সাম্প্রতিক পোস্ট

পুষ্টির ফেরিওয়ালাকে জানেনা, এখন এমন কেউ নেই

:: সাতক্ষীরা থেকে শাহীন ইসলাম::

অচাষকৃত উদ্ভিদবারসিক নিউজ.কম সাতক্ষীরা থেকে শাহীন ইসলাম এর লেখা ‘অচাষকৃত শাকের ফেরিওয়ালা’ শিরোনামে গত ৮ অক্টোবর ২০১৫ একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে দেখা যায় কোন ধরনের সহযোগিতা ছাড়াই জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যজগতের ব্যবহার, বিকাশ, সচেতনতা ও চর্চা বাড়ানোর এক সামাজিক দায়িত্ব পালন করছেন উপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার সোভনালী ইউনিয়নের গোঁদাড়া গ্রামের যুবক বাবর আলী। সবজি বিক্রি তাদের জাত ব্যবসা। বাপ-চাচারা পেশার সূত্রেই ছোটবেলা থেকে বিভিন্ন শাক ও লতাপাতার সাথে তার পরিচয়।

তিনি তার অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছিলেন, খাদ্য কেবল পেট ভরায় না, এটি পুষ্টি, শক্তি, সংস্কৃতি, স্থানীয় প্রতিবেশের সাথে গ্রামীণ জনগণের সম্পর্ককেও তুলে ধরে। গ্রাম জনপদের মানুষের কাছ থেকে তার খাদ্যভান্ডার কেড়ে নিয়ে দশাসই যেসব খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি প্রকল্প বারবার গ্রহণ করে তা কোনোভাবেই দেশের সকল জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না। জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিজস্ব কৌশল ও রীতিগুলোকে গুরুত্ব ও স্বীকৃতি দেয়া জরুরী। নতুন প্রজন্মের ভেতর কুড়িয়ে পাওয়া খাদ্যজগৎ বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি ও খাদ্য হিসেবে তা গ্রহণ করার চর্চা বাড়ানোর মাধ্যমেই তা সম্ভব হয়ে ওঠবে।

এই সংবাদ পরিবেশিত হবার পর বারসিক সাতক্ষীরার  পক্ষ থেকে বাবর আলী কাজের জন্য উৎসাহ প্রদান করে এবং সহযোগিতা প্রদান করে। এই সহযোগিতা কোন আর্থিক সহযোগিতা ছিল না-ছিল তথ্যভিত্তিক সহযোগিতা। শহরের নানান প্রান্তে তার সংগৃহীত শাক, শবজীর কথা প্রচারে নিয়ে আসা আর প্রত্যেকটির পুষ্টিমান জানানোর মাধ্যমে তাকে আরো পরিচিত করে তোলা হয়। এখন বাবর আলীকে সকলেই চিনে পুষ্টির ফেরিওয়ালা হিসেবে।  জেলার সকল পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, শিক্ষক আর সাধারণ মানুষ তার ক্রেতা।

Exif_JPEG_420ফলোআপ: (প্রায় ৬মাস পর)

‘‘৩ মার্চ ২০১৬। সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত। সাতক্ষীরা সোনালী ব্যাংকের সামনে পুষ্টির ফেরিওয়ালা বাবর আলীর সাথে দেখা। যথারীতি সঞ্চি, তেলাকচু, থানকুনি, কচু, পুঁই, ডাটা, কলমি, কলার মোচা, কলার থোড়, ব্রাক্ষী, কুলফি, পেপে, কচু, বউটুনি, কাঁথা, হেলাঞ্চ, লাউ শাক ভর্তি ঝুড়ি ভ্যানের উপর সাজানো। কথা হয় তার কুড়িয়ে পাওয়া শাকের এবং রাসায়নিক সার ও কীটনাশক মুক্ত শাক সবজির ব্যবসা নিয়ে। আগের চেয়ে চাহিদা বেশ বেড়েছে। এখন লাভ বেশী এবং মানুষের ভালবাসা, শ্রদ্ধা সম্মান বেড়ে গেছে। অনেকে অফিসার এক সাথে ১/২শ টাকার শাক কিনে ফ্রিজে রেখে দেয়। সপ্তাহে ৬ দিন (শুক্রবার বাদে) অনেকে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। ফোন করে। এডিসি মহোদয় তাকে ফোন করে গাড়ি নিয়ে শাক কিনতে আসে। ডাক্তার, উকিল, মাস্টার, সাংবাদিক, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, গৃহিনী, কর্মজীবী সকল শ্রেনী পেশার মানুষ তার কাছ থেকে শাক নিয়ে যায়। বিক্রি অনেক বেড়ে গেছে বলে সে তার ভ্যান আরো সুন্দর ও ভ্যানে সোলার চালিত মটর লাগিয়েছি। প্রায় ২৩ হাজার টাকা খরচ করেছে। এতে করে তার সময় অনেক বেঁচে গেছে, পরিশ্রম কম হচ্ছে এবং বেশী পরিমান শাক সবজি সংগ্রহ করতে পারছে। মানুষের চাহিদা পূরন হচ্ছে, লাভও বেশী হচ্ছে। সবাই তার কাজের সুনাম করে। বাবর আলী ও তার পরিবার আগের চেয়ে এখন অনেক সুখে বসবাস করছে। সন্তানেরা পড়াশুনা করছে। সে ভাবছে অল্প পরিমান জমি লিজ নিয়ে বিষ ও ক্ষতিকর সার না দিয়ে জৈবভাবে সবজি চাষ করবে। এর ফলে তার ব্যবসা আরো মজবুত হবে। বাবর আলী মানুষকে ভাল জিনিস আজীবন খাওয়াতে চায়’’

সাতক্ষীরার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাবর আলী সমাজের আরো তৈরি হোক  এটাই সকলের প্রত্যাশা।

happy wheels 2

Comments