কৃষিতে ভার্মি কম্পোস্ট
হরিরামপুর, মানিকগঞ্জ থেকে সত্যরঞ্জন সাহা
কৃষকের প্রাণ কৃষি, আর কৃষির প্রাণ হলো মাটি। কৃষিকে বাঁচাতে হলে বাঁচাতে হবে মাটিকে। আর মাটির স্বাস্থ্য রক্ষার জন্য ব্যবহার করতে হবে জৈব সার- ভার্মি কম্পোস্ট। মাটির স্বাস্থ্যগত দিক ভালো রাখা ও বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনে ভার্মি কম্পোস্ট করতে এগিয়ে আসেন গ্রামের কৃষক ও মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার হাটিপাড়া ইউনিয়নের বরুন্ডি গ্রামে বিশিষ্ট শিল্পপতি মুঞ্জুর রহমান (মুন্নু)। তার নিজ বাড়িতে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্রে কম্পোস্ট সার তৈরি করছেন। উৎপাদন কেন্দ্রেটিতে প্রাথমিকভাবে ২০টি রিং স্লাব দিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেন। তিনি আশা করেন উৎপাদন কেন্দ্র থেকে ৪৫ দিন পর ৪০০ কেজি কম্পোস্ট সার পাওয়া যাবে। উৎপাদিত সার দিয়ে প্রাথমিকভাবে বিষমুক্ত শাক-সবজি ও ধান তৈরি করা হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে কৃষকদের কম্পোস্ট সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা হবে।
ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন বরুন্ডি কৃষক-কৃষাণী সংগঠনের সভাপতি বদ্যনাথ সরকার ও কৃষক গোসাই দাস রায় এবং কৃষক গুরুদাস সরকার। কৃষকগণ বলেন, “বাজারের বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সার ব্যবহারের ফলে মাটি নষ্ট হয়ে পাথরের মতো হয়েছে। এই মাটি কম্পোস্ট সার ব্যবহারে মাটির নিজস্ব শক্তি দ্রুত ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। কম্পোস্ট সার ব্যবহারে উৎপাদন খরচ কমবে ও কৃষক স্বাধীনভাবে চাষাবাদে ফিরে আসতে সক্ষম হবে।”
কম্পোস্ট সার উৎপাদন করতে পরিমাণ মতো কলাগাছের খোসা টুকরা ছোট করে কেটে, গোবর সারের সাথে মিশিয়ে দিয়ে এর মধ্যে কেঁচো ছেড়ে দিতে হবে। কম্পোস্ট তৈরিতে ছায়াযুক্ত বা ঘরে স্যানেটারি ল্যাট্রিনের রিং বা মাটির চার দিয়ে কম্পোস্ট সার তৈরি করা যেতে পারে। খেয়াল রাখতে হবে ব্যাঙ, হাঁস-মুরগি, ইঁদুর, পিঁপড়া, কাকে যেন কেঁচো না খেতে পারে।
বিগত সময়ে কম্পোস্ট সারের গুণাগুণ রক্ষা, সংরক্ষণ ও ব্যবহার মাত্রা ও উৎপাদন প্রক্রিয়া বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধকরণ করার কাজটি বারসিক নামে একটি বেসরকারি সংস্থা করে আসছে।
কৃষক পর্যায়ে কম্পোস্ট সারের চাহিদা বৃদ্ধি, জৈব কৃষির প্রচারের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে ২১ জুন ২০১৭ তারিখে ভার্মি কম্পোস্ট উৎপাদন কেন্দ্রটি পরিচালক মুঞ্জুর রহমান এর উপস্থিতিতে উদ্বোধন করা হয়। উক্ত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন সমাজ সেবক এড. দীপক কুমার ঘোষ, মানিকগঞ্জ এবং এলাকার কৃষক কৃষানীগণ। শুরুতেই সকলে মিলে সার উৎপাদন কেন্দ্রটি পর্যবেক্ষণ করেন।
কৃষকগণ রাসায়নিক সার, বিষ ব্যবহার করে শাক-সবজি ফলমুল উৎপাদন করছেন। খাদ্য শষ্য উৎপাদনে ভেজাল দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাজারের উপর সাধারণ ভোক্তার কোন ভরসা নেই। এই ধরনের ভেজাল খাদ্য খেয়ে শিশুসহ বয়স্ক মানুষ গ্যাস্ট্রিক, আলসার, টিউমারসহ বিভিন্ন রোগে আকান্ত হচ্ছে। এই বিষয়গুলো মাথা রেখে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদনে কৃষক পর্যায়ে জনসচেতনতা বাড়াতে হবে। সকলের নিরাপদ খাদ্য ও স্থায়িত্বশীল কৃষির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে দেশ, কৃষক ও কৃষিকে বাঁচাতে হবে।