প্রাণবৈচিত্র্যসমৃদ্ধ বাড়িতে বৈচিত্র্যময় ফসল চাষাবাদ
রাজশাহী থেকে সুলতানা খাতুন
রাজশাহী অঞ্চলের পবা উপজেলার দর্শন পাড়া ইউনিয়নের বিলর্ধমপুর একটি গ্রাম। এই গ্রামের কৃষাণী মাহমুদা বেগম (৫৫)। এ গ্রামের নারীরা মৌসুমকালিন বৈচিত্র্যময় শাকসবজি চাষাবাদ করতে আগ্রহী। মাহমুদা বেগম এমনই একজন নারী যিনি বিভিন্ন ধরনের বৈচিত্র্যময় শাকসবজি চাষাবাদ করেন। তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যা চার জন। স্বামী পেশায় একজন কৃষক। তাঁর বসতভিটার পরিমাণ ৫৫ শতক এবং আবাদি জমির পরিমাণ ৪ বিঘা।
মাহমুদা বেগম তাঁর জমিতে সারাবছর বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফসলের চাষ করেন। তিনি বাড়ির আশেপাশে ফাঁকা জায়গায় সবজি চাষাবাদ করেন। তাঁর উৎপাদিত সবজি পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন। তাঁর স্বামী তাঁকে সবজি চাষে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেন। উল্লেখ যে, মাহমুদা বেগমের পথ চলা অতটা সহজ ছিল না। তাঁর নিজের জমিজমা থাকলেও সংসারে অভাব অনটন লেগেই ছিল। তাঁর ছেলের বিদেশে যাবার জন্য তিনি জমি বন্ধক রেখে এবং সঞ্চয়সহ ৮ লাখ টাকা খুঁইয়েছেন দালালের কাছে। তারপর থেকে সংসারে অভাব ও অশান্তি লেগেই থাকতো। তিনি সংসারের অভাব থেকে বের আসার জন্য নানানভাবে চেষ্টা চালাতে থাকেন। তারপর তিনি সিদ্ধান্ত নেন বাড়ির আশেপাশে ফাঁকা জায়গায় শাকসবজি চাষ করার।
বারসিক ২০১৯ সাল থেকে এই গ্রামে কাজ শুরু করে। বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক সভা, পরামর্শ, ক্যাম্পেইন ইত্যাদি করে থাকে। মাহমুদা বেগম বারসিক’র কাজ দেখে উৎসাহিত হন। বারসিক কর্মি মাহমুদা বেগমের সবজি চাষ দেখে তাঁকে বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেন। আগে মাহমুদা বেগম বীজ রাখতন না। তিনি বাজার থেকে বীজে কিনেন যদিও খুব একটা ভালো ফলন পেতেন না। বারসিক কর্মি তাঁকে নিজে বীজ সংরক্ষণ করে রাখার পরামর্শ দেন। তাতে খরচও কমবে এবং ভালো বীজ নিজে চাষাবাদ করতে পারবেন। এরপর থেকে তিনি নিজে বীজ সংরক্ষণ করেন এবং পরিকল্পিতভাবে সবজি চাষ করে এখন স্ববলম্বী হয়েছেন। সবজি চাষাবাদ করে অল্প অল্প করে টাকা জমিয়ে বন্ধক থাকা জমিগুলো ছাড়িয়ে নিয়েছেন।
মাহমুদা বেগম শুধু সবজি চাষাবাদই করে না; তিনি গবাদি পশু পাখিও পালন করেন। তাঁর বাড়িতে পনেরটি দেশী জাতের মুরগি, ১০টি পাতি হাঁস, ২টি গরু এবং ২ টি ছাগল রয়েছে। তাঁর বাড়ির সাথে ছোট একটি পুকুরও রয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই পুকুরে মাছ চাষ করে আমার পরিবারের চাহিদা পূরণ করে বাজারে বিক্রি করে আয় করি। আমার পরিবারের আমিষের চাহিদা পূরণ হয় এখান থেকেই। মুরগির ডিম খাওয়ার পর বাজারে বিক্রি করে আয় হয়।’
মাহমুদা বেগম আরও বলেন, ‘বারসিক কর্মির পরামর্শে আমি এখন সব ধরনের বীজ নিজে সংরক্ষণ করে রাখি। যাতে করে বীজের জন্য কারও উপর নির্ভরশীল না হতে হয়। প্রতিবেশীর সাথে বিনিময় করতে পারি। নিজে বীজ সংরক্ষণ করলে সেগুলো পুষ্ট ও গুণগত মানসম্মত হয় ‘ তিনি এ পর্যন্ত ৪০ ধরনের বীজ সংরক্ষণ করেছেন। আরো বীজ সংরক্ষণ করবেন বলে জানান।
মাহমুদা বেগমের বৈচিত্র্যময় সবজি চাষ দেখে সেখানকার নারীরা খুবই উৎসাহিত হয়েছেন। তাঁকে দেখে তারাও সবজি চাষাবাদ শুরু করেছেন। অল্প জায়গাও তারা সবজি চাষে কাজে লাগাচ্ছেন। মাহমুদা বেগম বৈচিত্র্যময় সবজি চাষের জন্য সেখানকার নারীদের কাছে একটি দৃষ্টান্ত হয়ে আছে।