সাম্প্রতিক পোস্ট

নিরাপদ খাদ্য চাষের কারিগর গ্রামীণ নারী

নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান
আজ আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস। এ বছরের প্রতিপাদ্য: গ্রামীণ নারীরাই সকলের জন্য নিরাপদ খাদ্য চাষ করেন। এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে কলমাকান্দা উত্তর লেংগুরা, মদনের গোবিন্দশ্রী গ্রামে, নেত্রকোণা সদর উপজেলার ফচিকা গ্রামের কিশোরদের উদ্যোগে গ্রামীণ নারী দিবস পালন করা হয়। কলমাকান্দা লেংগুরা গ্রামের আদিবাসি নারীরা আদিবাসি নিরাপদ খাবার, নিজের বাড়িতে উৎপাদিত শাকসবজি, অচাষকৃত খাদ্য সম্পদ মেলায় প্রদর্শন করেন। আলোচনায় সভায় উপস্থিত ছিলেন কারিতাস আঞ্চলিক কর্মকর্তা এলটুশ নকরেক।

অন্যদিকে নেত্রকোণা সদর উপজেলার ফচিকা গ্রামের অগ্রযাত্রা কিশোরী সংগঠনের সদস্যরা গ্রামের নারীদের নিয়ে দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। গ্রামের নারীরা নিজ বাড়িতে উৎপাদিত নিরাপদ খাদ্য প্রদর্শন করে জানিয়ে দেয় যে একটি সুন্দর ভবিষ্যত গড়ে তোলার জন্য গ্রামীণ নারীর চাষকরা খাবার বিশেষ ভূমিকা পালন করে। নারীর হাতেই শিশুর জন্য নিরাপদ খাবারের শৈশব তৈরি হয়। আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি খায়রুল ইসলাম,বিনা আক্তার। অনুষ্ঠানে গ্রামের নারীদের মাঝে শীতকালীন শাকসবজির ৮ জাতের বীজ বিতরণ করা হয়। এছাড়া আটপাড়া উপজেলার মনসুর গ্রামের নারীরা দিবসকে সামনে রেখে গ্রামীণ নারীর চাষ করা খাদ্যের মেলার আয়োজন করেন। আয়োজনে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আটপাড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী খায়রুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাকিল আহমেদ, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সহ স্থানীয় সরকার প্রতিনিধিরা, মদন উপজেলায় হাওরের হাওরবাড়ির নারীরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা করে নিজ বাড়িতে যে, জমিতে যে ফসল চাষ করেন তারপ্রদর্শনী ও নিরাপদ খাদ্যের গুরুত্ব সবার সামনে তুলে ধরেন।

বলা হয়, গ্রামীণ নারীর হাত ধরে টিকে আছে আমাদের বৈচিত্র্যময় শস্য ফসলের বীজ। বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামই সুজলা, সুফলা, হাস্য শ্যামলা। নানা জাতের বৈচিত্র্যময় ফসলের শস্যভান্ডার এই গ্রাম। আমাদের গ্রাম বাংলায় এখনো বৈচিত্র্যতা টিকে আছে এবং টিকিয়ে রাখার একমাত্র আধার হচ্ছে গ্রামীণ নারী। তিনি নিজেসহ আশেপাশের প্রতিবেশীদেরকেও বিভিন্নভাবে সাহায্য করেন। নিজের আঙ্গিনায় নানাপ্রকার সবজি, ঔষধি গাছ, ফলজ গাছ ইত্যাদি রোপন করেন, নিজের ইচ্ছা বা পছন্দ অনুযায়ী আবাদ করেন শস্য ফলান। বাড়ির আঙিনাটিকে পরিবেশসম্মত রুচিশীল করে সাজিয়ে তোলেন সেখানে স্থান পায় মৌসুমভিত্তিক নানা সবজী ফসল। গ্রামীণ নারীরা লাউ, শিম, মিষ্টি লাউ, শশা, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, চাল কুমড়া, টমেটো, ডেঢ়স, আলুসহ নানান জাতের সবজি, পেঁয়াজ রসুন, আদা, হলুদ ইত্যাদি মসলা চাষ তাছাড়া গোল আলু, ব্যাঙ্গ আলু, সোনা আলু, বইছা আলু, গাছ আলু, বিচি আলু, বেল আলু, ইত্যাদি চাষ করে ফসল বৈচিত্র্যতা রক্ষা করে চলেছে ও অচাষকৃত খাদ্য সংরক্ষণ করে চলেছে।
বীজ সংগ্রহ, সংরক্ষণ, সবজি চাষ, পরিচর্যা, পোকাদমন, সার ও কীটনশক প্রয়োগ ফসল সংগ্রহ এই প্রত্যেকটা কাজের সঙ্গে একজন গ্রামীণ নারী ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সংসারের কাজের পাশাপাশি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত একজন নারী বিভিন্ন ধরণের কাজের সাথে যুক্ত থাকে। কিন্তু তাকে কখনোই আমরা কৃষক বলে মনে করিনা।

Exif_JPEG_420

কৃষি, ব্যবস্থা, কাঠামো গড়ে ওঠেছে গ্রামীণ নারীদের জ্ঞান, অভিজ্ঞতা সযতেœ অনুশীলনের মাধ্যেমে। এক্ষেত্রে স্থানীয় ঐতিহ্যের জ্ঞানের বাহন হচ্ছে আমাদের গ্রামীণ নারী সমাজ। কিন্তু বীজ ও বিষ কোম্পানি নারীর এই জ্ঞান অভিজ্ঞতাকে চুরি করে বাজার দখল করছে। ধ্বংস হচ্ছে সকল প্রাণবৈচিত্র্যের মা, মাটি, পরিবেশ। বিলুপ্ত হচ্ছে প্রাণ বৈচিত্র্য, বীজ, ধ্বংস হচ্ছে সঞ্চিত সুন্দর জীবন যাত্রা ও পারিবারিক ও সামাজিক সর্ম্পক। কোন কার্বন নির্গত না করে পরিবেশসম্মত কৃষি চর্চা, স্থানীয় চাষ পদ্ধতিতে লোকায়ত জ্ঞান ব্যবহার প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা করে গ্রামীণ নারীরা বংশ পরম্পরায় পরিবেশ রক্ষা করছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা ও সামগ্রিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য গ্রামীণ নারী সমাজের ভূমিকা অসামান্য।

গ্রামীণ নারীদের বাস্তবতাকে তুলে ধরে তাদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক মর্যাদাকে সুসংহত করা, কৃষি পরিবেশ, ও প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষায় গ্রামীণ নারীর ভূমিকাকে সমুন্নত করা এবং তাদের অধিকার বাস্তবায়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য সচেতনতা সৃষ্টি করা দরকার। তবে নিজস্ব কৃষি ব্যবস্থা ও ঐতিহ্য রক্ষা পাবে, সংরক্ষিত হবে, প্রাণবৈচিত্র্য রক্ষা পাবে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

happy wheels 2

Comments