দেশ, মানুষ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসি
নেত্রকেনা থেকে মো. অহিদুর রহমান
গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত নদীনালা, খাল, বিল দিয়ে বেষ্টিত নেত্রকোনা জেলা। এই জেলার পুকুরে ভরপুর মাছ কিংবা মাঠে সোনালি ফসল সবাইকে বিমোহিত করে। অন্যদিকে নেত্রকোনা হচ্ছে গানের জেলা, ময়মনসিংহ গীতিকারের চারণভূমি। মহুয়া, মলুয়া, কাজলরেখার কাহিনী সমৃদ্ধ এই জেলা। এই জেলার হাওর, বাওরে নানা পেশার মানুষ বাস করে। এই জেলার সমৃদ্ধ ইতিহাস, ঐতিহ্য, বৈচিত্র্যময় পেশাসহ অনেক বিষয় রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে নতুন প্রজন্মদের কোন ধারণা নেই। এই পরিপ্রেক্ষিতে জেলার ঐতিহ্য, ইতিহাস, সংস্কৃতি ও বৈচিত্র্যময়তা নতুন প্রজন্মকে জানানোর দায়িত্ব নিয়েছে নেত্রকোনার সম্মিলিত যুব সমাজ। এই যুব সংগঠনের সদস্যরা ধারাবাহিকভাবে জেলার স্কুলগুলো বিভিন্ন ধরনের বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাঝে জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরার প্রয়াসী হচ্ছেন।
এই কর্মসূচির ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি এই সম্মিলিত যুব সমাজের উদ্যোগে আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াদিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, লক্ষ্মীগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয়, তেলিগাতি বিএনএইচ উচ্চবিদ্যালয়, দূর্গাশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী ফয়েজ উদ্দিন আকন্দ উচ্চ বিদ্যালয়, নেত্রকোনা উচ্চ বিদ্যালয়সহ পর্যায়ক্রমে ‘আমার নেত্রকোনাকে জানি, দেশকে জানি, দেশপ্রেম গড়ে তুলি’ স্লোগানে জেলার পরিচিত ধরে তোলার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি আয়োজন করে। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে স্কুলে স্কুলে সাধারণ জ্ঞানের আসর, উপস্থিত বক্তৃতা, বিকর্ত প্রযোগিতা তারা আয়োজন করে।
তাদের এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা জেনেছে অতীতের সংগ্রামের গল্প, যুদ্ধের গল্প, জেলার আনাচে-কানাচে ছড়ানো শত শত পুকুর, ডোবা, নালার গল্প, বিভিন্ন জনপদ ও নদীর গল্প, বৃক্ষের গল্প, হাওরের গল্প, পাহাড়ের গল্প, নানা প্রজাতির পাখি, প্রাণীর গল্প, অভয়ারণ্য মাছের গল্প, সাদা মাটির গল্প ইত্যাদি।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে যুব সংগঠনের সদস্যরা শিক্ষার্থীদের মাঝে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য সম্পর্কের বীজ বপন করে। শিক্ষার্থীরা জানতে পেরেছে যে, নেত্রকোনা জেলাটির সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অন্য জেলার মানুষকে আকর্ষণ করতো। শিক্ষার্থীরা এও জেনেছে যে, অতীতে এই জেলায় হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, বাঙালি, আদিবাসী সবাই মিলেমিশে বাস করেন। প্রকৃতিই এ সকল স্তরের মানুষকে এক সুতোয় বেঁধেছে। তাই তো তাদের চিত্রাংকনে ফোটে উঠেছে প্রকৃতির প্রতি, মানবতার প্রতি প্রেম ও অহিংস আচরণ, ফোটে উঠেছে উদ্ভাসিত ও সমৃদ্ধ বন, পাহাড়, নদী এবং নিরাপদ পাখি ও প্রাণী। এই্ কর্মকান্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা অনুধাবন করতে পেরেছে যে, তাদের নিজস্ব প্রয়োজনেই দেশকে জানতে হবে, ভালোবাসতে! নিজ নিজ এলাকার প্রকৃতি, পরিবেশ ও মানুষকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে দেশের প্রতি তাদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে এই ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা।