স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রাস্তাটি মেরামত করলো তরুণরা
বরেন্দ্র অঞ্চল থেকে শহিদুল ইসলাম
শীতের কুয়াশা জড়ানো সকাল, জড়তা কাটিয়ে হয়তো এখনো অনেকে উষ্ণতার সাথে মোড়ানো লেপের নীচে আয়েসে ভাবছে উঠবো উঠবো বলে। কিন্তু কিছু তরুণ ও উদ্যোগী জনতাকে আরাম আয়েশের সেই উষ্ণতা আটকিয়ে রাখতে পারেনি। শীতকে কাবু করে তাঁরা নিজেদের পূর্ব পরিকল্পনার কথা মনে করে আপন মনে কাজ করে যাচ্ছে। বিগত বর্ষা মৌসুমে দুর্যোগের কথা মনে করে তাঁরা পরিকল্পনা করেছিলো শুকনো শীতের মৌসুমে তাঁদের চলাচালের সুবিধার জন্যে গ্রামের রাস্তাটিতে মাটি ভরাট করবেন। এ নিয়ে নানা সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানেও যোগাযোগ কম করেননি, শুধু সময়ক্ষেপণ হয়েছে, কোন কাজ হয়নি। অবশেষে নিজেরাই নিজেদের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের রূপ নিয়ে নিজেদের উন্নয়ন নিজেরাই শুরু করলেন।
নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামের এলাকার তরুণরা রাস্তাটি মেরামতের জন্য হাতে নেন নানান উদ্যোগ। তরুণদের সংগঠন ‘সোনালি রেডিও ক্লাবের’ সদস্যরা গ্রামবাসীর সাথে বৈঠক করেন কীভাবে রাস্তাটি মেরামত করা যায়! বৈঠক থেকে তারা সিদ্ধান্ত নেন স্বেচ্ছাশ্রম ভিত্তিতে রাস্তায় মাটি ভরাাট করার। এজন্য তারা চাঁদা দেন এবং অন্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে ৩০০০ টাকা যোগাড় করেন। এ টাকা দিয়ে ট্রলি ভাড়া করে শীতের সকালে তারা সবাই নেমে পড়েন রাস্তায় মাটি ভরাট করার। এভাবে দীর্ঘ এক কিলোমিটারের রাস্তাটিতে সকাল থেকে দিনব্যাপী মাটি কেটে চলাচলের উপযুক্ত করেন এ উদ্যমী তরুণসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ। এই প্রসঙ্গে সোনালি রেডিও ক্লাবের তরুণ সদস্য ও সভাপতি মামুনুর রশিদ বলেন, “সক্ষমতা আর সাধ্যের মধ্যে থাকলে উন্নয়ন কখনো ঠেকে থাকে না।” তিনি আরও বলেন, “এলাকার মানুষদের সচেতন এবং এধরনের কাজগুলো যাতে সহজেই করা যায় তার জন্যে আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি রেডিও ক্লাব। রেডিও ক্লাবের মাধ্যমে আমরা এই গ্রামের বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, মাদকাসক্ত প্রতিরোধ বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করি।” তিনি বলেন, “একই সাথে পাখির অভয়ারণ্য ঘোষণা করেছি আমার গ্রামটিকে, বন্যপ্রাণী ও পাখি নিধন বন্ধে আমরা সরকারের আইনগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরি।” তিনি জানান, সোনালি রেডিও ক্লাবের সদস্যরা একইসাথে পাখি মানুষের উপকার করে সেটা তুলে ধরে। এলাকায় জৈব কৃষির পরামর্শ এবং জৈবকৃষি চর্চার বিষয়গুলো নিয়ে সদস্যরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করি এবং নিজেরাও চাষ করেন। সফল কৃষকদের নিয়ে বাংলাদেশ বেতারের সাথে যোগাযোগ করে তাদের সফলনামা তুলে ধরার চেষ্টা করেন এই তরুণরা। গ্রামের রাস্তাটি মেরামত বা চলার উপযোগী করে তোলা তাদের এসব সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পরিবেশ বিষয়ক অন্যত উদ্যোগ বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য যে, নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার এনায়েতপুর ইউনিয়নের রহিমাপুর গ্রামের শতাধিক পরিবারগুলোর সন্তান-সন্ততী, কৃষকসহ নানা পেশার মানুষ তাঁদের গ্রামের রাস্তাটির বেহাল দশার জন্যে বর্ষা মৌসুমে চলাচল করতে অনেক কষ্ট করতে হয়। অনেকসময় দেখা গেছে, রাস্তা খারাপ হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা স্কুলেও যেতে পারে না। বিশেষ করে শিশুদের আরো করুণ অবস্থা হয়। অন্যদিকে কৃষকদের জন্য হয়ে উঠে জ্বালাময়ী সমস্যা, কেননা বর্ষা মৌসুমে তাদের পণ্য আনা নেয়ার কাজ হয়ে ওঠে আরো কষ্টসাধ্য। অনেকসময় দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা এই সময়ে গ্রামে কৃষিপণ্য কেনার জন্যেও আসে না। যার ফলে পণ্যের দামও হয়ে বাজার থেকে হেরফের। সকলে মিলে নানা জায়গায় যোগাযোগও করেছেন রাস্তাটি মেরামতের সহযোগিতার জন্যে, কিন্তু মেলেনি কোন সহযোগিতা।