আসুন মাছ শিকারীর গল্প শুনি
নেত্রকোনা থেকে মো. অহিদুর রহমান
ভাটির বাংলা নেত্রকোনা। ধানের দেশ, গানের দেশ মাছের দেশ। পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের মত জলমাতার গর্ভে জন্ম এ জেলাটির। এখানকার মাছ, পুকুর-নদী-নালা, খাল-বিল, হাওর-বাওরের কথা কারো অজানা নয়। শৈশবের সাথে জলের সম্পর্ক নেই ,মাছ ধরার সম্পর্ক নেই এমন মানুষ পাওয়া কঠিন। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি নেত্রকোনা। প্রকৃতি দু’হাত উজাড় করে দিয়েছে তার প্রাকৃতিক শোভা। ভূ-প্রকৃতির কোথাও হাওরের সুবিশাল জলাভূমি, কোথাও পাহাড়, কোথাও সমতল কৃষিভূমি। রয়েছে বর্ণাঢ্যময় মাছের ইতিহাস। মাছের গল্প, উইজ্যার গল্প, মাছ ধরার গল্প, খাল বিলের গল্প। একসময় নেত্রকোনার মোহনগঞ্জের লোকাল ট্রেন ঢাকা না পৌছলে কাওরান বাজার গরম হতো না।
এ জেলার মেঠোপথে ছড়ানো রয়েছে শত শত অভয়ারণ্য মাছের গল্প, পুকুরের গল্প, রয়েছে জনপদ ঘেরা নদীর গল্প, হাওরের গল্প, এখানে সকল মানুষের স্মৃতিতে একটি নদী আছে, পুকুর আছে, খাল বিল হাওর আছে। মধ্য দুপুরে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেখানে ডুব সাঁতার খেলার স্মৃতি, খেয়া পাড়াপাড়, সাঁতার খেলা, গামছা দিয়ে, বর্শি দিয়ে মাছ ধরবার, জলে কাঁদায় খেলা করবার স্মৃতি আছে। এই লেখায় একজন একজন মাছ শিকারির কথাই বলছি:
নেত্রকোনা জেলার আটপাড়া উপজেলার শুনুই ইউনিয়নের মনসুর পুর গ্রামের আ: জব্বার খন্দকার। বয়স ৬৫। এখনো তাঁর গোয়াল ঘরের চাঙ্গে ঝুতিয়া, পলো, কুচ, তিন কাইট্টা, এককাইট্টা সংগ্রহ করে রেখেছেন। তাঁর বাড়িতে গেলে তিনি মাছের গল্প বলা শুরু করলেন। তিনি জীবনে সবচেয়ে আনন্দের বিষয় বলতে গিয়ে বলেন, “আরো পঁচিশ বছর আগে হাঁসকুড়ি বিলে উইজ্যা মারতে গিয়ে আমি চব্বিশ কেজি ওজনে একটি বোয়াল মাছ, ১৯৮১ সনে আ’ল দিয়ে একটি ১৫ কেজি ওজনের বাঘাই মাছ ঝুতিয়া দিয়ে শিকার করেছি।” জীবনে উইজ্যা মেরেছেন ৬০ থেকে ৭০টি। অনেক মাছ শিকার করেছেন। শুনুই হাওরে নিরাগ-এ মাছ শিকার করতে গিয়ে আজর মাছের সন্ধ্যা পেয়েছিলেন। সেই মাছটি ছিল একটি বড় গজার মাছ। ওই মাছ ধরার সময় তাঁর লোহার তিন কাইট্টা ভেঙে নিয়ে যায়। এ সময় তিনি ভয়ও পেয়েছিলেন বলে তিনি জানান।
মাছ মারা, মাছ ধরা, উইজ্যা মারা, ছিলো তার নেশা। এখনো বৈশাখ জ্যৈষ্ঠ মাস এলে তিনি নিজেকে সামাল দিতে পারেন না। ঝুতিয়া, কুচ, তিনকাইট্টা নিয়ে তিনি বিষনাই, গইরাখালি,নাসির খালি, সুমাইখালি, ধনু নদী এমনকি সুনামগঞ্জের বড় হাওরে চলে যান। যদিও এখন আর বড় মাছ পাওয়া যায় না। ২০১৪ সালে তিনি ধনু নদীতে গিয়েছিলেন। কিন্তু কোন মাছ আনতে পারেননি। আঃ জব্বার খন্দকারসহ প্রবীণ মানুষেরা না থাকলে মাছের গল্প ও মাছের ইতিহাস আর শুনা যাবে না। শুধু ইতিহাস হয়ে থাকবে এসব গল্প।