেছি। ছেলেকে মাস্টার্স পাস করাইছি, দুই মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়ে বিয়ে দিছি। এখন আমি মাছের ব্যবসা করি। প্রতিদিন সকালে মাছের আড়ৎ থেকে মাছ কিনে সেই মাছ বিক্রি করি,প্রতিদিন কমবেশি লাভ হয় সেটা দিয়ে সংসার চালাই।’

তিনি বলেন, ‘আমি হাল ছেড়ে দেয়নি। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিলো ছেলে মেয়েদের মানুষ করবো সৎ পথে উপার্জন করবো। আজ আমি পরিশ্রমের জোরে সফল। যে কটা দিন বাঁচি এইভাবে খেয়ে পরে যেন বাঁচতে পারি। ‘

happy wheels 2