প্রয়োজনের তাগিদেই নিরালাসহ বেশ কিছু খাসি পুঞ্জিতে লকডাউন শিথিল
নিরালা পুঞ্জি, শ্রীমঙ্গল থেকে সিলভানুস লামিন
নিরালাসহ মৌলভীবাজারে অবস্থিত বেশকিছু খাসি পুঞ্জি দীর্ঘদিন লক ডাউন থাকার পর গত ৪ মে থেকে লক ডাউন শিথিল করা হয়েছে। প্রয়োজনের তাগিদেরই এই লক ডাউন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ওই পুঞ্জির হেডম্যানগণ।
দীর্ঘ একমাস লক ডাউনের আওতায় ছিলো মৌলভাবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার বেশ কিছু পুঞ্জি বা গ্রাম। এক মাস পান বাজারজাতকরণ করতে না পারায় অনেক দরিদ্র পরিবারের সঞ্চয় ফুরিয়ে গেছে। জীবন-জীবিকা সচল করার জন্যই এই লকডাউন শিথিল করেছেন পুঞ্জির নেতৃস্থানীয়রা। তবে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে পান সংগ্রহ ও বাজারজাতকরণ করার শর্ত দেওয়া হয়েছে। কেউ এই শর্ত অমান্য করলে তাদের জরিমানা রাখার বিধানও রাখা হয়েছে। নিরালা পুঞ্জির ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী বা হেডম্যান লিবারসিং পতাম বলেন, “দরিদ্র মানুষের কথা চিন্তা করেই এই লকডাউন শিথিল করা হয়েছে যদিও করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতি এখনও উন্নতি হয়নি। মানুষকে বাঁচাতে হবে। অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে না পারলে এসব মানুষ না খেয়ে মরে যাবে। খাসি আদিবাসীরা সরকারি কোন ত্রাণ পান না। ত্রাণ যদি পাওয়া যেত তাহলে কিছুটা হলেও গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা ভালো থাকতে পারতো।”
লক ডাউন শিথিল করার পর নিরালাসহ বেশ খাসি পুঞ্জির মানুষেরা বাগান থেকে পান, লেবু ও আনারস সংগ্রহ করছেন। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে তারা স্ব স্ব বাগানে এসব কৃষি পণ্য সংগ্রহ করছেন। কারণ নিদির্ষ্ট একটি সময়ের মধ্যেই তাদের এসব কৃষি পণ্য বিক্রি করতে হবে। পুঞ্জির নেতৃস্থানীয়রা দুপুর ১২টা থেকে ২টার মধ্যেই পানসহ অন্যান্য কৃষিজ পণ্য বিক্রি করার সময় নির্ধারণ করেছেন। গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত মাঠ বা খোলা জায়াগায় এসব কৃষিজ পণ্য বিক্রি করা হয়। বাইরে থেকে আগত পাইকার বা বিক্রেতারা যাতে গ্রামে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্যই এ ব্যবস্থা রাখ্ াহয়েছে। খাসি নারী ও পুরুষেরা প্রয়োজনীয় সুরক্ষা মেনে (মাক্স, গ্লোবস, পরিধান করে এবং হাত ধোয়ার জন্য হান্ড সানিটাইজার বা সাবান ব্যবহার করেন) তাদের এসব কৃষিজ পণ্য বিক্রি করছেন। পানসহ অন্যান্য কৃষিজ পণ্য বিক্রি করতে পারায় খাসিরা আদিবাসীরা কিছুটা হলেও স্বস্তিবোধ করছেন যদিও তাদের ভেতরে একটা ভয় কাজ করছে। এই প্রসঙ্গে ক্লিনটন পতাম বলেন, “পানসহ অন্যান্য কৃষিজ পণ্য বিক্রি করতে পারায় ভালো লাগছে। তবে একটা ভয়ও কাজ করছে। কারণ আমরা বাইরে থেকে আসা পাইকার বা বিক্রেতাদের সংস্পর্শে এসেছি। বলা যায় না, কি থেকে কি হয়।”
অন্যদিকে গ্রামে যারা একটু স্বচ্ছল তারা এখনও অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না। কারণ সিন্দুরখান ইউনিয়নে (নিরালা পুঞ্জির ইউনিয়ন) করোনা রোগী পাওয়া গেছে। এই গ্রামে যারা পান কিনতে আসেন তাদের বেশির ভাগ বাড়ি হচ্ছে এই সিন্দরখান ইউনিয়ন। তাই কিছু খাসি আদিবাসী এসব মানুষের (বিক্রেতাগণ) সংস্পর্শে যাতে না আসেন সেজন্য কষ্ট করে হলেও বাগান থেকে পান সংগ্রহ থেকে বিরত রয়েছেন। তারা অপেক্ষা করছেন কবে এই করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হবে। করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হলেই তারা আবার তাদের স্বাভাবিক অর্থনৈতিক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন বলে জানান। এই প্রসঙ্গে বক নংপেলো বলেন, “আমি আমার বাগান থেকে পান সংগ্রহ করবো না। কারণ আমাদের ইউনিয়নে শুনলাম দু’জন করোনা রোগী পাওয়া গেছে। আমাদের এখানে যারা পান কিনতে আসেন তাদের অনেকের বাড়ি হচ্ছে ওই ইউনিয়নে। পান বিক্রি করতে গেলে তো তাদের সংস্পর্শে আসবো। আর ভাগ্য খারাপ হলে হয়তো করোনাতে আক্রান্ত হতে পারি। আমার কাছে জীবনের মূল্য বেশি।”
লক ডাউন শিথিলতা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া থাকলেও বেশির ভাগ মানুষ এই শিথিলতা পক্ষে কথা বলেছেন। লক ডাউন শিথিল করার কারণে তারা আয় রোজগার করেেত পারছেন। অনেকগুলো হতাশার মধ্যে কিছুটা হলেও আশা দেখতে পাচ্ছেন। অনেকের সঞ্চিত চাল, ডালসহ অন্যান্য পণ্য ফুরিয়ে গেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক সঙ্কট থাকার কারণে সেগুলো কিনতে পারছেন না। লক ডাউন শিথিল করার কারণে তারা বাগান থেকে কৃষিজ পণ্য সংগ্রহ করে বিক্রি করতে পারছেন। কিছুটা হলেও আয় করতে পারছেন। যদিওবা করোনা পরিস্থিতির কারণে তাদের কৃষিজ পণ্যের মূল্য অন্যান্য সময়ের তুলনায় খুবই কম।