পাহাড়ি জমিতে বৃক্ষ রোপণে কৃষক কিরুপ কুবির উদ্যোগ
কমলাকান্দা থেকে খায়রুল ইসলাম অপু
আজ থেকে প্রায় তিন থেকে চার যুগেরও বেশি সময় থেকে পতিত পাহাড়ি টিলার জমিতে কোন কিছুই চাষ করতে পারেনি কৃষক কিরুপ কুবি (৪০) ও তার স্ত্রী শিলা চিসিক (৩৮)। গরু ছাগলের অবাধ বিচরণের কারণে পাহাড়ে কোন কিছুই চাষ করা সম্ভব হয়ে উঠে না। কারণ সকাল হলেই গরু ছাগলের পাল পাহাড়ে চলে যায় খাবারের জন্য। সন্ধ্যা হলেই কোন রাখাল ছাড়া নিজেরাই আবার বাড়ি ফিরে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কোন কিছু চাষ করা বা বৃক্ষ রোপণ করে রাখা আসলেই চ্যালেঞ্জের ব্যাপার। এক সময় টিলার ওপর ১২ কাঠা জায়গায় তাদের বসবাস ছিল। পাহাড়ি হাতির উপদ্রবের কারণে সেখানে বসবাস করতে না পারায় সেই টিলার ভিটে থেকে সমতলে এসে বসতি গড়ে তোলেন তারা।
কৃষক কিরুপ কুবি আজ থেকে ২ বছর আগে নার্সারির উপর অভিজ্ঞতা বিনিময় সফর করতে যান নেত্রকোনা জেলার মধু মাস্টারের বাড়িতে এবং নাজিরপুর ইউনিয়নের হরিপুর গ্রামে ওসমান গণির বাড়িতে। এরপর থেকে বাড়িতে তিনি নিজের চাহিদা পূরণ করার জন্য ছোট আকারে নার্সারি শুরু করেন। তার নার্সারিতে আছে আম, জাম, কাঁঠাল, রক্ত চন্দন, মেহগনি, জলপাই, আকাশিয়া গাছের চারা। তার চিন্তা ছিল তাদের ওই ফেলে রাখা টিলায় বৃক্ষ রোপণ করবেন। কিন্তু এত বড় জায়গায় বৃক্ষ রোপণ করতে গেলে চারা ক্রয় করার জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। তার ১২ কাঠা জমিতে প্রায় ৬০০টি চারা রোপণ করা যাবে। আর প্রতি চারার মূল্য যদি ২০/- টাকা হয় তাহলেও তার প্রায় ১২ হাজার টাকার প্রয়োজন। তাই তিনি নিজেই নার্সারি শুরু করেন এবং নিজের নার্সারি থেকেই টিলায় ৬০০টি বৃক্ষ রোপণ করে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন। চারাগুলো গরু, ছাগল, শুকর প্রভৃতির হাত থেকে রক্ষার জন্য তিনি সীমানার চারপাশে বেড়া দিয়েছেন। বেড়াগুলো ভেঙে গেলে পুনরায় বেড়া দেন। এভাবে এক বছর ধরে চারাগুলোর তদারকি করার ফলে এই পর্যন্ত ৬০০টি চারার মধ্যে প্রায় সবগুলো চারাই টিকে আছে। এতে তার নতুন উদ্যোগের সৃষ্টি করেছে।
তার বাড়ি থেকে প্রায় ৮-১০ কি:মি: দূরে গোবিন্দপুর গ্রামে তাদের ৮ কাঠা পরিমাণ উচু জমি আছে বৃক্ষ রোপণের জন্য। তিনি এখন চিন্তা করছেন সেখানেও তিনি কাঠের গাছ রোপণ করবেন। জমিটি বাড়ি থেকে দূরে হওয়ায় সেখানে ফলের গাছ রোপণ করা সম্ভব হবে না বলে তিনি জানান। তাই তিনি এই বছর নার্সারিতে আরো নতুন চারা তুলছেন।
তাদের পাশাপাশি তার প্রতিবেশী কৃষক সুনীল মারাক পাহাড়ি টিলার নিচের পতিত জমির ২ কাঠা পরিমাণ জমিতে শাক/সবজি (মরিচ, মুলা, ধনিয়া, লাল শাক, গাজর, ডাটা) চাষ করছেন। গবাদি পশুর হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য তিনিও বেড়া দিয়ে রাখছেন। অপর এক কৃষক পরিমল হাজং পাহাড়ের পাদদেশে ২ কাঠা পরিমাণ জমিতে বছরব্যাপী শাক, সবজি (মুলা, ডাটা, লাল শাক, কাচাঁ মরিচ) ধান বীজ রোপণ করছেন। তিনিও গবাদি পশুর হাত থেকে ফসল রক্ষার জন্য জমির চারপাশে বেড়া দিয়েছেন, বেড়ার কাজ করে এমন গাছ জমির চারপাশে রোপণ করেছেন। এভাবেই তারা একসময়ের অসম্ভব ভাবনাগুলোকে সম্ভব করে তুলছেন।