আমরা নির্বিচারে কীটনাশক ব্যবহার করব না
বরেন্দ্র অঞ্চল রাজশাহী থেকে অমৃত সরকার
রাজশাহীর তানোর উপজেলায় বারসিক ও বরেন্দ্র জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির আয়োজনে ‘নির্বিচারে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধে সচেতনতামূলক র্যালি ও আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে পরিবেশসহ প্রাণবৈচিত্র্য আজ হুমকির মুখে। নির্বিচারে কীটনাশক ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা তৈরি করার উদ্দেশ্য এলাকার কৃষক-কৃষাণীদের সমন্বয়ে অনুষ্ঠানটি আজ (২রা অক্টোবর) আয়োজন করা হয়। অংশগ্রহণকারীরা র্যালির মাধ্যমে জনসচেতনতা তৈরির পর আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করেন। আলোচনা সভায় জাতীয় পরিবেশ পদকপ্রাপ্ত কৃষক মো. ইউসুফ আলী মোল্লার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোসা: সাসরিন বানু। উক্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শামিমুল ইসলাম, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান, তানোর থানার অসি তদন্ত মো. রাকিবুল হাসান, বারসিক বরেন্দ্র অঞ্চলের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী মো. শহিদুল ইসলামসহ উপজেলার দশটি গ্রামের শতাধিক কৃষক-কৃষাণী।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তানোর উপজেলার নির্বাহী অফিসার নাছরিন বানু বলেন, ‘রাসায়নিক কীটনাশকের ভয়াবহতা সবাইকেই গ্রাস করছে। আমরা সবাই এর জন্য ভুক্তভোগী। আমরা সবাই চাই রাসায়নিক কীটনাশক নিয়মানুযায়ী ব্যবহার হোক। আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে অবশ্যই আমাদেরকে রাসায়নিক কীটনাশকের বিকল্প নিয়ে ভাবতে হবে।’ বিশেষ অতিথি হিসেবে তানোর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কীটনাশকের ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে অংশগ্রহণকারীদের সচেতন হতে উৎসাহিত করেন।
তানোর প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বরেন্দ্র অঞ্চলের জনসংগঠন সমন্বয় কমিটির যুগ্ম আহবায়ক অসীম কুমার বলেন, ‘তানোরে যাচ্ছেতাইভাবে কীটনাশক বিক্রি করা হয়। এমন কি মুদি দোকানেও অনুমোদনহীন কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এ বিষয়ে সচেতনতা কম থাকায় বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতি- কিছু দিন আগেও তানোর উপজেলার পাঁচন্দর ইউনিয়নের একজন কৃষক জালাল উদ্দিন (৫২) কীটনাশক স্প্রে করতে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত তানোওে ৪ জন কৃষক এই কীটনাশকের জন্য মারা গেছেন। যদিও এসব মৃত্যু নানাভাবে চালিয়ে দেয়া হয়।’ তিনি দাবি করেন অচিরেই এই কীটনাশকের অবৈধ দোকান বন্ধ করতে হবে। একই সাথে জীবন পরিবেশের ক্ষতিকর কীটনাশক ক্রয় বিক্রয়- বাজারজাত বন্ধ করতে হবে।
রাসায়নিক কীটনাশকের মাত্রাতিরিক্ত ও নির্বিচারে কীটনাশকের ক্রয়-বিক্রয় ও ব্যবহারের কারণে এই এলাকার পরিবেশ, জীবন স্বাস্থ যেন হুমকির মধ্যে। কীটনাশকের ব্যবহারের ফলে এলাকার মাটি, পানি এবং বাতাস দূষিত হয়ে এখন বিপজ্জনক মাত্রা ধারণ করেছে। অপরদিকে মানুষ যা খাচ্ছে তাতে দেখা দিয়েছে বিষক্রিয়া। বিষমাখা উৎপাদিত খাদ্যের ফলে দেশে বর্তমানে অসুস্থ মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে বহুগুণ। দেশের মানুষ বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হলেও তার প্রতিকারের কোন সুষ্ঠু পদক্ষেপ নেয়ার মতো কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। মানবদেহে কীটনাশকের প্রভাব মারাত্মক হওয়ার কারণে মানুষকে আগের থেকে অনেক বেশি এখন ডাক্তারমুখী হতে হচ্ছে। অনেক রোগ আবার চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে থাকার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ চিকিৎসা সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। কৃষিতে যে হারে কীটনাশক এবং রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে তার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কোন নিয়ম-নীতি মানা হচ্ছে না । রাসায়নিক এবং কীটনাশকের ব্যবহার ও নিয়মকানুন নিয়ে মাঠ পর্যায়ে কার্যকর কোন সচেতনতামূলক কর্মসূচি নেই। একইসাথে মানুষ ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কীটনাশক বন্ধে কার্যকর কোন নীতিমাল বা মাঠ পর্যায়ে সরকারের কোন উদ্যোগ নেই।
তাই স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও জনসংগঠন সমন্বয় কমিটি জেলা প্রসাশক বরাবর এ বিষয়ে সচেতনতা এবং ক্ষতিকারক কীটনাশক বিক্রি বন্ধের প্রতিবাদে স্মারকলিপি প্রদান করেন।